কী ছিল যৌথ ঘোষণায়

উদিসা ইসলাম
 
১৯৭২ সালে ২০ মার্চের অবজারভার পত্রিকায় প্রকাশিত 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালে ১৭-১৯ মার্চ ঢাকা সফর করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনা পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় অবস্থানকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দেন। তাকে নাগরিক সংবর্ধনাও জানানো হয়।

এই সফরকালে উভয় প্রধানমন্ত্রী পারস্পারিক স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে বিভিন্ন উপলক্ষে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।  ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে পৃথকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে  আলোচনা করেন। দুই দেশ একটি যৌথ ঘোষণাতে স্বাক্ষর করে। কী ছিল সেই ঘোষণাতে।

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন,  ‘বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে পাকিস্তানের অত্যাচারী উপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটার জন্য অকুতোভয় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে তারা অসামান্য অবদান রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে সময় শেষ হয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট তারিখের আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
১৯৭২ সালে ২০ মার্চের পত্রিকায় প্রকাশিত
১৯৭২ সালে ২০ মার্চের পত্রিকায় প্রকাশিত 

জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় প্রধানমন্ত্রী জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করে বলেন যে, জাতীয় স্থিতিশীলতা ও স্বাধীনতাকে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি উদ্ধার কাজে জোট নিরপেক্ষতা একটি প্রত্যক্ষ ও গঠনমূলক ভূমিকা নিয়েছে। উভয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে দুই দেশের সহযোগিতা জোরদার করতে উভয় সরকারের পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা দফতর, পরিকল্পনা পরিষদ এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও কারিগরি বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন

ঘোষণায় বলা হয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত কারতে বিজ্ঞান ও কারিগরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে উভয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন,  বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের বিশেষজ্ঞ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিম্নলিখিত বিষয়াদি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও তথ্য বিনিময় করবেন।

এক. আণবিক শক্তি শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, দুই. শিল্পান্নয়নের জন্য কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল, তিন.  সংবাদ আদান প্রদানের জন্য ভবিষ্যতের মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল ব্যবহার।

১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলাপ-আলোচনাকালে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলাপ আলোচনার সময়ে অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক সহযোগিতা দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উভয় প্রধানমন্ত্রীর স্থির করেন যে, উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী সমূহের ব্যাপক জরিপ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দুই দেশের সমন্বয়ে স্থায়ী ভিত্তিতে একটি নদী পরিষদ গঠন করা হবে। বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে যে অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতের সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গেছে তার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা জানান।

চুক্তি স্বাক্ষর
চুক্তি স্বাক্ষর

দেশের জনসাধারণের পারস্পরিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে জলসম্পদ যাতে ন্যায়সঙ্গত ভিত্তিতে ব্যবহার করা যায় তার জন্য উভয় দেশের বিশেষজ্ঞকে বন্যার আগে সতর্কীকরণ, বন্যা পূর্বাভাস দান, বড় বড় নদীগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প পর্যালোচনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব প্রণয়ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের মধ্য দিয়ে অপর দেশের বাণিজ্য চালনার ব্যবস্থা এবং সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তির পুনরুজ্জীবনের নীতি অনুমোদন করে তারা নির্দেশ দেয় এসব চুক্তিসহ সাধারণ বাণিজ্য মূল্য পরিশোধ চুক্তিসমূহ ১৯৭২ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে সম্পাদন করতে হবে।

প্রথম স্বাধীনতা দিবসের পরিকল্পনা

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের পরিকল্পনা হয়। দিবসটি উদযাপনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, স্বাধীনতা দিবসে সমগ্র বাংলাদেশের সরকারি ছুটি থাকবে। ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনটি সূচনা হবে। সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

একাত্তরের এই দিনে

২১ মার্চের ইত্তেফাকের সংবাদ বলছে, শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফায় বৈঠক ছিল এই দিনে। সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এদিকে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনকে আবারও শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। জয়দেবপুরে সান্ধ্য আইন অব্যাহত ছিল।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ২০, ২০২০

SUMMARY

2399-১.jpg