শাসনতন্ত্র প্রণয়নে ১০ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন

উদিসা ইসলাম

দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের গণপরিষদের অধিবেশন বসার জন্য দিন নির্ধারিত হয়। বাসসের খবরে প্রকাশ, ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের অধিবেশন ডাকেন। অধিবেশন তেজগাঁওয়ের পুরনো পরিষদ ভবনে ১০টায় বসার কথা। এদিকে ২৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফর। ওই দুই জেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এই দিনেই ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রথম দিনেই স্পিকার নির্বাচন

গণপরিষদের অধিবেশনের প্রথম দিনেই স্পিকার নির্বাচন হবে বলে জানানো হয়। পরিষদ সেক্রেটারিয়েট থেকে সব সদস্যকে অধিবেশনে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে ডাকযোগে চিঠি ও তার বার্তা পাঠানো হয়। পরিষদের মোট ৪৬৯ জন সদস্যের বসার ব্যবস্থা ছিল। কয়েকজন সদস্য দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। অপর কয়েকজনকে সামরিক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়া, পাকবাহিনীর দালালি করার অভিযোগে কয়েকজন সদস্য অযোগ্য ঘোষিত হতে পারে বলেও জানানো হয়।

গণপরিষদে আওয়ামী লীগই একমাত্র পার্লামেন্টারি পার্টি হওয়ায় এ দল থেকেই থেকে স্পিকার মনোনীত হওয়ার কথা।


 
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার

নতুন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর সাবেক প্রকৃত ও যোগ্য সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকার দেশের সব সরকারি আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্দেশ দেয়। চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে হলে মুক্তিবাহিনীর সাবেক সদস্যকে বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি অথবা বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র দফতরের স্বাক্ষরিত পত্রে এবং যে পদের জন্য আবেদন করবেন, তাকে সেই পথে যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হবার পর এবং প্রার্থীর পদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অধিকার বিবেচিত হবার পর এবং তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নতুন-বা শূন্য পদের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সদস্য প্রার্থীদের উল্লিখিত সনদের কথা উল্লেখ করতে হবে।


 
দেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল

দালালদের বিচার করার জন্য ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় এই দিনে। বাংলাদেশ সরকার এক ঘোষণায় জানায়, বাংলাদেশের গণহত্যা চালানোর কাজে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে যারা, তাদের বিচার তরান্বিত করা এবং সুবিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

আইন ও সংসদীয় দফতরের উদ্ধৃতি দিয়ে বাসস জানায় যে, গত ২৫ জানুয়ারি জারি করা ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ অনুসারে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক সংখ্যাগুলো ছিল— ঢাকায় ১১টি, ময়মনসিংহে ৭টি, টাঙ্গাইলে ২টি, ফরিদপুরে ৩টি, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬টি, সিলেটে ৬টি, কুমিল্লায় ৫টি, নোয়খালীতে ২টি, রাজশাহীতে ৩টি, দিনাজপুরে ২টি, রংপুরে ৪টি, বগুড়ায় ২টি, পাবনায় ২টি, খুলনায় ৪টি, যশোরে ৪টি, কুষ্টিয়ায় ২টি, বাকেরগঞ্জে (বরিশাল) ৬টি ও পটুয়াখালীতে ২টি।

বাংলাদেশ ও ভারত বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী সি এল এন মিশ্র এবং বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী। এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আলোচনা শুরুর আগে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা জানান যে, চুক্তিটি যাতে বাংলাদেশের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়, সেজন্য শ্রীমতি গান্ধী বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অধিবেশনের শুরুতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী আর সিদ্দিকীকে স্বাগত জানিয়ে সি এল এন মিশ্র বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পারস্পারিক সহযোগিতার সূচনা মাত্র।’

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ২৮, ২০২০ 

SUMMARY

2392-১.jpg