‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু আমলা সৃষ্টি করেছে, মানুষ সৃষ্টি করেনি’

উদিসা ইসলাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক সভায় বক্তৃতাদানকালে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এ যাবত শুধু আমলা সৃষ্টি করেছে, মানুষ সৃষ্টি করেনি।’ জনগণের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিবছরই কিছু সময়ের জন্য গ্রামে থাকতে হবে এবং পল্লি অঞ্চলের জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করতে হবে।’ এদিকে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানজনক ডিলিট উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় ভারত।

শিক্ষা কমিশন ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে গণশিক্ষার আবশ্যকতার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যার কার্যকরী সমাধান সম্ভব নয়, সম্ভব নয় সমাজতন্ত্রের বাস্তবায়নও। চট্টগ্রামের গভর্মেন্ট হাউসে বুদ্ধিজীবীদের এক সমাবেশে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান যে, শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এই কমিশনের সুপারিশগুলো  বাস্তবায়নের জন্য তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘আগে যত শিক্ষা কমিশন করা হয়েছে, সেগুলো শিক্ষা কমিশনের নামে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি।’ শিক্ষাব্যবস্থার আবশ্যকতা সম্পর্কে কোনও মতবিরোধ থাকতে পারে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। সভা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, তা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষক জড়িত ছিলেন। এদের কিছুতেই ক্ষমা করা যেতে পারে না।’

কৃত্রিম সাহিত্যের প্রয়োজন নেই বাংলাদেশে

বঙ্গবন্ধু বক্তৃতাদানকালে বাংলার সাহিত্য এবং করণীয় বিষয়েও কথা বলেন। সাহিত্যিকদের উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কল্পনার স্বর্গরাজ্য ছেড়ে আপনারা ধুলার ধরণীতে নেমে আসল সাহিত্য সৃষ্টি করুন, যাতে প্রতিফলিত হবে সাধারণ মানুষের জীবনধারা,। প্রতিবিম্বিত হবে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন কৃত্রিম সাহিত্যের প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই।’

৩১ মার্চ প্রথম পাতার ছবি
৩১ মার্চ প্রথম পাতার ছবি
সমাবেশে শিক্ষকরা তাদের যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছেন তার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দখলদার বাহিনীর সৃষ্ট সমস্যায় সারাদেশে এখনও জর্জরিত। দখলদার বাহিনী সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। এ অবস্থায় একসঙ্গে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’ তবে শিগগিরই বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিজের স্বার্থ উদ্ধারে মানুষের ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার জন্যও তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, কলেজের অধ্যাপক, সাহিত্যিক এবং জনাব মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেখান থেকে ঢাকা ফিরে আসেন। অপর এক খবরে প্রকাশ— বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম ত্যাগের আগে বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম এ আজিজের বাসভবনে যান এবং মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন।

ওরা আমার ভাই

বিদেশে বাঙালিদের জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্বেগের আরও একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে এদিনে। বৃহস্পতিবার দিন যখন চট্টগ্রাম থেকে ফিরছিলেন, তখন ঢাকা বিমানবন্দরে বিদেশ প্রত্যাগত কিছু বাঙালিকে দেখতে পান। খবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন তাদের দেশ সিলেটে এবং তারা এই মাত্র ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছেন। খবর পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কাছে যাবো এবং তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তারা আমার ভাই। হেলিকপ্টারটি বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদের কাছে যান এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন।


 
ভারতকে স্মরণ

মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্বাধীনতার পরেও ভারত যে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, সেটাও তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, এক কোটি শরণার্থীর জন্য অন্নের সংস্থান করা হয়েছে, এটাও কম সাফল্যের কথা নয়। এদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সুত্র : বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ৩০, ২০২০ 

SUMMARY

2390-১.jpg