উদিসা ইসলাম
১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সংবিদানের খসড়া প্রণয়নের জন্য ৩৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই দিন সংবিধান প্রণয়ন কমিটি ছাড়া আরও চারটি কমিটি গঠিত হয়। বলা হয়, সংবিধানের খসড়া প্রস্তুতকারী কমিটি তাদের প্রতিবেদন বিল আকারে প্রদান করবেন এবং কমিটির প্রধান হচ্ছেন আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ডা. কামাল হোসেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন— ড. কামাল হোসেন (ঢাকা-৯, জাতীয় পরিষদ), তাজউদ্দিন আহমদ (ঢাকা-৫, জাতীয় পরিষদ), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ-১৭, জাতীয় পরিষদ), এ এইচ এম কামারুজ্জামান (রাজশাহী-৬, জাতীয় পরিষদ), এম আবদুর রহিম (দিনাজপুর-৭, প্রাদেশিক পরিষদ), এম আমীর-উল ইসলাম (কুষ্টিয়া-১, জাতীয় পরিষদ), ক্ষিতীশ চন্দ্র (বাকেরগঞ্জ-১৫, প্রাদেশিক পরিষদ), আবদুল মমিন তালুকদার (পাবনা-৩, জাতীয় পরিষদ), মো. লুৎফর রহমান (রংপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), আবু সাইয়িদ (পাবনা-৫, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মনজুর (বাকেরগঞ্জ-৩, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মুনতাকীম চৌধুরী (সিলেট-৫, জাতীয় পরিষদ), সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (সিলেট-২, প্রাদেশিক পরিষদ), খন্দকার মোশতাক আহমেদ (কুমিল্লা-৮, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রউফ (রংপুর-১১, ডোমার, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ (রাজশাহী-৩, জাতীয় পরিষদ), বাদল রশীদ, বার অ্যাট ল, খন্দকার আবদুল হাফিজ (যশোর-৭, জাতীয় পরিষদ), শওকত আলী খান (টাঙ্গাইল-২, জাতীয় পরিষদ), মো. হুমায়ন খালিদ, আছাদুজ্জামান খান (যশোর-১০, প্রাদেশিক পরিষদ), এ কে মোশাররফ হোসেন আখন্দ (ময়মনসিংহ-৬, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মমিন, শামসুদ্দিন মোল্লা (ফরিদপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), শেখ আবদুর রহমান (খুলনা-২, প্রাদেশিক পরিষদ), ফকির সাহাব উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক খোরশেদ আলম (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), সিরাজুল হক (কুমিল্লা-৪, জাতীয় পরিষদ), দেওয়ান আবু আব্বাছ (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), হাফেজ হাবিবুর রহমান (কুমিল্লা-১২, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রশিদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ খালেদ (চট্টগ্রাম-৫, জাতীয় পরিষদ) ও বেগম রাজিয়া বানু (নারী আসন, জাতীয় পরিষদ)।
গণপরিষদে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সংবিধানের বিষয়ে গণপরিষদের প্রথম দিনের সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি চারটি স্তম্ভকে স্মরণ করতে চাই, যে স্তম্ভকে সামনে রেখে আমাদের দেশের সংবিধান তৈরি করতে হবে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা গণতন্ত্র দিতে চাই এবং গণতন্ত্র দিতেই আজ আমরা এই পরিষদে বসেছি।’ তিনি বলেন, ‘জনাব স্পিকার সাহেব, আমাদের সামনে আজকে বিশেষ কর্তব্য হলো— জাতিকে একটা সংবিধান দেওয়া এবং যত তাড়াতাড়ি হয়, সেই সংবিধান দেবার চেষ্টা করা হবে।’
কমিটির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করবো তা নয়, দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেওয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সবার মতামত চাইবো। এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে। যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারে। আমরা গত ২৩ বছর ধরে কী দেখেছি— শাসনতন্ত্রের নামে শাসনতন্ত্র, জনগণের নিরাপত্তার নামে মার্শাল ল, জনগণের দাবি আদায়ের নামে প্রতারণা। আর বাংলাদেশের কথা উঠলে, হিন্দুস্তানের দালাল— এই ধরনের কথা সারাজীবন শুনে আসছি। সে জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : এপ্রিল ১১, ২০২০