১৯৭২: সংকটে বাংলাদেশ

উদিসা ইসলাম

১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে এসে নানাবিধ জটিলতায় সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি, দাহ্য তেলের সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ ও বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগ পত্রিকার পাতায় স্থান পায়। জ্বালানি তেল সংকটে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

১৩ এপ্রিলের প্রেসনোট ও হ্যান্ডআউট ১৪ এপ্রিলের দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, এখন থেকে রেশন কার্ড দেখিয়ে কেরোসিন পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ সরকারের হ্যান্ডআউটে বলা হয়, কোম্পানির প্রকৃত এজেন্ট  প্রয়োজনে পরিবারের কাছে কেরোসিন তেল আড়াই টাকা দরে বিক্রি করবে। পরিবারের প্রধানের নামে ইস্যুকৃত রেশন কার্ডে এই তেল দেওয়া যাবে। বর্তমানে তেলের অগ্নিমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবসা-বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তেল কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঘোষিত পদ্ধতিতে কেরোসিন তেল বিক্রয়ের জন্য এজেন্টকে সাহায্য করতে জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ডিজেলের অভাবে পরিবহন সংকট

রাজধানীতে পরিবহন সংকট দেখা যায় ডিজেলের অভাবে। ১৩ এপ্রিলের দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়,  বর্তমানে ঢাকা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রুটে ১৪০টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে বেশকিছু বাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নষ্ট করে। যে ৪০টি বাস ক্ষতিসাধন করে, সেগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে চালাবার উপযোগী করার দায়িত্ব সরকার মোটর ভেহিকেল গ্রুপকে প্রদান করে। এরূপ বেশকিছু বাস চালানোর উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু ডিজেলের দুষ্প্রাপ্যতার দরুণ তা চালানো যাচ্ছে না।

শিল্পে অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না

গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় যে, কিছু কিছু কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করার জন্য ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।।

শিল্পে অবাঞ্ছিত ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলে সরকার জানতে পেরেছে জানিয়ে বলা হয়, এতে শিল্পকারখানায় শান্তি বজায় রাখা ও উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে তা জাতীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার জানাতে চায় যে, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রশ্নটি বর্তমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য শিল্পে সার্বিক শান্তির প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মালিক-শ্রমিক উভয়কে সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শ্রমিক এবং মালিক তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে বর্তমানে চালু শ্রমনীতি মেনে চলবে এবং ভীতি প্রদর্শনের পথ ত্যাগ করবে, নতুবা তা হবে বেআইনি। শ্রমিকের ওপর শোষণ করা বরদাস্ত করা হবে না এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ রক্ষার্থে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বাঙালির পাতে মাছ কই

দৈনিক বাংলার এদিনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হলেও ঢাকার বাজারে মাছ ও শাকসবজির অভাব এবং এখন দুর্মূল্য বিরাজ করছে। মাছে ভাতে বাঙালি বলা হলেও তা এখন পাওয়া কষ্টকর। নববর্ষের দিন বাঙালি পরিবারের সবাই একটু ভালো খাবার আয়োজন করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম এত চড়া যে, তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজারে বর্তমানে যে শাকসবজি পাওয়া যায়— তা হলো গোল আলু, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন ইত্যাদি। আমদানির পরিমাণ খুবই সামান্য।


 
দুর্ভোগে মানুষ

এইদিন (১৩ এপ্রিল) একটি ফিচার প্রকাশ করা হয় দৈনিক বাংলা পত্রিকার ভেতরের পাতায়। সেখানে বলা হয়, দিনাজপুর থেকে যে ৭৫ হাজার বাস্তুচ্যুত লোক প্রায় ছয় মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসেছিল, বর্তমানে তারা চরম দুর্গতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও শহরতলীর এই উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে বর্তমানে মহামারি আকারে গুটিবসন্ত দেখা দিয়েছে। এমনিতে বর্ষা এসেছে। তবে এদের আশ্রয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলো ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। অনেকে রয়েছে গরুর গাড়ির নিচে। আবার কেউ রয়েছে গাছের নিচে বসে। এমন অবস্থায় সহজেই অনুমেয় যে, এদের রিলিফের ব্যবস্থা খুবই সামান্য। মেডিক্যাল রিলিফও অপর্যাপ্ত।

সুত্র : বাংলা ট্রিবিউন , প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০২০

SUMMARY

2375-১.jpg