উদিসা ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর যত সভা সমাবেশে গেছেন, সবখানেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে।’
১৯৭২ সালের ১৫ এপ্রিল কলকাতায় অনুষ্ঠিত মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এক বার্তা প্রেরণ করেন। এই বার্তায় তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনসাধারণের সাহায্যের কথা বাংলাদেশ ভুলবে না। ভারতের সাহায্য বাংলাদেশ কখনও ভুলবে না।’
ওই বছরের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সে সময় অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতাকালে আবারও ইন্দিরা গান্ধী এবং তার দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ‘আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত আছি’, উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে তারা ষড়যন্ত্রকারী। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের দালাল ও রাজাকার আল-বদর। তাদের আমরা ক্ষমা করতে পারি না।’ স্বাধীনতা ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য জনতা প্রাণ দিতে রাজি আছে কিনা, বঙ্গবন্ধু তা জিজ্ঞেস করলে জনসমুদ্র সম্মতি জানায়।
সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের ১৫ এপ্রিলের পত্রিকায় প্রকাশিত বার্তায়ও একই কথা বলেন বঙ্গবন্ধু—‘ত্যাগের বিনিময়ে দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এই সেমিনারের মাধ্যমে (কলকাতায় অনুষ্ঠিত) এই বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী সেমিনারে শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন। কলকাতায় বইমেলা উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী ভাষণে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের চেয়ারম্যান জি এস কোঠাই বাংলাদেশ ও ভারতে বাস্তবমুখী শিক্ষা ও বিজ্ঞানের ওপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।’ একই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে দুই দেশকে এগিয়ে যাওয়ার তিনি আহ্বান জানান।
সাম্রাজ্যবাদী ভিয়েতনাম ছাড়ো
ঢাকার বুদ্ধিজীবী, ছাত্র ও নাগরিকরা ভিয়েতনামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও সেই সঙ্গে ভিয়েতনামের বীর জনতার মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। বিবৃতিতে তারা বলেন, এবার হিংস্র নখদন্ত নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামে পাশবিক তাণ্ডব শুরু করেছে। বোমার বেপরোয়া ব্যবহার ও নির্বিচারে বেসামরিক নারী ও শিশু হত্যা চালিয়ে ভিয়েতনামে যে অমানবিক আচরণ করছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি।
নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য বরাদ্দ
এতিম ও নির্যাতনের শিকার নারীর সহায়তায় শ্রম ও সমাজকল্যাণ দফতরের উদ্যোগে গৃহীত পরিকল্পনায় ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় প্রায় এক লাখ ৭৯ হাজার নারী ও শিশু উপকৃত হবে বলে ১৪ এপ্রিল বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি মহকুমা সদর দফতরে একটি করে কেন্দ্র খোলা হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তায় নানা উদ্যোগের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। পরিকল্পনায় বলা হয়, প্রতি সদর দফতরে একটি কেন্দ্র খোলা হবে। এই পরিকল্পনায় বীরাঙ্গনাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। মহিলা পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় মহিলাদের চিকিৎসার জন্য ততদিনে ধানমন্ডি এলাকায় একটি চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়। সেখানে এরইমধ্যে ৬০ জন নারীর চিকিৎসাও করা হয়েছে।
সুত্র: বাংলা টিবিউন, প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০২০