দিনটি বাঙালিদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম

২২ এপ্রিল দিনটি বাঙালিদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭২ সালের ২২ এপ্রিল জালালাবাদ দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দিনটি প্রতিটি বাঙালির জন্য অনুপ্রেরণার। ঐতিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়ে, যেখানে আজ  থেকে ৪২ বছর আগে ১১২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছিলেন, সেখানে সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।’

চট্টগ্রামের জনসাধারণ ১৯৭২ সালের এই দিনে জালালাবাদের বিপ্লবী যোদ্ধাদের অমর স্মৃতির উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা এই দিনে ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিলেন।

ঘোড়দৌড় বন্ধ

রেসকোর্সে আর  ঘোড়দৌড় হবে না। ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল দৈনিক বাংলায় একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়— রবিবার দুপুর থেকে আর রেসকোর্সে ভিড় হয় না। ঘোড়ার লাগাম হাতে আর জকিদের যায় না দেখা। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় বাংলাদেশে ঘোড়দৌড় বন্ধ। ঘোড়াগুলো সারা সপ্তাহ ধরে রবিবারের বিকালের জন্য প্রস্তুতি নিতো, দুপুর থেকে নেমে আসতো মানুষ, পুরনো ঢাকার অলিগলি থেকে।

 
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ এপ্রিল ঢাকায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেন, ‘ঘোড়দৌড় আর  মদ্যপানে কোনও জাতি বা দেশের কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। তাই বাংলাদেশে এসব অসামাজিক-অনাচারের স্থান হবে না।’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, রেসকোর্স শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েকটি অম্লান স্মৃতিই বহন করে না, এখন থেকে রেসকোর্স নতুন নাম নিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই নামকরণের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো দিনগুলো স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। এখন ঢাকার কোনও প্রবীণ বাসিন্দা যদি পাবলিক লাইব্রেরি দেখেন, আর্ট কলেজ পেরিয়ে শাহবাগের দিকে যান, তাহলে মানুষের ভিড় ভেঙে যেতে দেখবেন না।

ঢাকায় রেস হবে না এতে যেমন অনেকে সে সময় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন, তেমনই কেউ ভীষণ এক যন্ত্রণা আর অস্বস্তিতে নিমজ্জিত হয় বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। বহু লোক বলছিলেন, রেস সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি কাজ।

মোহাম্মদপুরে গণকবর

মোহাম্মদপুরে আরও একটি গণসমাধি আবিষ্কার হয়। যুদ্ধাপরাধী পাক সেনারা দেশে যে শিশু ও নারীদের গণহত্যা চালায়, এই সমাধি ছিল তারই একটি দৃষ্টান্ত। মোহাম্মদপুরে কাজী নজরুল ইসলাম রোডে অবস্থিত হাউজিংয়ের মাঠে মাটি খুঁড়ে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী উদ্ধারকাজ চালিয়ে দুটি যুবক ও শিশুর মাথার খুলিসহ বহু মানুষের কঙ্কাল আবিষ্কার করে।

পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ

দেশে ৭৫টি পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একমাত্র নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বাংলাদেশে এর সংখ্যা ১৫৬টি।

 
বাংলাদেশ মেডিক্যাল সমিতির এক সেমিনারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপরোক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। ডাক্তার জাফরুল্লাহ তার প্রবন্ধে আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে দেশের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় হতো দশমিক তিন পয়সা, যা দিয়ে এক গ্রাম বিশুদ্ধ পানীয় পাওয়া যায় না।’ এই করুণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ৪১৩টি থানায় ২৫ শয্যার হাসপাতাল তৈরি ও কমপক্ষে ৫০০ চিকিৎসক পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানান তিনি। কিন্তু তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকারের সদিচ্ছা ব্যর্থ হতে পারে, যদি উক্ত হাসপাতালগুলোতে আগের মতো একজন ডাক্তার পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের হাসপাতালে অন্তত ছয় জন চিকিৎসক প্রয়োজন। অর্থাৎ মোট চিকিৎসক লাগবে ২ হাজার ৪৭৮ জন। বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ৫ হাজার ৬০০ চিকিৎসকের মধ্য থেকে উক্ত সংখ্যার চিকিৎসক গ্রামে পাঠানো আদৌ অসম্ভব নয়।’ সাভারে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিকল্পনা পেশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২০ বাংলা ট্রিবিউন

SUMMARY

2366-১.jpg