মুহম্মদ নূরুল হুদা
পঁচিশে মার্চ, উনিশশ একাত্তর।
সোনার বাংলা জুড়ে বিনা মেঘে বিনা বজ্রে
কেঁপে উঠলো বাঙালির শান্তিঘুম, পলিপদ্মাচর।
সোনার বাংলাকে, হায়, কারা আজ বানাতে চায়
গণবাঙালির গণকবর? কারা আজ দখল করতে চায়
বংশপরম্পরায় লোকবাঙালির শস্য-চর, ভিটেবাড়িঘর?
ধর্ ধর্ ধর্।
সেই লুটেরাকে ধর্। সেই হালাকুকে ধর্।
এক কথা স্বাধীনতা। হক কথা স্বাধীনতা।
না, বাঙালি মানে না কারো অধীনতা।
এই যুদ্ধ ন্যায়যুদ্ধ ।
এই যুদ্ধ জনযুদ্ধ বীর বাঙালির।
বল বীর, বল চিরউন্নত মম শির।
নিশিরাতে অঘোষিত গণহত্যা পশ্চিমা সামরিক জান্তার।
একনায়ক ইয়াহিয়ার নাপাক বন্দুকের নাপাক হুঙ্কার।
মা-মহাকালের জননপ্রদেশে সেই বেজন্মার ঘৃণ্য বলাৎকার।
দীর্ণ হলো জননীর পবিত্র বক্ষ। অপহৃত হলো কুমারীর সম্ভ্রম।
খণ্ডবিখণ্ড শহীদসেনার তরতাজা হৃৎপিণ্ড।
রক্তগঙ্গায় ভেসে গেলো বঙ্গজননীর শোণিতশরীর।
মুহূর্তে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে মুজিবের মুক্তিবাণী।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। জীবন বাজি রেখে লড়াই করে মুক্তির সেনানী।
তখন রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের হুকুম দিয়ে লেজ গুটালো হানাদার সমরশাসক। আর বিশ্ববাসী
দেখলো ক্ষমতান্ধ ভুট্টোর নগ্ন ষড়যন্ত্র। ততক্ষণে দখলকার হানাদার বাহিনী প্রবেশ করেছে ধানমণ্ডি বত্রিশ
নম্বরে মুজিবের বাড়ি। এখানেই গচ্ছিত আছে বাঙালির লোকশ্রুত স্বাধীনতা; আর তার প্রতীক মুজিবের
চিরউদ্যত সার্বভৌম তর্জনী; জাতিবাঙালির পিতা তিনি।
তাঁর কণ্ঠেই গচ্ছিত আছে আবহমান বাঙালির স্বাধীনতার বজ্রধ্বনি।
না, জাতিপিতা মুজিব মানে না হানাদার বুটবুলেটবেয়নেটের হুঙ্কার;
না, জাতিপিতা ভয় করে না শত্রুর ট্যাঙ্ক-গোলা-বারুদ-কামান।
জাতিপিতা মুজিবের অজেয় বুক বাংলার আকাশ ও জমিনের সমান।
বাঙালিরা নয় কারো পরাধীন।
”আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন”:
২৬ মার্চ ১৯৭১ মহাকালের মধ্যযামে এক মাহেন্দ্র ক্ষণে
জারি হলো জাতিপিতা মুজিবের কন্ঠে স্বাধীনতার ফরমান।
পিতা তিনি, ত্রাতা তিনি, কীর্তি তার চিরবহমান।
তাইতো স্বাধীনতার অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান।
তাইতো মুজিব মানে স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতা।
তাইতো মুজিব মানে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা।