‘বিপন্ন ইসলাম’ ও বঙ্গবন্ধুর জবাব

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিপন্ন হবে—আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বহু পুরনো। এ অভিযোগ খণ্ডন করে শেখ মুজিব বলেন, এ দেশের ‘নসরুল্লাহ-মওদুদীরা আমাদের বাঙালিদের ওপর বড় নাখোশ। বাংলায় কোনো দাবি উঠলেই বন্ধুবর নসরুল্লাহ সাহেব তো ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে ওঠেন, ‘গেল, গেল, সব গেল’ আর ফতোয়া তো আছেই। পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থের কোনো ব্যাপার হলে সবই তাঁদের কাছে ‘জায়েজ’ হয়, আর বাংলার পক্ষ থেকে কোনো দাবি উঠলেই আমরা সব কাফের হই, মায় ইসলামতক ‘বিপন্ন’ হয়। পাকিস্তানের জন্মাবধি এমনটাই হয়েছে, আজও হচ্ছে। ভাড়া করে ফতোয়াবাজদের ময়দানে নামানোর ঘটনা আমাদের অজানা নয়। নির্বাচন সামনে রেখে আজও ভাড়া করা ফতোয়াবাজরা ময়দানে নেমেছেন। একদিন পাকিস্তানই যাঁরা চাননি, আজ তাঁরাই হয়েছেন ‘পাকিস্তানে ইসলাম’ রক্ষার সোল এজেন্ট। তাঁদের আমরা চিনি। আজ আমার পাটচাষি পাটের দাম পায় না? কেন, আজ আমার তামাকচাষি, ইক্ষুচাষি ভাইয়েরা তিল তিল করে মৃত্যুর পথে ধেয়ে চলে? উত্তর দাও, ধোঁকাবাজ, ভাঁওতাবাজের দল একবার যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)’ কালিমা পাঠ করেছে, তাদের কাফের বলে ফতোয়া দাও ইসলামের কোন অনুশাসনে? কালেমায় বিশ্বাসীকে যে কাফের ফতোয়া দেয়, তার-ই কি কাফের হওয়ার কথা নয়?

শেখ মুজিব বলেন, ফতোয়াবাজদের কাছে আমার আরো জিজ্ঞাসা : ইসলামাবাদের নামে ইসলাম যুক্ত দেখিয়ে তোমরা আনন্দে নাচো, কিন্তু সেই ইসলামাবাদেও যে মদের জলসা হয়, তা তোমরা জেনেও জানো না, দেখেও দেখো না। তোমাদের ইসলাম সেখানে নয়। আর বাংলার অর্থে যখন অপর অঞ্চলে একের পর এক চারটি রাজধানী গড়ে ওঠে, আর পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় রাজধানীর নামে ধোঁকা দেওয়া হয়, তখন তোমাদের ইসলাম ‘বিপন্ন’ হয় না। ‘বিপন্ন’ হয় তখন, যখন দেশের বঞ্চিত, নির্যাতিত আপামর মানুষ সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়। তখন ‘বিপন্ন’ ইসলামকে রক্ষার জন্য তোমরা পকেট ভারী করো তাদেরই টাকায়, যারা এ দেশের মানুষকে শোষণ করে সর্বস্বান্ত করেছে, তাদের স্বার্থের সমাধির ওপর কায়েমি স্বার্থের সুউচ্চ প্রাসাদ গড়ে তুলেছে। (সূত্র : বাংলাদেশ, শেখ মুজিবুর রহমান)

SUMMARY

2334-1.jpg