ঢাকার বেইলি রোড থেকে গ্রিসের এথেন্স

রফিকুন নবী

বঙ্গবন্ধুকে দেখার আমার সুযোগ ঘটেছিল দু’বার। একবার দূর থেকে, আর একবার কাছে থেকে। দুটোই আমার জীবনের স্মরণীয় এবং মহা গর্বের ঘটনা। প্রথমটি ১৯৭১-এর ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যা)। এ দেখা লাখ-লাখ মানুষের মাঝে বসে।

সেই যে অবিস্মরণীয় এক ভাষণে তিনি মুক্তির সংগ্রামে, স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিশাল জনসমুদ্রকে জাগ্রত করতে, সেই দিন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটি বিন্দুবৎ হয়ে আমিও উপস্থিত ছিলাম সেই সমুদ্রে।

মনে আছে, উজ্জীবক সেই ভাষণ, সেই আহ্বানে উদ্দীপ্ত মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার। আমি দূরে না হলেও খুব যে কাছাকাছি কোথাও বসা ছিলাম তা নয়, তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম পুরোপুরিই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো অবাক বিস্ময়ে সাহসী নেতার দিকে তাকিয়ে ছিলাম পলকহীন।

ইচ্ছা হচ্ছিল ওই অকুতোভয় বীরদর্পী নেতৃত্ব দেয়া মহানেতাকে একবার ছুঁয়ে দেখার। তো স্বাধীনতার পর সেই ইচ্ছাটি পূরণ হতে পেরেছিল। দেশ-পরিচিতিমূলক একটি বর্ণাঢ্য পুস্তক প্রকাশনার সঙ্গে শিল্পী হিসেবে জড়িত থাকার সুবাদে। সেই শুভক্ষণটি আজও আমার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে অক্ষয় হয়ে রয়েছে।

মনে পড়ছে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে বইটির সম্পাদকমণ্ডলী, লেখক, গবেষক এবং অঙ্গসজ্জার সঙ্গে জড়িত শিল্পীবৃন্দ উপস্থিত ছিলাম বঙ্গবন্ধুর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবনে। উপলক্ষ ছিল বইটি তাকে দেয়া এবং মোড়ক উন্মোচন।

একটি লম্বাটে ঘর। তার পূর্বপাশে ওপর থেকে নেমে আসা সিঁড়ি। সেখানে ফটো সাংবাদিকদের ভিড়। এদের মধ্যে বিখ্যাত ফটোগ্রাফার মোজাম্মল হক, লাল ভাই, আলম এবং রশীদ তালুকদারকে চিনতাম। ঘরের দেয়ালঘেঁষে সারি করে রাখা চেয়ারে আমরা বসা অধীর অপেক্ষায়।

উপস্থিত ছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, কালাম মাহমুদ এবং তাদের সঙ্গে আমি। সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান, গাফ্ফার চৌধুরী, সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ।

তো, মিনিট দশেক পর নেমে এলেন বঙ্গবন্ধু। সাদা ধবধবে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দীর্ঘ, ঋজু এবং সুঠামদেহী সুপুরুষ, চওড়া গোঁফের ফাঁক গলিয়ে একগাল নির্মল হাসি ছড়িয়ে এগিয়ে এলেন। হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বললেন, ‘বাহ! সব গুণী মানুষের দেখা পাইতাছি।’

মন্ত্রী মহোদয় সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকলেন। বঙ্গবন্ধু একে একে হ্যান্ডশেক করে করে এগিয়ে আসতে থাকলেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের সঙ্গেই কিছু কথা, কিছু মজার উক্তি এবং পরিচিতদের সঙ্গে ঠাট্টা মতন কথা বলে বলে আসছিলেন।

বিশেষ করে কথাসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। আমি অপলক তাকিয়ে ছিলাম। মনেই হয়নি যে বিশ্বনন্দিত অসাধারণ এক বিশাল নেতাকে অতি কাছে থেকে দেখছি। মনে হচ্ছিল কতকালের চেনা অতি কাছের আপনজন যেন।

ইতিমধ্যে শিল্পী কামরুল হাসান সবার সঙ্গে ছবি আঁকা, সাংস্কৃতিক জগৎ এবং প্রকাশনা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন। পাশে দাঁড়ানো শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীও তাতে যুক্ত হলেন।

সেসব কথা এখন আর মনে নেই। তবে শিল্পীদের সঙ্গে একদিন বসবেন, দেশের শিল্পকলা নিয়ে কিছু করা যায় কিনা তার জন্য বসা উচিত, এসব কথা। শিল্পী জয়নুল আবেদিন স্যার কেমন আছেন সেটাও জানতে চাইলেন। আবেদিন স্যারের কথা বলতে গিয়ে ‘স্যার’ সম্বোধন করলেন। তার প্রতি এ শ্রদ্ধা দেখে অভিভূত হয়েছিলাম।

এক সময় আমার পালা এলো। আমি তো তখন নিতান্তই কনিষ্ঠতমদের একজন ওই সভায়। তো, তিনি কাছে আসতেই সালাম দিলাম। কামরুল স্যার পরিচয় করিয়ে দিলে তিনি হ্যান্ডশেক করলেন। হাতটা স্পর্শ করতে অবাক হলাম, আবিষ্কার করলাম, দীর্ঘকায় সুঠামদেহী দৃঢ়চেতা মানুষটির পাঞ্জাটি অতীব নরম-সরম।

অথচ এ হাতটিই ৭ মার্চের ভাষণের সময় আকাশের দিকে উত্তোলিত শপথের, প্রতিজ্ঞার হাত যা ইতিহাস হয়ে আছে।

এতো গেল তাকে দেখার কথা। এবার তাকে বিদেশে মানুষরা কেমন পরম শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে, সেসব নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক।

তখন ১৯৭৩ সাল। মাত্র বছর দুয়েক হল দেশ স্বাধীন হয়েছে। যুদ্ধজয়ের আনন্দের পাশাপাশি তখন দেশকে নতুন করে নিজেদের মতো করে সাজানোর চেষ্টা চলছে। এমন একটি সময়ে হঠাৎ করে একটি বৃত্তি পেয়ে গেলাম অযাচিতভাবে। শিল্পকলায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য গ্রিক সরকারের বৃত্তি।

বৃত্তিপ্রাপ্তির পর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ সহকর্মী শিল্পী থেকে শুরু করে পরিচিতজনরা বললেন, ‘এটাই হল স্বাধীন আর নিজ দেশ হওয়ার সুফল।’ আসলে তাই। পাকিস্তানি আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কারণে সেখানকার শিল্পীরা বিদেশে লেখাপড়ার সুযোগ পেত বেশি। ব্যাপারটা আমাদের ক্ষেত্রে সহজ ছিল না মোটেও। অন্তত আমার বেলায় তো নয়ই।

পাকিস্তানের স্বৈর-শাসকদের এবং তাদের ভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে যে তখনকার চলমান আন্দোলন, তাতে সর্বক্ষেত্রেই মানুষ জড়িত হলে শিল্পীরাও তা থেকে দূরে সরে থাকেনি। সেই সুবাদে আমিও তেমন সব কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম। এমন কাউকে কোনো সুযোগ দেয়ার তো কথাই নয়। তবু দু-একবার ইউরোপের কয়েকটি বৃত্তির চেষ্টা করেছিলাম।

একবার তো এখান থেকে মনোনীত হয়েও পশ্চিম পাকিস্তানের এক শিল্পীকেই তা দিয়ে দেয়া হয় আমাকে বাদ দিয়ে। বুঝেছিলাম যে তাদের ‘গুড-বুকে’ না থাকলে ব্যাপারটা ঘটা কখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব, বাদ দিয়েছিলাম সেসব বিদেশ যাওয়ার চিন্তা।

স্বাধীনতার পর বৃত্তিটি পেয়ে উপলব্ধিটা হয়েছিল যে, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হলে জীবনে গর্বিত হওয়ার জন্য অনেক কপাট খুলে যায়। বদলে যায় সব কিছু। যাই হোক, বৃত্তির কথাটা বলা হল অন্য কারণে। কারণটি আর কিছু নয় স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। অর্থাৎ তার স্ব-হস্তে সবুজ কালিতে লেখা একটি সিগনেচার। বলাই বাহুল্য সিগনেচারটি দেয়া হয়েছিল বৃত্তিপ্রাপ্তিতে বিদেশে পাড়ি দেয়ার ছাড়পত্রে। তখন এটাই নিয়ম ছিল।

তো সত্যি বলতে কী আমি এটাকে খুব গুরুত্ব দিইনি। বলা যায় এতটা ভাবিইনি। ছাড়পত্র পেয়েই খুশি। কিন্তু ব্যাপারটা যে দারুণ গুরুত্ববাহী তা টের পাই এথেন্স পৌঁছে যখন ফাইন আর্ট স্কুলে কাগজপত্র দিতে যাই। দফতরের প্রধান ছিলেন একজন বর্ষীয়ান মহিলা।

তিনি কাগজগুলো দেখে নিয়ে কিছু লেখালেখি করলেন। তারপর সব কাগজপত্র আমাকে ফেরত দিয়ে দিলেন শুধু একটি কাগজ ছাড়া। কাগজটি আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘এই সইটি কি তোমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুরের?’ আমার হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়াতে দেখে হেসে আবার বললেন, ‘এটা ফেরত পাবে না। এটা রাখা হবে। এটা আমি কালেকশানে রাখব।’

ততক্ষণে আমার জ্ঞানোদয় হল। সে মুহূর্তেই সইটির গুরুত্বের ব্যাপারটি টের পেলাম এবং হঠাৎই আবিষ্কার করলাম যে, এ সইটি আমার জন্য দেয়া একটি মূল্যবান জিনিস।

তৎক্ষণাৎ মনে মনে ঠিক করে ফেললাম এটা হাতছাড়া করা যাবে না। সেই কথা বললাম। তিনি নাছোড়বান্দা। কী আর করা। তাদের হাতে এসে পড়েছি। লেখাপড়া করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে ওঠবস করতে হবে কয়েক বছর। এসব ভেবে মন খারাপ করে ক্লাসে চলে গেলাম।

সেদিন সেখানে তেমন কাজ ছিল না। বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গাল-গল্প করতে করতে দুপুর গড়াল। ঠিক যখন চলে আসব, তখন হঠাৎ মহিলা এসে উপস্থিত। হাতে সেই কাগজ। সেটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘নাও। দেখলাম তোমার মন খারাপ হয়েছে। তোমাদের অতবড় নেতার সই। রেখে দিও যত্ন করে। তবে কী জানো- তার প্রতি শ্রদ্ধা আমাদেরও কম নেই।’

মহিলা চলে যেতেই আমার প্রবীণ অধ্যাপক চিঠিটি দেখতে চাইলে দেখালাম। তিনিও মহিলার মতো করে শ্রদ্ধার কথাটি জানালেন। অধ্যাপকের নাম গ্রামাতোপুলস। বেশ খ্যাতিমান শিল্পী। সবাই চেনে। তবে এ চেনার আর একটি কারণ হল- তিনি রাজনীতিসচেতন এবং দেশটির নানা টানাপড়েনে বিভিন্নভাবে জড়িত থাকেন।

কিছুকাল পর যখন ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ হয়েছে তখন আবিষ্কার করেছি যে, তিনি দেশের স্বৈরাচার হটাও গণআন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বহু রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জগতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওঠবস করেন, সহায়তা দেন এবং সবাই তাকে মান্য করেন।

বলাবাহুল্য যে, আমি গ্রিসে পৌঁছার মাসখানেক পরই স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করে। সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ রকম সময়ে এক সন্ধ্যায় তার বাসায় গেলে তিনি গল্পচ্ছলে দেশটির রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে বলেন যে, ‘এ দেশে যদি তোমাদের শেখ মুজিবুরের মতো একজন বিশাল মাপের নেতা থাকত তো এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেত দেশের জনগণ।’ আমাদের নেতার প্রতি তার শ্রদ্ধা দেখে কী যে গর্ব হয়েছিল তা আর বলার নয়।

কয়েকমাস পরই অবশ্য সেখানে সামরিক শাসক পাপাদোপুলসের পতন হয় বিশাল গণআন্দোলনের চাপে। তবে টিকে থাকার শেষ চেষ্টাও করেছিল আর তা করতে গিয়ে সাইপ্রাসকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধে নামার চেষ্টা করেছিল। এটা ছিল স্বৈরশাসকের শেষ রাজনীতির খেলা। যেমনটা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান তার পতন ঠেকাতে ১৯৬৫-তে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় নেমেছিল।

যাই হোক, সাইপ্রাসের দু’ভাগ নিয়ে তুমুল টেনশানের শেষ দিকে সেখানকার রাষ্ট্রনেতা মাকারিওস এসেছিলেন এথেন্সে। এ সময় এক সকালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এথেন্স স্কুল অব ফাইন আর্ট অর্থাৎ আমি যেখানে পড়ছিলাম সেখানে পরিদর্শনে এসেছিলেন।

শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সবাই, তাকে অভিবাদন জানাতে লাইন করে দাঁড়িয়ে ছিল বিশাল পৌরাণিক দালানের চত্বরে। আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার অধ্যাপক, যিনি ডিনও ছিলেন বটে, বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয় পর্বের প্রথম কথাই ছিল ‘এই ছাত্রটি হল বাংলাদেশের। শিল্পকলায় উচ্চতর লেখাপড়া করতে এসেছে।’

সবটা শুনে জিজ্ঞেস করেছিলেন গ্রিক ভাষায়- ‘বিশাল বড় নেতার দেশ তোমাদের। কেমন চলছে সব কিছু?’ অভিভূত আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম- ‘ভালো। ধন্যবাদ স্যার।’ সময়টা কী দারুণই না ছিল। নতুন দেশ বাংলাদেশ। এ কারণে শ্রদ্ধা-সম্মানের অন্ত ছিল না। বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকি; কিন্তু মহান নেতার দেশটির একজন মানুষকে দেখতে পেয়ে অভিনন্দিত করত সবাই।

দারুণ আদরণীয় হিসেবে গণ্য ছিলাম। নতুন দেশের সবুজ পাসপোর্টটিও যেন দেখার বস্তু ছিল। যেখানেই যেতাম, যে দফতরেই প্রয়োজনীয় কাজে যেতাম, এমনকি অন্য কোনো দেশে বেড়াতে যেতাম, বিনা বাক্যব্যয়ে নিমেষে সব কাজ সমাধা হয়ে যেত।

১৯৭৪-এ গ্রিসে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর গণতন্ত্র এলো। সে কী আনন্দ সবার! তাদের বিখ্যাত সঙ্গীতের একটি গান ‘কালিমেরা-কালিমেরা’ তখন সবার কণ্ঠে কণ্ঠে। আমরা যেমন ঊনসত্তরে গণআন্দোলনে গণসঙ্গীত গাইতাম তেমনই। গানের অর্থ হল ‘সুপ্রভাত-সুপ্রভাত’।

জনপ্রিয় সঙ্গীতজ্ঞের নাম মিকিস থেওদোরাকিস। আবেগপ্রবণ বন্ধুরা সে গানের কোরাসে গলা মেলায় পরস্পরের সঙ্গে দেখা হলেই। মনে হতো যে, স্বাধীনতা পেয়েছে। আর সাক্ষাৎ হলেই ঘনিষ্ঠরা বলত, “তুমি আমাদের ‘পয়া’ অতিথি। মুজিবের দেশ থেকে যেই এলে আর অমনি এত দিনের স্বৈরাচারী পাথরটা সরে গণতন্ত্র এসে গেল।”

সত্যি বলতে কী- এসব শুনে খুব গর্বিত হতাম। ভালোই চলছিল এভাবে। এর পরই এলো পঁচাত্তরের সেই ভয়াবহ, মর্মান্তিক কালরাত্রি। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল আনন্দ-আলো। বাংলাদেশের মানুষ বলে যে ভিনদেশে বসে শ্রদ্ধা-সম্মান পাচ্ছিলাম অঢেল, তা উবে গেল।

কেউই আর দেখা হলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না, সবুজ পাসপোর্টটি নিয়ে যে দেশেই যাই আগের মতো আর সহজ করে দেখে না। মনে হতো অচ্ছুত কোনো একটি জিনিস দেখছে। বিড়ম্বনা বেড়ে গেল সর্বত্র। পরিচিতজনরা বলত, ‘তলে তলে এত নৃশংস তোমরা? নিজেদের ভালোটাও বুঝলে না? নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলে’? সত্যিই তাই, খুনিদের কারণে দুর্নাম আর বিড়ম্বনা আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সবাইকে।

রফিকুন নবী : চিত্রশিল্পী

SUMMARY

2303-1.jpg