চয়ন সেনগুপ্ত
বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ১০০ বছর। তার জন্মদিনটি পরম শ্রদ্ধায় এবার মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করছে বাঙালি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলছি। রাজনীতির মঞ্চে ছিলেন সৎ, অকুতোভয়, বিপ্লবী, সবার প্রাণের মুজিব ভাই।
নিজের জীবন ছিল মানবতা ও মুক্তির মহিমায় মহীয়ান। এজন্য বাঙালি সত্তার জাগরণে তার লড়াকু ভূমিকা ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছেন। ১৬-১৭ বছর বয়সে মাদারীপুর হাইস্কুলে ছাত্র অবস্থায় স্বদেশিদের সঙ্গে থাকতেন। শুনতেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর দেশপ্রেমের অগ্নিগর্ভ কথা।
ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে পড়তে গেলেন। কলেজের পাতলা ছিপছিপে গড়নের শেখ মুজিব ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্ব তথা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হল।
শুরু হল নতুন ইতিহাস, নতুন সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, নিষ্পেষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর বিরামহীন সংগ্রাম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের অগণতান্ত্রিক শাসনবিরোধী
আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের সশস্ত্র স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলাদেশ, বাংলা ও বাঙালির মহাকালের রূপকার।
এজন্য জেল খেটেছেন জীবনের বড় অংশ। জেলজীবনের আরম্ভ হয়েছিল স্কুলজীবনেই। বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে জানতে পারি, তার জেলজীবন ছিল বেদনা ও বঞ্চনার। দিনের পরে দিন, বছরের পর বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। জেলের মধ্যে তার সম্বল ছিল ঘটি-বাটি-কন্বল।
তবে দিনের পর দিন বঙ্গবন্ধুর জেলবন্দি অন্তরে ক্রমাগত জেগে উঠত বাঙালির স্বাধীনতার আবাহন। জেলের মধ্যে থেকেও তিনি ভালোবাসতেন হলদে পাখির ডাক। আর ভালোবাসতেন জেলের ভেতরের আগাছাহীন সবুজ দূর্বাঘাস।
যখন মাসে দু’বার জেলের গেটে প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের জ্যেষ্ঠ কন্যা, পুত্রদের সঙ্গে দেখা করে নির্জন, নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে একা ফিরে আসতেন, তখন মাঠের ঘন সবুজ দূর্বাদল বঙ্গবন্ধুর ক্লান্ত পা দু’খানা যেন বুকে আগলে রাখত। রাজনীতির মহাকবির চরণচিহ্নের সে ছবি যেন আজও মহাকালের সাক্ষী।
পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ষড়যন্ত্রে যে কোনো অবস্থায় এ মহান নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু ছিল পায়ে পায়ে। ব্রিটিশ শাসকদের চেয়েও দানবীয় তখনকার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল-জুলুম-ফাঁসির ভয় উপেক্ষা করে, রাজনীতি করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হয়েছিল।
বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তি, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের অবিনাশী ধারায় বঙ্গবন্ধু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের চেতনাকে ধারণ করে জন্ম দিলেন বাঙালি জাতির অনির্বাণ সত্তা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ সেই অনির্বাণ শিখার আলোয় সোনার বাংলাদেশকে জগৎসভায় আলোকিত করছেন। জাতির পিতার অবিনাশী জন্মদিনে, মুজিববর্ষে অন্তর থেকে তারই শেখানো বুলিতে বলি- জয় বাংলা।
চয়ন সেনগুপ্ত : সরকারি কর্মকর্তা