অগ্নিঝরা উত্তাল ০৮ মার্চ

৮ মার্চ। একাত্তরের এই দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল সারাদেশ। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বেলিত মুক্তিকামী বাংলার জনগণ। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তার পক্ষে দেশবাসী জেগে উঠতে শুরু করে। স্বাধীনতাকামী বাংলার দামাল ছেলেরা নিজেরা দলে দলে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা পাবার পর নিরস্ত্র বাঙালী জাতি ক্রমশ সশস্ত্র জাতিতে রূপ নিতে শুরু করে। নিজস্ব ভূমির জন্য জনতার সংকল্প আরও ইস্পাতদৃঢ়, আরও শাণিত হয়ে ওঠেÑতাদের লক্ষ্য একইটাই, মুক্তি। এদিন থেকে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো এবং উর্দু ছবির প্রদর্শনী বন্ধ হয় দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে।একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিমানবন্দরে কেএলএম, লুফথানসা, বিওএসির উড়োজাহাজ গুলো দাঁড়ানো। কিন্তু এসব যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কখনো ঢাকায় আসে না! তবে এগুলো কেন? জানা গেল, মুক্তিপাগল বাঙালীর রণ সাজে সজ্জিত হওয়ার প্রস্তুতি দেখে বিদেশীরা ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি যে ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে তা বুঝতে বাকি নেই ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশীদের। বাঙালীদেরও নেই। বিদেশীরা তো নিজ নিজ দেশে পৌঁছে গেলেই নিরাপদ, কিন্তু বাঙালী তখন নিজের দেশে থেকেও নিরাপদ নয়।এদিকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিওতে প্রচার না করায় বাঙালী ক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। বেতার কর্মীদের আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানীরা বাধ্য হয়ে পরদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বেতারে প্রচার করে। ৮ মার্চ সকাল ৮টায় রেডিও থেকে ভেসে আসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকঠিন সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলতেই থাকে। আর ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় সচিবালয়, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কেবল বেতন নেয়ার জন্য দুই ঘণ্টা খোলা রাখা হয় ব্যাংক।বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেন ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খান, বাংলা ন্যাশনাল লীগের অলি আহাদ, ছাত্রলীগ ও ডাকসু, ছাত্র ইউনিয়ন, মজদুর ফেডারেশন, খান সবুর, পিডিবির নুরুল আমিনসহ আরও অনেকেই। এদিন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ তাদের নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তান বাদ দিয়ে শুধু ছাত্রলীগ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজপথে নেমে আসে লাখো মানুষের ঢল। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয় নগরী। এ সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় প্রতিটি জেলা শহর থেকে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।                             

SUMMARY

2261-1.jpg