বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দশ লক্ষ বাঙালির জনসমুদ্রে কালজয়ী যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ঐতিহাসিক সে ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ‘‘গবসড়ৎু ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ জবমরংঃবৎ’’ এ ইউনেস্কো কর্তৃক অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। টঘঊঝঈঙ এর ডাইরেক্টর জেনারেল ইরিনা রোকোভা ইউনেস্কো হেডকোয়ার্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ কে এ ‘‘ডড়ৎষফ ঐবৎরঃধমব উড়পঁসবহঃং’’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, (ক) মূলত ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা; (খ) এ কালজয়ী ভাষণ বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং (গ) এ ভাষণই প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কারিগর বা রূপকার (অৎপযরঃবপঃঁৎব ড়ভ ঘধঃরড়হধষ ওহফবঢ়বহফবহপব ড়ভ ইধহমষধফবংয)। ড. আব্দুল্লাহ আল রাইসি উরৎবপঃড়ৎ এবহবৎধষ, (ঘধঃরড়হধষ অৎপযরাবং ড়ভ ঃযব টহরঃবফ অৎধন ঊসরৎধঃবং) এর সভাপতিত্বে ‘‘ঞযব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অফারংড়ৎু ঈড়সসরঃঃব’’ (ওঅঈ) এর ২৪-২৭ অক্টোবরের অনুষ্ঠিত সভায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের এই ঐতিহাসিক ভাষণ ৭৮টি মনোনয়নের মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে বিশেষ কমিটির সভায় মনোনীত হয়। বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনকারী এ ভাষণ বিশ্লেষণের নিমিত্ত আজকের এই আলোচনার অবতারনা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ। বিশ্ব ইতিহাসের ঐতিহাসিক তেজম্বী, শক্তিশালী, গণজাগরণ সৃষ্টিকারী। জাতিসংঘের অন্যতম সংগঠন ইউনেস্কো কেন এ ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করলেন? কি ছিল সে ভাষণে? যোগাযোগ বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক নিয়ম কানুনের প্রয়োগ কেমন ছিল? কেন সে ভাষণকে কালজয়ী বলা হলো? সে ভাষণ বাঙালির মানসপটে কি পরিতর্ন এনেছিল? ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাদের খুঁজতে হবে এ ভাষণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে। অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক (সাবেক উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), তাঁর ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ’’ নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন-‘‘যোগাযোগ বিষয়ে আধুনিক নিয়ম-কানুনের এক আশ্চর্য প্রতিফলন ঘটেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর-এ ঐতিহাসিক ভাষণে। প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮-৬০টি শব্দ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে এ কালজয়ী ভাষণটি শেষ করে ছিলেন। সম্প্রচারতত্ত্বে প্রতি মিনিটে ৬০ শব্দের উচ্চারণ একটি আদর্শ হিসাব। এক হাজার একশত সাতটি শব্দের এ ভাষণে কোন বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই, কোনো বাহুল্য নেই- আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম’’। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের শুরুর দিকে বাংলাদেশের তথা বাঙালির সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে তাঁর ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন ‘‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়’’ কথাগুলো বিশ্লেষণ করলে সহজেই বুঝা যায়, ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান নামক দুটো দেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে পৃথিবীর মানচিত্রে। পূর্ব বঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত হয়। দেশ বিভাগের পর হতেই বাঙালির কপালে নেমে আসে দুর্দিন। ১৯৫২ সালে বাঙালির মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা- কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের পথ চলা শুরু হয়। তার পর থেকে বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সকল অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। অবিশ্বাসের দোলাচলে ধর্মকে পুঁজি করে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালানো হয়। বাঙালি তার সকল অধিকার হারায়। পাকিস্তানি শাসকদের পরাধীনতার শৃংখল থেকে বাঁচার জন্যই বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাংলার মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা সর্বোপরি বেঁচে থাকার নিমিত্ত ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা বজ্রকন্ঠে এ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে তার উল্লেখিত প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও মূলসূত্র ৭ই মার্চের এ বক্তৃতা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এ বক্তৃতা ছিল আমাদের সিংহনাদ বা যুদ্ধ শ্লোগান। শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সকলের গায়ের লোম খাড়া হয়ে যেত এ বক্তৃতা শ্রবনে। বঙ্গবন্ধুর স্বকন্ঠে উচ্চারিত বক্তৃতা সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে শুধু ঐক্যবদ্ধই করেনি, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। কারণ এ ভাষণই ছিল কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা’’ জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ এর ক্ষমতা, ব্যপ্তি বাঙালির মানসপটে দুর্বার শক্তির জোয়ার ঘটায়। শিশু-কিশোর আবাল বৃদ্ধ সকলেই সে ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। ৭ই মার্চের ভাষণকে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক তাদের লেখায় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বাঙালির পরিচয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘‘আমার পরিচয় নামক’’ কবিতায় উল্লেখ করেন, ‘‘আমি যে এসেছি জয় বাংলার বজ্রকন্ঠ থেকে’’ মূলত ৭ই মার্চের ভাষণ-ই বাঙালির পরিচয়ের উন্মেষ ঘটায়। ৭ই মার্চের সে ঐতিহাসিক ভাষণ-ই বাঙালির মুক্তির সনদ, বাঙালির স্বাধীনতার ম্যাগনাকার্টা। ঐতিহাসিক এই কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি তার ভাষার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার সর্বোপরি পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচার, লুন্ঠন, নিপীড়নের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাতন্ত্র লাল সবুজ পতাকার অধিকারী হয়। এ প্রসংগে নির্মলেন্দু গুণ তাঁর অমর কবিতা ‘‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’’ নামক কবিতায় বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ বিস্তারিত উঠে এসেছে। তিনি লিখিছেন- ‘‘অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।/ তখন পলকে দারুন ঝলকে তরিতে উঠিল জল,/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাপিয়ে কবি শোনালেন/ তাঁর অমর- কবিতা খানি- ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’’
অর্থাৎ বাঙালির স্বাধীনতার মূলশক্তি, মূল নিয়ামক বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রদত্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের এ তেজম্বী ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি ভাষণ। বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বাঙালির মুক্ত আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় নিজের স্বপ্ন, নিজের চিন্তা-চেতনা কে নিজের করার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়েছে তা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া বিরল। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত এ ভাষণ ছিল সাবলীল, সহজে বোধগম্য, ছেদহীন, নির্মেদ এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। দশ লক্ষ বাঙালির জনসমুদ্রে বক্তব্য উপস্থাপনের ঢং ছিল এতই সাবলীল যে বক্তব্যের প্রত্যেকটি শব্দ উপস্থিত লাখো জনতার বুকে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। শব্দের উঠানামার সাথে উপস্থিত সকলের মন ও মানসের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণের বজ্রকন্ঠ বিশাল জনসমুদ্রে কখনও উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে, আবার কখনও বিশাল জনসমুদ্র অবিশ্বাস্যভাবে পিনপতন নীরবতায় পরিণত হয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক এ ভাষণ স্বীকৃতির ফলে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আজ বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে, বাঙালির মালিকানা ছাপিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সারা বিশ্বের নির্যাতিত বিশ্ব নাগরিকের অধিকার আদায়ের মূলমন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বের যে সকল নির্যাতিত সম্প্রদায় আজও তাদের স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও নিষ্পেষণের শিকার তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ উদ্দীপনা জোগাবে। তাঁর সে বজ্রকন্ঠ আজ বিশ্ব গবেষণার আকর ও বিশ্ব সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। ইউনেস্কো কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধুর তেজম্বী এ ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। পরাধীন বাংলার আকাশে-বাতাসে রেসকোর্সের পড়ন্ত বিকেলে যে বজ্রকন্ঠ হতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের উদগীরণ হয়েছিল, মানবতা, মানবাধিকার, বাঙালির মুক্তির ব্রাঞ্জনা দশ লক্ষ বাঙালির প্রাণের ভিতরে যেভাবে সঞ্চারিত হয়েছিল, ঠিক স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আজও সে ভাষণ অনুরুপ প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করে। আজও বাঙালির পাথেয় বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ। ঐতিহাসিক সে ভাষণের অমিয় ধারায় বাঙালির সাথে সাথে বিশ্ব মিডিয়াও সেদিন গর্জে উঠে ছিল। তার জ্বলন্ত সাক্ষী আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউজ উইক তাদের ৫ এপ্রিল ১৯৭১ সালের এক প্রচ্ছদ নিবন্ধে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে দচড়বঃ ড়ভ চড়ষরঃরপং’ বা ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। একটি ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মুখপত্র সেদিন রেসকোর্সের অমর বক্তব্যকে বঙ্গবন্ধুর অমর কাব্য হিসেবেই উল্লেখ করে সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে ছিল। আন্তর্জাতিক সাময়িকীর সে মূল্যায়নকে অনেকে অতিরঞ্জিত ভেবেছিল কিন্তু আজ টঘঊঝঈঙ কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকৃতির মাধ্যমে ‘‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঋৎধস ড়ভ জবমংঃবৎ’’ এ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভূক্তি পুনরায় সে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত হলো। ইউনেস্কো এর ওহঃবৎহধঃরড়হষ অফারংড়ৎু ঈড়সসরঃঃব (ওঅঈ) এর সকল সদস্যদের মনে ৪৬ বছর পূর্বে প্রদত্ত বক্তব্য আজও ঠিক সেভাবেই দাগ কেটেছে। তাদের প্রাণের স্পন্দনে বঙ্গবন্ধু সে ভাষণ বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সুর তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের এ স্বীকৃতি মূলত বাঙালি জাতির চরম ও পরম অর্জন। বাঙালির বঙ্গবন্ধু আজ সারা বিশ্বের অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় নেতৃত্বে পরিণত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিমেয়। তাঁরই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করেছিল তাদের বহু কাংখিত স্বাধীনতা। এ মহান নেতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করত বাঙালির মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি ছিলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬-দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনিই নেতৃত্ব দেন।
এজন্য তাকে জীবনে অনেক বার কারাজীবন বরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনও আপোষ করেনি। তার অসামান্য অবদানের জন্য আজ এ দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কীর্তি, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, বঙ্গবন্ধুর সহজ সরল জীবনযাপন আজ সারা বিশ্বের মানুষের পথ চলার আদর্শ হিসেবে ধরা দিয়েছে। ইউনেস্কো এর উরৎবপঃড়ৎ এবহবৎধষ ইরিনা রোকোভা আরও বলেন- দদওঃ রং সু ফববঢ় ধহফ ভরৎস পড়হারপঃরড়হ ঃযধঃ ঃযব সবসড়ৎু ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ চৎড়মৎধসবহ ংযড়ঁষফ নব মঁরফবফ রহ রঃং ড়িৎশ ঃড় ঢ়ৎবংবৎাব ফড়পঁসবহঃং যবৎরঃধমব ধহফ সবসড়ৎু ভড়ৎ ঃযব নবহবভরঃ ড়ভ ঃযব ঢ়ৎবংবহঃ ্ ভঁঃঁৎব মবহবৎধঃরড়হ রহ ঃযব ংঢ়ৎরঃ ড়ভ ফরধষড়মঁব, রহঃবৎহধঃরড়হধষ পড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হং ্ সঁঃঁধষ ঁহফবৎংঃধহফরহম নঁরষফরহম ঢ়বধপব রহ ঃযব সরহফং ড়ভ ড়িসবহ ্ সবহ’’ইরিনা রোকভের মতামত বিশ্লেষণে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আজ বাংলার প্রান্ত-ছাপিয়ে বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঐতিহাসিক এ ভাষণে বিশ্ব নাগরিকের অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি কল্পে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে আমার দুটো বিনীত প্রস্তাব প্রথমতঃ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ বিশ্ব নেতাদের ঐতিহাসিক ভাষণসমূহ তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে বিশ্ব পন্ডিতদের (ডড়ৎষফ ঝপযড়ষধৎ) অধিকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ডড়ৎষফ ঐরংঃড়ৎরপধষ ঝঢ়ববপয জবংবধৎপয ঈবহঃৎব (ডঐঝজঈ) স্থাপন করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের আগুন ঝরা সে তেজস্বী ভাষণ বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মাতৃভাষায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ অনুদিত করে বিশ্ব নাগরিকের অনুধাবন ও অনুসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।