রেসকোর্স থেকে ইউনেস্কো…

আহমেদ আমিনুল ইসলাম

বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারকরূপে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্লড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ জাতির পিতার মহান এই ভাষণটি ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কারণ এই ভাষণটির মাধ্যমে একটি জাতির মুক্তির কথাই শুধু উচ্চারিত হয়নি, একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঙালির জন্য একটি দিকনির্দেশনা।

প্রকৃতিজুড়ে এখন চলছে বসন্তকাল। সে দিনও প্রকৃতিজুড়ে ছিল এমনি বসন্তকাল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানের কথা বলছি। বসন্ত বাতাস ছিল ময়দানের সর্বত্র- বসন্ত বাতাসে আন্দোলিত ও আলোড়িত হয়ে উঠেছিল সমবেত লাখো মানুষ। খ্রিস্টীয় বর্ষের মার্চ আর বাংলা বর্ষের ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের অন্তর্গত ফল্গুধারায় শাণিত। অন্তর্গত ও অদৃশ্য এক সুরের আগুন বসন্তের সমস্ত শরীরে যেন মাখা! বসন্ত মানেই প্রেমের উচ্ছলতা, বসন্ত মানেই ভাবুকচিত্তের সৌন্দর্য সাধনায় মগ্নতায় নিবেদনের উচ্ছ্বাস। কিন্তু এই বসন্তই আবার প্রেমিককে করে তোলে দ্রোহী ও বিদ্রোহের চেতনায় শাণিত। আবার এই বসন্তই মগ্ন ভাবুককেও করে তোলে সশস্ত্র যোদ্ধা। ক্যালেন্ডারের পাতায় মার্চ খ্রিস্টীয় বর্ষের মাসমাত্র হলেও বাঙালির অন্তরে অনেকটা নিজস্বতা নিয়ে গৃহীত হয়ে উঠেছে ১৯৭১ সাল থেকে- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে। তাই মার্চ এলে বসন্তের দ্যোতনায় বাঙালি হৃদয় প্রেম ও দ্রোহের চেতনায় আপ্লুত হয়। কালচক্রের আবর্তনে ক্যালেন্ডারের পাতায় এবারো এসেছে মার্চ। মার্চ মাসের দীপ্ত চেতনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখতে পাই বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবন, রাজনীতি, ভূগোল ও ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড় ও গভীরতম সূত্রে গাথা। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের সমান্তরালে মার্চ মাস আর তার দ্রোহিসত্তার সুর আমাদের মননের জগতকে এখনো আলোড়িত ও আন্দোলিত করে। এই মার্চের অগ্নিগর্ভ ও শাশ্বত সুরই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে সম্মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এগিয়ে নিয়ে গেছে বাঙালির স্বপ্নকে একটি সফল ও চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। মার্চ বাঙালির অন্তরে সুর-মূর্ছনার যে জোয়ার তুলেছিল তার একমাত্র ¯্রষ্টা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তানের পরাধীনতায় বন্দি এ দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর আগে এ দেশের মানুষের মুক্তির কথা কেউ ভাবেনি, স্বপ্নও দেখেনি কেউ। বঙ্গবন্ধু নিজে স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন আর এ দেশের তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষকেও সেই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আবার স্বপ্ন দেখিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না- স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য তৃণমূল থেকে এ দেশের মানুষকে প্রস্তুতও করেছিলেন। বাঙালিকে অর্থনৈতিক মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। ‘মুক্তি’র মহান এক মন্ত্রশক্তির অন্তর্গত সুরে বাঙালিচিত্ত মথিত হয়ে উঠেছিল তাও কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্চ মাসেই- বিশেষত ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে মুক্তির অন্তর্গত সেই সুরের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার সর্বত্র। শুধু বাংলা নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল তামাম দুনিয়ায়। সমগ্র বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে রেসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালির সার্বিক মুক্তির সনদ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে অনেকেরই ধারণা ছিল উভয় পাকিস্তানের মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের নমুনা শাসকদের রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রতিফলিত হবে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্পদিনের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের সেই স্বপ্ন ধূলিস্মাৎ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ববাংলায় শাসন-শোষণ, ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আঘাত, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা প্রভৃতির ফলে বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে বঞ্চনা ও হতাশা প্রবল করে তোলে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে এ দেশের মানুষ সেই বঞ্চনার প্রতিশোধ নেয় ব্যালটের মাধ্যমে- গণতান্ত্রিক পন্থায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা গণতান্ত্রিক রায়কে চরম উপেক্ষা করে। ফলে বাঙালির জীবনে ৭ মার্চ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল- অনিবার্য হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মরণপণ সশস্ত্র সংগ্রামও। স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের এক অনিবার্য দিকনির্দেশনা ছিল ৭ মার্চের ভাষণে। ১৯৪৭ থেকে ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিকাশের পানে ধাবিত হয়। বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির বাণী ৭ মার্চের ভাষণকে উজ্জ্বল করে তুললেও ভূগোল-বাংলার সামগ্রিক ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ভাষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতির প্রতিও এক সূক্ষ্ম নির্দেশনা আমরা ৭ মার্চের ভাষণে পাই। অর্থাৎ একটি জাতির সামগ্রিক বিষয় ও দার্শনিক অভিপ্রায় সমন্বিত সেই ভাষণ ছিল বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা।

আজ যদি প্রশ্ন করা যায় কী হতো বঙ্গবন্ধু যদি ৭ মার্চে সেই কালজয়ী ভাষণ না দিতেন? কল্পনা করে আমরা যদি দেখি যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো ভাষণ দেননি কিংবা ইতিহাসে বাঙালির জীবনে কোনো ৭ মার্চ নেই তবে কেমন হতো আমাদের জাতি-রাষ্ট্রের গঠন-কাঠামো কিংবা দার্শনিক ভাবাদর্শ? কেমন হতো বাঙালির ইতিহাস? কল্পনা করে আমরা যদি দেখি, দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে নিপীড়ক ও ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালির কোনো জনযুদ্ধ হয়নি ১৯৭১ সালে, তবে এই ভূখণ্ডের মানচিত্রের চেহারা কেমন হতো? কল্পনায় এসব ভাবনা ক্ষণিকের জন্য ঠাঁই দিলেও নিজেকে কেমন অস্তিত্বহীন মনে হয় তা বলে বুঝাবার নয়! তাই একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না যে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাঙালির রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় গাঁটছড়া বেঁধে জীবনযাপনের কথা! ভাবতেও কষ্ট লাগে পাকিস্তানের সঙ্গে এক রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের পরিচয় প্রকাশে। এসব ভেবেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞার কাছে আমাদের মস্তক অবলীলায় নত হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু সঠিক সময়ে দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটি নিতে কুণ্ঠিত হননি। তিনি বাঙালির জন্য বাংলাদেশের জন্য সর্বদাই উচ্চকণ্ঠ, নির্ভীক এবং আপসহীন ছিলেন। তাঁর মতো সাহসী নেতাই কেবল দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণে ঘোষণা করতে পারেন : ‘আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করব না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তাদের আরো বলেছি, মারলে ক্ষতি নাই। কিন্তু আমার লাশটা বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।’ (১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে ফিরে ঢাকায় দেয়া ভাষণের অংশ)

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতাকামী লাখো বাঙালির সম্মুখে দেয়া জাতির পিতার সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর পেয়েছে আন্তর্জাতিক এক স্বীকৃতি। বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারকরূপে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্লড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ জাতির পিতার মহান এই ভাষণটি ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কারণ এই ভাষণটির মাধ্যমে একটি জাতির মুক্তির কথাই শুধু উচ্চারিত হয়নি, একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঙালির জন্য একটি দিকনির্দেশনা। ভৌগোলিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি একটি চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিল ‘সোনার বাংলা’ রূপে স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তোলবার। ছিল সমৃদ্ধ মানবিক চেতনার প্রতি আহ্বান।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পরও নানা টালবাহানা করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন কেবল নানারূপ ষড়যন্ত্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন পরাধীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই, পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে মুক্তির কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্তির মধ্য দিয়েই কেবল বাঙালির জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তিনি ছিলেন যথাযথ সময়ের অপেক্ষায়। অবশেষে একদিকে পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা এবং অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানি অত্যাচার, নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষমতার দাপট বাঙালির চেতনায় স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগ্রত করে তুলেছিল। বঙ্গবন্ধু যে মাহেন্দ্রক্ষণের প্রত্যাশায় ছিলেন তা অবশেষে ৭ মার্চ হয়ে বাঙালির জীবনে ধরা দেয়। উল্লেখের অবকাশ রাখে না যে, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও নিগ্রহের ইতিহাস, বঞ্চনা ও নিপীড়নের ইতিহাস, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের ঐতিহাসিক পটভূমিসহ একটি দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও ভবিষ্যৎ-স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিত একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশটি গড়বার অমিত প্রত্যয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসর ও ক্ষমতালোভীরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন দেশের ভেতর পুনরায় শুরু হয় পরাধীনতার তাণ্ডব- পুনরায় জেঁকে বসে পাকিস্তানি আদর্শবাদী শাসকগোষ্ঠী। প্রগতির দিকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে তারা চিন্তায় ও মননে বাংলাদেশকে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রে পরিণত করে। স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে এই ক্ষমতালোভীরা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী অপশক্তির নেতাদের বাড়িতে-গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়। বাংলাদেশ স্বপ্নহীন পথে চলতে থাকে। কিন্তু বিলম্বে হলেও এ দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসায়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ বাঙালির সার্বিক মুক্তির দায়ও গ্রহণ করেন তিনি।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এখন বৈশ্বিক ইতিহাসের অংশ। রেসকোর্স থেকে ইউনেস্কোর মাধ্যমে সেই ভাষণ আজ বৈশ্বিক সম্পদে পরিণত- মানবের কল্যাণের জন্য সংরক্ষিত। জননেত্রী শেখ হাসিনা বৃহত্তর মানবের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্গত প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশকে প্রকৃত এক ‘সোনার বাংলা’ গড়বার লক্ষ্যে নিরন্তর সাধনার ব্রত গ্রহণ করেছেন। ৭ মার্চের অন্তর্গত প্রেরণার সুর বুকে ধারণ করে আমরাও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছি- সোনার বাংলা গড়বার প্রত্যয় আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আর সমস্ত কর্মোদ্যোগে। সবার কর্মোদ্যোগের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণের অন্তর্নিহিত সুর সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়–ক ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে।

আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

SUMMARY

219-1.jpg