পৃথিবীতে এমন কিছু মহান ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের নিয়ে থিসিস, মহাকাব্য জীবনী ইতিহাস প্রভৃতি রচনা করলেও তাদের সম্পর্কে লিখে শেষ করা যাবে না। এই সব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, নেলসন মেন্ডেলা প্রমুখ। কারণ তাদের জীবন কর্ম এতোটা সমৃদ্ধ এবং বিশাল ব্যাপ্তিময় তা সাধারণভাবে লিখে বইয়ের মলাটে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাদের জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সভা, সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনেক বিজ্ঞজন জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন সেখানে। কিন্তু তারা কি সেই মহান ব্যক্তির জীবনের সম্পূর্ণ বিষয় তুলে ধরতে পারেন? রেডিও টেলিভিশন, সেমিনারে আমরা ঐ মহান ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় যা শুনি তা প্রায়ই একই কথার পুনরাবৃত্তি মনে হয়। যা শুনি তা ভাঙা রেকর্ডের মতো কানে বাজতে থাকে অনেক সময়।
বাংলাদেশে মানুষের নয়নের মনি, শতাব্দীর সেরা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান এর জীবনকর্ম, রাজনৈতিক আদর্শ দীর্ঘ সংগ্রামমুখর ইতিহাস সম্পর্কে আমরা সবাই কতোটুকু জানি? বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য তিনি নিজের জীবনের সম্পূর্ণটাই উৎসর্গ করেছিলেন। আমাদের জাতীয় জীবনে তার আদর্শ কতোটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তার মূল্যায়ন করতে কতোটা সচেষ্ট আমরা? বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু এবং তার জীবন সম্পর্কে কতোটা জানতে পারছে? আজকের অনেক তরুণ-তরুণী বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জানে না। দীর্ঘ সময় স্বাধীনতা বিরোধী আদর্শের ধারকবাহকরা দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম আদর্শ সংগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে তার অবস্থানকে ভুলুষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। সত্য মিথ্যার দীর্ঘ লড়াইয়ে অবশেষে সত্য ও ন্যায়ের জয় হয়েছে।
খ-িতভাবে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরে তার আদর্শ পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অঙ্কুর রচিত হয়েছিল শেরে বাংলা সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু হাত ধরে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই চারাগাছটি বিরাট মহীরুহে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে বাঙালি জাতি এগিয়ে গিয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে তার নেতৃত্বে। এভাবেই বঙ্গবন্ধু গোটা বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন, প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ঠাই করে নিয়েছেন একজন কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হলে তার সর্ম্পকে আরো গভীরভাবে জানতে হবে। এজন্য হৃদয়ে খাঁটি দেশপ্রেম থাকা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার স্থপতি বলা হলে, যথেষ্ট বলা হবে না। ইতিহাসের সেই আদি পর্ব থেকে তার অবদান, ত্যাগ, সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি বিষয়কে তুলে ধরতে হবে। গতানুগতিকভাবে দায়সারা গোছের প্রচেষ্টা চালালে এ ক্ষেত্রে মোটেও সুফল বয়ে আনবেনা, জোর দিয়ে বলা যায়। মোটকথা, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম যে আসলে দীর্ঘ দুই দশকের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল-এই সত্যটি নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। ৭১ এর মার্চ নয় তারও অনেক আগেই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের লড়াই শুরু হয়েছিল। অনেকেই জানেন না ১৯৬৬ সালের ৭ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ৭১ এ ৭ মার্চ এর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মতো ঐতিহাসিক ৬ দফার ম্যাগনাকার্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে অর্থবহ ভূমিকা রেখেছে। একাত্তরের আগের ইতিহাসও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে নতুন প্রজন্মের কাছে। তাহলেই তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে হৃদয়ে লালন করে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম যে আসলে দীর্ঘ কয়েক দশকের আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল এটা উপলদ্ধি করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন ব্যাপক অগ্রগতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রবর্তক। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রথম কয়েকটি বছর ছিলো চড়াই উৎরাইপূর্ণ। এর মাঝেও সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবনই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তার সংগ্রামের ফসল হিসেবে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করেছি। স্বাধীনতার পর নানা বিষয়েই আমাদের হতাশা ছিলো কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইতিবাচক ভবিষ্যতের বিষয়ে সবসময়ই আশাবাদী ছিলেন। সেই সংগে আশা দেখিয়েছেন দেশের মানুষকে। তার জন্য বাংলাদেশের সব মানুষ অহংকার অনুভব করে। বঙ্গবন্ধু গোটা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তার চেয়ে বড় কথা, তিনি একটি জাতিসত্ত্বাকে নিজস্ব পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এ জন্যই আমাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানা প্রয়োজন রয়েছে। যিনি এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে এসব বিষয় জানাতে হবে। আর এ দায়িত্ব কারো একার নয়। কোনো প্রচার মাধ্যমে কিংবা সরকারি দফতরের মাধ্যমে নয়, আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয় আন্তরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিজের পরিবার থেকে এ কাজ শুরু করতে হবে। পরিবারে নতুন প্রজন্মের সদস্যদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে সবাইকে। এক্ষেত্রে অবহেলা কিংবা গাফিলতির কোনো অবকাশ নেই। আমাদের জাতীয় সাফল্যের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়। কারণ, তার নেতৃত্বেই আমরা পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোড়াপত্তন থেকে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি অধ্যায়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিলেন অসামান্য অবদানের মাধ্যমে। ধাপে ধাপে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন অপূর্ব বিচক্ষণতায়। তার নেতৃত্বে অদ্ভুত কারিশমা ছিল, ফলে আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে একজন নির্ভরযোগ্য কান্ডারি হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিল নিঃসংকোচে। আবাল বৃদ্ধ বণিতার নয়নের মনি হয়ে উঠেছিলেন সংগ্রামমুখর জীবনের মধ্যে দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই নানা নাটকীয়তা আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রকাশে পরিপূর্ণ। আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেকটাই রাজনীতি বিমুখ। তাদের রাজনীতি বিমুখতার কারণও রয়েছে যথেষ্ট। গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক শঠতা আর অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী কর্মকা- দেশের মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে এটা সত্যি। তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন যদি আজকের তরুণরা আন্তরিকভাবে চর্চা করে, তার জীবনের নানা অধ্যায়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যথার্থ বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
শোকের মাস আগস্ট। জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্ত অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ৪০তম বার্ষিকী সমাগত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের নানা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং এর নানা অঙ্গ সংগঠন বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারিভাবেও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে নানা কর্মসূচি আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে স্মরণ করছে, শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও জাতির জনকের স্মরণ কর্মসূচি তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন প্রভৃতি রাজনৈতিকভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি এখন পর্যন্ত। এর চেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় আর কী হতে পারে। এদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করা বিএনপি জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে এখনও বিভ্রান্তি আর সংকোচের বেড়াজালে বন্দি হয়ে আছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং শোক প্রকাশের বদলে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করে আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং স্থূল রুচির প্রকাশ ছাড়া আর কি হতে পারে? জাতীয় শোক দিবসের এই কর্মসূচিতে বিএনপি'রও অংশগ্রহণ থাকা উচিত। বাংলাদেশের জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে। রাজনীতিতে সুস্থ সুন্দর স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে উদার মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে। আর এটা সম্ভব জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে। বিএনপি যদি এটা না করতে পারে, তাহলে তাদের উচিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অমর্যাদাকর কোনো কিছু না করা কিংবা কিছু না বলা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চাইলে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যায়। সেখানে তার সুস্বাস্থ্য দীর্ঘজীবন কামনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীতে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হলে জাতির কাছে শ্রদ্ধার পাত্রী হতে পারতেন। এটা তার উদারতা প্রকাশের বড় একটি সুযোগ। আমাদের প্রত্যাশা, বিএনপি নেত্রী এই সুযোগটি এবার কাজে লাগাতে সচেষ্ট হবেন। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার নতুন ধারার সূচনা করা যায়। কোনো দল বা গোষ্ঠীর গন্ডিতে সীমবদ্ধ রাখার মতো ব্যক্তিত্ব নন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু । তিনি এ দেশের সব মানুষের-এটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে।
সমপ্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীতে তাদের নিজেদের মতো করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে সংবাদ প্রকাশ করতে আহবান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, 'আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু মৌলিক হয় না। আমরা চাই আপনারা আপনাদের স্বকীয়তা থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠান করুন। আমরা আপনাদের সৃজনশীল অনুষ্ঠান থেকে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানতে পারব, অনেক কিছু শিখতে পারব। আপনারা বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন'। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই উদাত্ত আহ্বান দেশবাসীকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত এবং উদ্বুদ্ধ করেছে বৈকি। আমাদের সবাইকে দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উপলদ্ধি করার পাশাপাশি গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সবাইকে একথা মানতে হবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। আজ আমাদের বেশি কিছু চাওয়া নেই। আমরা সর্বান্তকরণে চাই সব দল ও সংগঠন এবং গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাবে, তার শাহাদাৎবার্ষিকী পালন করবে, তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করবে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধু কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের নন, তিনি বিশেষ কোনো শ্রেণি ধর্ম কিংবা বর্ণের নন, তিনি দেশের সব মানুষের, তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের সম্পদ নন, সমগ্র জাতির সম্পদ।
দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হাতে দেশ জিন্মি থাকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কটাক্ষ করা হয়েছে। তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ফলে বিভ্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের অনেক মানুষ। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়। ষড়যন্ত্রকারী মিথ্যে অপপ্রচারকারীদের দিন শেষ হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে এখন সত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা অনুসারি থাকতে পারে। যে যে দলই করুক না কেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্ক কিংবা বিভেদ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নেয়া উচিত সবার। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নন, তিনি জাতির জনক হিসেবে এক অনন্য শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত আছেন। সর্বস্তরের মানুষের অন্তরে যদি বঙ্গবন্ধুকে গেঁথে দিতে হয়, তবে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করলে চলবে না। শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে পাঠ্য বইয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়কে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে হবে বঙ্গবন্ধুকে। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন, কিভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, তিনি কী চেয়েছিলেন, তার রাজনৈতিক দর্শন কী ছিল, তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক চিন্তাধারা সবই তুলে ধরতে হবে সৃজনশীল নিরপেক্ষ লেখায়। শুধুমাত্র কঠিন প্রবন্ধ কিংবা কাব্য রচনা করে নয় সব শ্রেণির সব বয়সের মানুষের উপযোগী করে লিখতে হবে। ফলে শৈশব থেকেই নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জেনে-বুঝে তার রাজনৈতিক দর্শন, চিন্তাভাবনা সম্পর্কে গভীরভাবে পরিচিত হয়ে বড় হবে। এভাবেই বঙ্গবন্ধু সর্বজনীনতা পাবেন। পঁচাত্তরের সেই নির্মম হত্যাকা-ের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যথেষ্ট অসতর্ক, বেপরোয়া ও বিদ্বেষপ্রসূত বিতর্ক হয়েছে। আবার কোনো মহল ইচ্ছে করেই এমনটি করেছেন। আজ সময় এসেছে সব বিতর্কের উধর্ে্ব উঠে বঙ্গবন্ধুকে গোটা জাতির কাছে সম্মানজনক অবস্থানে তুলে ধরা। এক্ষেত্রে দলীয় সংকীর্ণতা ত্যাগ করে সব পক্ষকে একমত পোষণ করতে হবে, উদারতার পরিচয় দিতে হবে। বিভেদ আর বিদ্বেষ আমাদের বার বার পিছিয়ে দিয়েছে। এখন আর আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে গোটা দেশের সব দলের সব মতের মানুষের কাছে সর্বজনীন এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা এখন আমাদের সবার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
রেজাউল করিম খোকন : ব্যাংকার ও কলামিস্ট