ফয়সাল আহমদ সোহান:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে ছিলেন একজন মহাপুরুষ, চির সংগ্রামী একজন মহামানব। ছিলেন বাংলার কৃষি ও খেটে খাওয়া মানুষদের অকৃত্রিম বন্ধু।
কৃষক ঘরের এই বীর পুরুষ ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে – শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।
খুব অল্প বয়সেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং সর্বশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন।বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মাটি-মানুষ, কৃষি ও কৃষকের একান্ত আপনজন। তিনি গর্ব করে বলতেন, আমি কৃষকের ছেলে।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শুরু হয় কৃষি বিপ্লবের সূচনা।কৃষকের সব বকেয়া খাজনা ও সুদ তিনি মাফ করে দেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরতরে মওকুফের ঘোষণা দেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের ত্রিশ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণে তাৎক্ষণিক আমদানি, স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি-উপকরণ সরবরাহ, কৃষি ঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং কৃষকের মাঝে খাসজমি বিতরণ করে কৃষির উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করেন।
১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বঙ্গবন্ধু কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের মতো প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীদের সেদিন কাগজ কলম বইয়ের পাশাপাশি প্যান্ট-কোট খুলে গ্রামে কৃষকদের সাথে কাজ করার আহবান করেছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে সেদিন বলেছিলেন সবুজ বিপ্লব ব্যতিত দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।তার শুরুটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার অসমাপ্ত কাজটুকু সম্পন্ন করেছেন তারই সুযোগ্য উত্তরসুরী কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা।কৃষি ও কৃষকদরদী বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা জাতি আজীবন শ্রদ্ধ্যার সাথে স্মরণ করবে।