বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উপহার


সামছুল হক মন্টু পাটওয়ারী
যুগে যুগে যারা সমাজ পরিবর্তন এবং জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কাজ করেন তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। নিজের চিন্তা ও চেতনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁকে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু মুজিব ছিলেন এমনি এক মহান ব্যক্তিত্ব।

যে কোনো ঘটনার একজন নায়ক থাকেন আবার একজন প্রতিনায়কও থাকেন। বঙ্গবন্ধু যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হন তাহলে প্রতিনায়ক কে? যদিও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো প্রতিনায়ক ছিলেন না। কিন্তু ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে পেছনে ফেরানোর জন্য ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর তাকেই প্রতিনায়ক করার চেষ্টা চালিয়েছিলো এবং এখনো চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি লন্ডনে জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমানকে আখ্যায়িত করে কয়েকটি সেমিনারে বক্তব্যও দেন। শ্রদ্ধেয় এ নেতাকে সবিনয়ে বলছি- মিথ্যা বলা মহাপাপ, আর সত্যকে অস্বীকার করাও একই কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রগতি ও উন্নয়নের বাধা প্রদানকারী বিএনপি তথা স্বাধীনতা বিরোধী জামাত জোটের অনেক নেতা ও ভাড়াটে বক্তা অনর্গল মিথ্যা বানোয়াট কল্পকাহিনী রচনা করছেন এবং সেটাকে সত্যে পরিণত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের রূপকার, প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মেজর জিয়াকে নিয়ে।

আমি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াকে ছোট করছি না। কারণ, এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁরও অবদান আছে। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। আর বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো দেশের। তখনকার সর্বস্তরের জনগণের শ্লোগান ছিলো দেশকে নিয়ে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, 'তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।' অনেক বিদেশীরা এ দেশকে চিনতো মুজিবের দেশ হিসেবে। সে দিনের সাড়ে সাত কোটি মানুষের এক আওয়াজ, একই কণ্ঠস্বর মুজিবর-মুজিবর।

অথচ আজ বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার উদ্দেশ্যে জিয়াকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বড় করার চেষ্টা চলছে অবিরত। যা জিয়া নিজেও কল্পনায় আনেননি এবং চেষ্টাও করেননি। তিনি জানতেন সূর্যের পাশে যদি মোমবাতি রাখা হয়, তখন মোমবাতি তার কার্যকারিতা হারাবে। একাত্তরে বাংলাদেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে সবচে' আলোচিত ও আলোড়িত ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যান চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে। তাঁর আহুত অসহযোগ আন্দোলন আর অসহযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। সেই আন্দোলন জন্ম নেয় বিশাল গণবিদ্রোহে। সেই বিদ্রোহকালীন অবস্থায়ও জনগণকে শান্ত রাখা এবং সামনে চলার নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিবর রহমান। দেশবাসীতো বটেই, বিদেশী রাষ্ট্র নেতা, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন একজন ব্যক্তি প্রশাসন, পুলিশ ও মিলিটারী ছাড়াই সমগ্র জনগোষ্ঠীকে কীভাবে পরিচালিত করছেন। তাঁর প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ জনগণ সানন্দে মেনে নিচ্ছে। তাঁর কথায় লক্ষ লক্ষ তরুণ জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো। পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা ওয়ালি খান সে সময় ঢাকা এসেছিলেন। পাকিস্তান ফিরে গিয়ে তিনি শেখ মুজিবের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করেন-মহাত্মা গান্ধী আজ বেঁচে তাকলে বিস্মিত হতেন। সে সময় সত্যি বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিস্ময়। বিদেশী সাংবাদিক যারাই পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঢাকায় এসেছিলেন তারা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন গভর্নর ভবন নয়, সচিবালয় নয়, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের দোতলা বাড়িটি থেকে বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনা করছেন। সুতরাং দেশ-বিদেশে বসে নতুন তত্ত্ব বা তথ্য প্রচার করে আজকের প্রজন্ম তথা আপামর বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা নিজের অজ্ঞতা, মুর্খতা ও অসারতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে শেখ মুজিবের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা যেমন বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিলো তেমনি ১০ মাস পর তাঁর মুক্তির বিষয়টিও তাদের নজর কেড়েছিলো। বিশ্ব গণমাধ্যমের কাছে তিনি ছিলেন বিজয়ী বীর। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের যবনিকাপাত হয়েছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এটা বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্য সাময়িক বিপর্যয়। আজ নয়, অনাগত ভবিষ্যতে একদিন ইতিহাস প্রমাণ করবে মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়ে শক্তিশালী এবং সে মুজিবই বাংলাদেশে আরেকটি বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন। যা শুরু করেছেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি, বাংলার মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর প্রগতিশীল নেতৃত্বে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পরিচয় ছিলো পিতার হত্যাকারী, ভিক্ষুকের, অভাব, অনটন, দারিদ্র্যে জর্জরিত, মঙ্গা কবলিত দেশ হিসেবে। বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান, স্বাধীনতা বিরোধী আষ্ফালনকারীদের দেশ হিসেবে। মাত্র ১১ বছরের ক্ষমতা গ্রহণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর ধনী দেশের চেয়েও অনেক এগিয়ে। বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭৫ সালের কলঙ্কের তিলক মুছে বিশ্বে তার অবস্থান সম্মানের উজ্জলতার মহীসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার ও ফাঁসি দেয়া এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার ছিলো স্বপ্ন। কিন্তু জননেত্রীর দৃঢ়তায় তা আজ বাস্তব। খুনিদের ফাঁসি হয়েছে।

আজকের এই দিনে স্মরণ করি বঙ্গবন্ধুকে, যিনি না থাকলে স্বাধীনতার সূর্যোদয় এ দেশে কবে হতো জানি না। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে, যিনি ইতিহাসের কাছে আমাদের ও আজকের প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার। 

লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।

SUMMARY

2161-B1.jpg