ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত শাসনামল ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামের খেদমতে যে উল্লেখযাগ্য অবদান রেখেছেন এবং রেখে চলছেন, গোটা পৃথিবীতে তার দৃষ্টান্ত বিরল। তবুও ইসলামের লেবাসধারী একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে ইসলাম-বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস অব্যাহত রাখে, যা এখনও চলছে নানা কৌশলে, নানা আঙ্গিকে। এসব মতলববাজ নিন্দুকের মুখে অনবরত ছাই ছিটিয়ে এবং কবির সাথে ছন্দ মিলিয়ে আমরাও আজীবন আবৃত্তি করতে থাকব : “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা,গৌরি,যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
বাংলাদেশে ইসলামের প্রকৃত পরিচর্যাকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের উন্নয়ন করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কর্মকা-কে যথাযোগ্য মর্যাদায় আসীন করেছেন। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে উৎসাহী করার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তার। উপরন্তু দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জঙ্গিপনা নির্মূলের সাফল্যও তার সরকারের বড় অবদান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, একটি নতুন মানচিত্রের অমর রূপকার। বড়বিচিত্র, বর্ণাঢ্য আর কীর্তিতে ভরা তাঁর সারাটা জীবন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার চেতনার অধিকারী একজন খাঁটি ঈমানদার মুসলমান। তিনি কখনও ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেননি। বাংলাদেশকে সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদা সচেস্ট। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালীন শাসনামলে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণার্থে গৃহীত নানামুখি পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন ছিলো, তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে গ্রহণ করেছিলেন বাস্তব ভিত্তিক ও কার্যকরী নানা ব্যবস্থা। তিনি যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, তেমনি বাংলাদেশে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি। এ দু’টি অনন্য সাধারণ অনুষঙ্গ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে দান করেছে উজ্জ্বল মহিমা। ইসলাম প্রচার-প্রসারে তাঁর অসামান্য অবদানের বিষয়টি আমরা অনেকে পুরোপুরি ওয়াকেফহাল নই। অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী-স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক মতলববাজরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলকে সর্বদা ইসলাম-বিরোধী শক্তি হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং তাঁর বিরুদ্ধে চালায় নানা রকম ভিত্তিহীন অপপ্রচার।
ইসলাম প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান সমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হলো।
ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর সপ্তম পূর্ব পুরুষের বঙ্গে আগমন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিলেন দরবেশ শেখ আউয়াল। (শেখ মুজিবুর রহমান, পিতা শেখ লুৎফুর রহমান, পিতা শেখ আব্দুল হামিদ, পিতা শেখ তাজ মাহমুদ, পিতা শেখ মাহমুদ ওরফে তেকড়ী শেখ, পিতা শেখ জহির উদ্দিন,পিতা দরবেশ শেখ আউয়াল।) তিনি হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ)-এর প্রিয় সঙ্গী ছিলেন। ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি বাগদাদ থেকে বঙ্গে আগমন করেন। পরবর্তীকালে তাঁরই উত্তর- পুরুষেরা অধুনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির জনক হচ্ছেন, ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম অধঃস্তন বংশধর। বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। নানার নাম ছিল শেখ আব্দুল মজিদ। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমানের (মৃত্যু : ১৯৭৪ খ্রি: ) সুখ্যাতি ছিল সূফী চরিত্রের অধিকারী হিসেবে। জাতির জনক নিজেও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও ইসলামী তরীকা অনুযায়ী জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে কালো কোটটি উপহার দিয়েছিলেন যে মাওলানা- আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী বাংলার জমিনের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন। তিনি সব সময় পাঞ্জাবির উপরে কালো কোট পরতেন। একদিন লালবাগে হুজুরের কামড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বসা ছিলেন। শেখ মুজিব বললেন, ‘দাদা আপনার কোটটা আমার খুব ভাল লাগে।’ সাথে সাথে সদর সাহেব হুজুর নিজের পরনে থাকা কালো কোটটি গা থেকে খুলে নাতি মুজিবকে পরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘নাতি গায়ে দাওতো দেখি, তোমাকে কেমন লাগে।’ এরপর ফরিদপুরী বললেন, ‘দারুন তো লাগছে নেতাকে। এখন তোমাকে সত্যিকারের জাতীয় নেতা মনে হচ্ছে। ঠিক আছে এটা তোমাকে দিয়ে দিলাম। তুমি সব সময় এটা পরে মিটিং মিছিলে যাবে।’ দাদা হুজরের সেই কালো কোটটি শেখ মুজিবুর রহমানের আমৃত্যু নিত্য সঙ্গী ছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক ছিল কোটটি। (কে এই মাওলানা ৬ষ্ট পর্ব, তামিম রায়হান, আমারব্লগ ১১ নভেম্বর ২০১২ ইংরেজি)
কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় অবস্থান : ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। একথার জবাবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায়, অত্যাচার ,শোষণ-বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাশের কথা ভাবতে পারেন তারাই, ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফারস্থা করে তোলার কাজে।”
ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় : ১৯৭২ সালের ৪ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের ওপর আলোচনার জন্য আয়োজিত সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ দৃঢ়কন্ঠে ঘোষণা করেন: “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার স্ব-স্ব অধিকার অব্যাহত থাকবে। আমরা আইন করে ধর্ম চর্চা বন্ধ করতে চাইনা এবং তা করবওনা। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের কারো নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবেনা, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, ্েকউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। আমাদের আপত্তি হলো এইযে, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবেনা। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব,ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে”।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা : ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, প্রচার-প্রসার ও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামগ্রিক জীবনকে মহান ইসলামের কল্যাণময় স্রোতধারায় সঞ্জীবিত করার মহান লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। “বায়তুল মোকাররম সোসাইটি ” এবং “ইসলামিক একাডেমী ” নামক তৎকালীন দু’টি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারী অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বড় সংস্থা হিসেবে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবত পবিত্র কুরআনের বাংলা তরজমা,তাফসীর, হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল (সাঃ)-এর জীবন ও কর্মের উপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী আইন ও দর্শন,ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবী ও মনীষীগণের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় সহ সারা দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খন্ডে ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২ খন্ডে সীরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে।
সীরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা : বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সীরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন।
হজ্জ্ব পালনের জন্য সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা : পাকিস্তান আমলে হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য কোন সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা ছিলনা। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য সরকারী তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন এবং হজ্জ্ব ভ্রমন কর রহিত করেন। ফলে হজ্জ্ব পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। বঙ্গবন্ধু শাহাদাত লাভের পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কথায় কথায় নিজেদেরকে ইসলামের সেবক দাবী করলেও তাদের আমলে সরকারী অনুদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যা এদেশের অনেকেই হয়ত জানেন না।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন : ইসলামী আকীদা ভিত্তিক জীবন গঠন ও দ্বীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন করেন। পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ত শাসিত ছিলনা। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।’ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুণর্গঠন বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রসারের এক মাইল ফলক। জাগতিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকীকরণের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করণ এবং মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরকারী চাকুরীর নিশ্চয়তা ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান তার “বঙ্গবন্ধু: যেমন দেখেছি” গ্রন্থে উলে¬খ করেন, মাদ্রাসার জন্য সরকারী অনুদান বন্ধের একটি প্রস্তাব সম্বলিত নথি বঙ্গবন্ধুর নিকট উপস্থাপন করা হলে বঙ্গবন্ধু ফাইলে লিখেন যে, “মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য যে বরাদ্দ এতদিন ছিল, সেটাই থাকবে। তবে ভবিষ্যতে এ বরাদ্দ আরো বাড়ানো যায় কিনা এবং কতটা বাড়ানো যায়, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।”
বেতার ও টিভিতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত প্রচার : বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তারই নিদের্শে সর্ব প্রথম বেতার ও টেলিভিশনে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পবিত্র কুরআন ও তার তাফসীর এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ), শব-ই কদর, শব-ই বরাত উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণা : ধর্মীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন এবং উলে¬খিত দিবসসমূহের পবিত্রতা রক্ষার্থে সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
মদ,জুয়া ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ : ইসলামের নাম নিয়ে পাকিস্তানিরা দেশ পরিচালনা করলে ও তাদের সময়ে মদ,জুয়া,নিষিদ্ধ ছিলনা। অথচ বঙ্গবন্ধু সরকার আইন করে মদ,জুয়া ও ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড়ের নামে জুয়া,লটারী এবং গেট-এ-ওয়ার্ড প্রভৃতি ইসলাম বিরোধী অনুষ্ঠানাদিতে বিদেশীদের জন্য মদ পরিবেশন বন্ধ করে দেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এ প্রসঙ্গে প্রণিধান যোগ্য “আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে ইসলাম বিরোধী বহু কাজ হয়েছে। রেসের নামে জুয়া খেলা রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃত ছিল। আমি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দিয়েছি,পুলিশকে তৎপর হতে বলেছি, শহরের আনাচে কানাচে জুয়ারীদের আড্ডা ভেঙ্গে দিয়েছি। আমি ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলি, ধর্ম নিরেপেক্ষতা ধর্মবিরোধীতা নয়। আমি মুসলমান। আমি ইসলামকে ভালবাসি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন, দেখবেন এদেশে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড কখনোই হবেনা” (সৈয়দ আলী আহসান, বঙ্গবন্ধু: যে রকম দেখেছি, পৃ;১৬)
বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গিতে সরকারী জায়গা বরাদ্দ দান : বিশ্ব ইজতিমা শান্তিপূর্নভাবে সামাধান করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদীর তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সে হতে অদ্যাবধি তাবলীগ জামায়াত ঐ স্থানে বিশ্ব ইজতেমা করে আসছে।
কাকরাইলের মারকাজ মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ দান : তাবলীগ জামায়াতের মারকায বা কেন্দ্র নামে পরিচিত কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণ কল্পে রমনা পার্কের অনেকখানি জায়গার প্রয়োজন যখন দেখা দেয়,তখন রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় কাকরাইল মসজিদকে দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করে দেন।
রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামায়াত প্রেরণের ব্যবস্থা : রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। সে দেশে বিদেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কেউ অনুমতি পেতনা। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়া সহযোগিতা করায় বঙ্গবন্ধুর সাথে সেদেশের নেতৃবৃন্দের একটি সুদৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতার পর সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম তাবলীগ জামায়াত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।
আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন ও সাহায্য প্রেরণ : ১৯৭৩ সালে আরব ইসলারইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন করেন এবং এই যুদ্ধে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে ১লক্ষ পাউন্ড চা,২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী প্রেরণ করা হয়।
ও আই সি সম্মেলনে যোগদান ও মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ও আই সি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভূক্ত করার মধ্যদিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে নেন। ও আই সি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতৃবৃন্দেরস সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের সাথে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।