তোমার জীবদ্দশায় তোমাকে কখনো আমি চোখে দেখিনি
তোমার সাথে আলাপচারিতা কিংবা পরিচয়ও ছিল না
থাকবার কথাও নয়,
তোমার মৃত্যুর কয়েক বছর পর আমার মায়ের গর্ভে আমার জন্ম হয়
পরের বছর কোন এক শুভক্ষণে ভূ-ঘরের আলো আঁধারিতে আমি ভূমিষ্ঠ হই,
তারও কয়েক বছর পর আমি যখন আধো কথা বলতে আর
যেকোনো কিছু দেখে চিনতে শিখি তখন আমার বাবা আমাকে তোমার ছবিটি
বার বার দেখিয়ে তোমার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেন- আমি তোমাকে চিনতে শিখি।
তারও কয়েক বছর পর আমি যখন প্রথম বর্ণমালা পড়তে শিখি তখন আমার মা
আমাকে তোমার নামের অক্ষর ও তা দিয়ে
তোমার নামটি পড়াতে পড়াতে এক সময় আমি তোমার নামের সঙ্গে পরিচিত হই।
এভাবে আমার শৈশব কৈশোর পেরিয়ে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে
আর নানান গল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাস ও দলিল দস্তাবেজ দেখতে দেখতে
আমার ভিতর একটা অনুভূতি জাগ্রত হয়-
‘‘আমি পথ চলতে গেলে আমার পদ-পাশে টের পার তোমার দীপ্ত পায়ের পথ চলা,
আমি চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই- লাখো লাখো মানুষের ঢলে ভেজা রেসকোর্স উদ্যান,
আমি দেখতে পাই- চশমার কালো ফ্রেমে সংমিশ্রিত সেই ঐশ্বরিক মুখোমণ্ডল
যেন আমিও সেদিন সেই জনস্রোতে ভিজে দেখেছিলাম তোমাকে!’’
আমার রক্ত প্রবাহের প্রতিটি মাইক্রো সেকেন্ডে আমি অনুভব করি-
তোমার সেই ঝাঁঝালো স্বরের প্রতিধ্বনি,
যে প্রতিধ্বনিতে একদিন প্রকম্পিত হয়েছিল বাংলার মাঠ ঘাট পথ প্রান্তর
মহাবিশ্বের নাভিমূল।
আমার অস্তিত্বের ভিতরে আমি অনুভব করি- তোমার অস্তিত্ব
আমার আদর্শের ভিতরে আমি অনুভব করি- তোমার আদর্শ
আমি অনুভব করি- একটি মৃত্তিকার বুক চিরে একটি রাষ্ট্রের
অঙ্কুরোদ্গমের সুতীব্র চিৎকার ও তার প্রসবকালীন যন্ত্রণা,
আমি অনুভব করি- তুমি জনক নও, তুমি আমার জননী।