শেখ মুজিবের গ্রন্থপ্রীতি ও তাঁর বুলেটবিদ্ধ বই : সৈয়দ জাহিদ হাসান


শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসিত বঙ্গ ভূখণ্ডের এক লড়াকু সন্তান; হার না মানা, অপরাজেয় রাজনেতিক নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে যে ক’জন কিংবদন্তি নেতা শোষিত মানুষের পক্ষে আজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং দুঃসাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে পরাধীন স্বদেশকে স্বাধীন করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ফিরে পায় তাদের পরিপূর্ণ অধিকার। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাঁকে ভূষিত করে ‘জাতির পিতা’ অভিধায়। তিনি ছিলেন চিরশোষিত বাংলার অকৃত্রিম সুহৃদ। তাই তাঁর আরেক উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’। মাত্র পঞ্চান্ন বছরের জীবনকালে পৃথিবীর আর কোনো বরেণ্য নেতা শেখ মুজিবের মতো এত সম্মানিত বিশেষণে ভূষিত হননি। তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিও তার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে বিন্দু পরিমাণ কার্পণ্য করেনি।

শেখ মুজিবের চরিত্র অসংখ্য অনুপম গুণের সমাবেশে গঠিত হয়েছিল। একজন দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তিনি যতটা বড় ছিলেন তারচেয়েও বড় ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে। পরোপকারী মনোবৃত্তি, পরদুঃখে কাতরতা, সততা, সাহস, নিষ্ঠা, অনমনীয়তা, নির্ভীকতা, উদারতা, দূরদর্শিতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, দেশপ্রেম, সর্বোপরি বিশ্বমানবতাবোধ তাঁর চরিত্রের প্রধান অলংকার ছিল। তিনি হিংসা বুঝতেন না। তাঁর ঘাতককেও তিনি ক্ষমা করতে পারতেন। একজন সত্যিকারের বীরের সৌন্দর্য হলো ক্ষমা করার গুণ। এই বিশেষ ও মহৎ গুণটি শেখ মুজিবের চরিত্রকে করেছে মহান ও মহিমান্বিত।

কিভাবে শেখ মুজিবের চরিত্রে এতসব গুণের সমন্বয় ঘটেছিল? যদি এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয় তাহলে দেখা যাবে এর মূল কারণ ছিল শেখ মুজিবের দুর্নিবার গ্রন্থপ্রীতি। তিনি ছিলেন সর্বগ্রাসী পাঠক। যখনই তিনি অবসর পেতেন তখনই তিনি বইয়ের বিচিত্র জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন। গ্রন্থপ্রীতি তাঁর চরিত্রে শৈশব থেকেই ছিল। শৈশবে সহপাঠীদের তিনি অনেক কিছুই দান করতেন (ভদ্র ভাষায় উপহার দিতেন) তার মধ্যে গ্রন্থদানের বিষয়টিও উল্লেখ আছে। বই কেবল শেখ মুজিবের মুক্ত জীবনেরই সঙ্গী ছিল এমন নয়। জেলবন্দি নিঃসঙ্গ জীবনেও বই ছিল তাঁর একমাত্র অবলম্বন। ২১ ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল থেকে বঙ্গবন্ধু একটি চিঠি লিখেছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। সেই চিঠিটি তৎকালীন সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেই ঐতিহাসিক চিঠির শেষ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে জেলের নিঃসঙ্গ জীবনে বইয়ের সান্নিধ্য পেতে বঙ্গবন্ধু কতটা উদগ্রীব থাকতেন। চিঠিতে আছে- ‘খধংঃ ঙপঃড়নবৎ যিবহ বি সবঃ রহ ঃযব উধপপধ ঈবহঃৎধষ ঔধরষ মধঃব, ুড়ঁ শরহফষু ঢ়ৎড়সরংবফ ঃড় ংবহফ ংড়সব নড়ড়শং ভড়ৎ সব. ও যধাব হড়ঃ ুবঃ ৎবপবরাবফ ধহু নড়ড়শ. ণড়ঁ ংযড়ঁষফ হড়ঃ ভড়ৎমবঃ ঃযধঃ ও ধস ধষড়হব ধহফ নড়ড়শং ধৎব ঃযব ড়হষু পড়সঢ়ধহরড়হ ড়ভ সরহব.’ [সূত্র : মোনায়েম সরকার : বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু, সংশোধিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১৪, পৃষ্ঠা : ৫৬]

শুধু গ্রন্থপ্রীতিই নয়। এই চিঠিতে শেখ মুজিবের কাব্যিকতা ও অটল সাহসিকতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। যেমন ‘ও শহড়,ি ঃযড়ংব যিড় ঢ়ৎবঢ়ধৎবফ ঃড় ফরব ভড়ৎ ধহু পধঁংব ধৎব ংবষফড়স ফবভবধঃবফ. এৎবধঃ ঃযরহমং ধৎব ধপযরবাবফ ঃযৎড়ঁময মৎবধঃ ংধপৎরভরপবং. অষষধয রং সড়ৎব ঢ়ড়বিৎভঁষ ঃযধহ ধহুনড়ফু বষংব, ধহফ ও ধিহঃ লঁংঃরপব ভৎড়স ঐরস.’ [সূত্র : প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ৫৬]

বঙ্গবন্ধুর পাঠ্যতালিকায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের গ্রন্থগুলোই ছিল প্রথম সারিতে। তাঁর পঠিত বইয়ের তালিকার একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মজা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি তথ্যবহুল লেখায়। সেই লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন- ‘ছয়-দফা দেয়ার পর অনেক সোনা-রুপার নৌকা, ৬-দফার প্রতীক প্রায় ২-৩ শত ভরি সোনা ছিল। এগুলো আমার ঘরের স্টিলের আলমিরায় রাখা ছিল। সব লুট করে নিয়ে যায়। যাক, ওসবের জন্য আফসোস নেই, আফসোস হলো বই। আব্বার কিছু বইপত্র, বহু পুরনা বই ছিল। বিশেষ করে জেলখানায় বই দিলে সেগুলো সেন্সর করে সিল মেরে দিত। ১৯৪৯ থেকে আব্বা যতবার জেলে গেছেন কয়েকখানা নির্দিষ্ট বই ছিল যা সব সময় আব্বার সঙ্গে থাকত। জেলখানার বই বেশিরভাগই জেল লাইব্রেরিতে দান করে দিতেন, কিন্তু আমার মা’র অনুরোধে এই বই কয়টা আব্বা কখনো দিতেন না, সঙ্গে নিয়ে আসতেন। তার মধ্যে রবীন্দ্র-রচনাবলী, শরৎচন্দ্র, নজরুলের রচনা, বার্নাড শ’র কয়েকটা বইতে সেন্সর করার সিল দেয়া ছিল। জেলে কিছু পাঠালে সেন্সর করা হয়, অনুসন্ধান করা হয়, তারপর পাস হয়ে গেলে সিল মারা হয়। পরপর আব্বা কতবার জেলে গেলেন তার সিল এই বইগুলোতে ছিল। মা এই কয়টা বই খুব যতœ করে রাখতেন। আব্বা জেল থেকে ছাড়া পেলেই খোঁজ নিতেন বইগুলো এনেছেন কিনা। যদিও অনেক বই জেলে পাঠানো হতো। মা প্রচুর বই কিনতেন আর জেলে পাঠাতেন। নিউ মার্কেটে মা’র সঙ্গে আমরাও যেতাম। বই পছন্দ করতাম, নিজেরাও কিনতাম। সব সময়ই বইকেনা ও পড়ার একটা রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল। প্রচুর বই ছিল। সেই বইগুলো ওরা নষ্ট করে। বইয়ের প্রতি ওদের আক্রোশও কম না। আমার খুবই কষ্ট হয় ঐ বইগুলোর জন্য যা ঐতিহাসিক দলিল হয়ে ছিল, কিন্তু ১৯৭১ সালে সবই হারালাম।’ [সূত্র : শেখ হাসিনা : শেখ মুজিব আমার পিতা, আগামী প্রকাশনী, ২০১৪, পৃষ্ঠা : ৭০-৭১]

একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, শেখ মুজিব যাদের বা যা কিছু ভালোবাসতেন শেখ মুজিবের অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকাণ্ডের পরে তারা বা সেসব কিছুও মৃত্যুমুখে পতিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত প্রিয় জাতীয় চারনেতাকে। এমনকি ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বইগুলোও বুলেটের নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পায়নি। বঙ্গবন্ধুর দেহ যেভাবে ছাব্বিশটি বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল, তাঁর বইগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে শেখ হাসিনা সেই কথাটি লিখতেও ভুল করেননি। তিনি লিখেছেন- ‘এই বাড়িটি [৩২ নম্বরের বাড়ি] যখন ১২ জ্নু, ১৯৮১ সালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তার সাহেবের নির্দেশে খুলে দেয়া হলো তখন বাড়িটির গাছপালা বেড়ে জঙ্গল হয়ে আছে। মাকড়সার জাল, ঝুল, ধুলোবালি, পোকামাকড়ে ভরা। ঘরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন। গুলির আঘাতে লাইব্রেরি ঘরের দরজা ভাঙা, বইয়ের আলমারিতে গুলি, কাচ ভাঙা, বইগুলো বুলেটবিদ্ধ, কয়েকটা বইয়ের ভেতরে এখনো বুলেট রয়েছে। একটা বই, নাম ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’। বইটির ওপরে কবি নজরুলের ছবি। বইটির ভেতরে একখানা আলগা ছবি, একজন মুক্তিযোদ্ধার- বুলেটের আঘাতে বইটি ক্ষতবিক্ষত। মুক্তিযোদ্ধার ছবিটির বুকের ওপর গুলি। ঠিক ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে এ বাড়িতে যে আক্রমণ হয়, তাহলো ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ। বইটির দিকে তাকালে যেন সব পরিষ্কার হয়ে যায়। [প্রাগুক্ত : পৃষ্ঠা : ৭১-৭২]

বঙ্গবন্ধু যে প্রচুর লেখাপড়া করতেন তা তাঁর ভাষণ, বক্তৃতা, চিঠিপত্র আর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেই টের পাওয়া যায়। বিশেষ করে জেল থেকে তাঁর স্ত্রীকে লেখা চিঠিগুলোতে পরিবারের সদস্যদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি প্রায়শই খোঁজখবর নিতেন। পড়ার প্রতি তাঁর একটি অন্য রকম আবেগ ছিল। রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতাই তার কণ্ঠস্থ ছিল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি অপরাহ্নে স্বাধীন বাংলার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু প্রথম যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণেও তিনি উদ্ধৃত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার শেষ দুই পঙ্ক্তি- ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, / রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি।’

শুধু কবিগুরুকেই নয়, কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। ভারত থেকে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশে এনে তিনিই দিয়েছিলেন জাতীয় কবির মর্যাদা। শেখ মুজিব যখন জ্বালাময়ী ভাষণ দিতেন তখন তার শব্দ চয়নেও নজরুলের প্রভাব লক্ষ করা যায়। পৃথিবীর যে ক’জন রাষ্ট্রনায়ক গ্রন্থপ্রেমিক ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন শেখ মুজিব নিঃসন্দেহে তাঁদের অগ্রগণ্য। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, উইনস্টন চার্চিল, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, ফিদেল ক্যাস্ত্রো প্রমুখ নেতার গ্রন্থপ্রীতির কথা ও তাদের স্মরণীয় ভাষণ-বক্তৃতার কথা মহাকালের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে শেখ মুজিবও অমর হয়ে থাকবেন তার অপরিসীম গ্রন্থপ্রেম ও কাব্যিক ভাষণ-বক্তৃতার জন্য। কিন্তু আফসোস হয় বর্তমান রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দেখলে। ছাত্রত্ব ত্যাগ করার পর বেশিরভাগ নেতাকর্মীই (দুই-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া) গ্রন্থমুখী নয়। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদ স্যারের কথা মনে পড়ে যায়। ২০০৩ সালের কোনো একদিন দুপুরবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে ফুলার রোড ধরে হেঁটে দু’জন এসএম হলের দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় ছাত্রদলের এক অখ্যাত ছাত্রনেতা স্যারকে সালাম দিয়ে বলেন, ‘স্যার দেশ তো রসাতলে যাচ্ছে, এমন কিছু লেখেন যাতে দেশের মঙ্গল হয়।’ আজাদ স্যার তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দিলেন, ‘তোমার ম্যাডামকে জিজ্ঞেস ক’রো তো বিগত ছয় মাসে তিনি একটি বইও পড়েছেন কিনা? আমি কাদের জন্য লিখবো তোমার মতো মূর্খদের জন্য?’ সেই ছাত্রনেতা আর কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে চলে যান। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যাই।

হুমায়ুন আজাদ স্যার সেদিন ওই কথা কেন বলেছিলেন তখন তা না বুঝলেও আজ বুঝতে পারি। আমি শিক্ষক। পেশাগত কারণেই বই পাড়ায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করি। কখনো কোনো বইয়ের দোকানে এ দেশের কোনো বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। একুশের বইমেলায় মাঝে মাঝে বড় বড় নেতাদের দেখি বটে, তবে তারা বই কিনতে নয়, নিজের লেখা বই বিক্রি করতে আসেন। ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে আসেন। একুশের গ্রন্থমেলায় আসা নেতা-লেখকদের দেখে আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, উনারা যদি এত সুন্দর সুন্দর গ্রন্থরচনা করতে পারেন, তাহলে উনাদের কথাগুলো এত অশ্রাব্য আর অশুদ্ধ উচ্চারণে ভরা কেন? তাহলে কি এদের সবকিছুই লোক দেখানো- সবকিছুই ছদ্মবেশ? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু উঁচুমানের পাঠক আর বক্তাই ছিলেন না। তিনি সুদক্ষ বাচিকশিল্পীও ছিলেন। কোথায়, কোন কথা, কিভাবে বলতে হবে তিনি তা আগেভাগেই বুঝতেন। আর বুঝতেন বলেই তিনি স্বাধীনতা মহাকাব্যের ‘মহাকবি’, ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’। 

SUMMARY

2129-B11.jpg