চেতনায় স্বাধীনতা
১৯৪৭
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ১৮ই জুলাই ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একইসাথে বাংলার দুই প্রদেশ বিভক্ত হয়ে যায়। ‘পুর্ব বাংলা’ পাকিস্তানের এবং ‘পশ্চিম বাংলা’ ভারতের অংশে পরিণত হয়।
১৯৪৭
করাচীতে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এবং সরকার মিডিয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর একচেটিয়া ব্যবহার নিশ্চিত করবে। কিন্তু, পূর্ববাংলার জনগণ এই অন্যায় ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে এবং পরবর্তীতে এটি এক বিরাট আন্দোলনে রূপান্তরিত হয় ।
মার্চ ২১, ১৯৪৮
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় একটি জনসমাবেশে ঘোষণা দেন যে “উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা “। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহর সামনেই এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
ফেব্রুয়ারী ২১, ১৯৫২ – ভাষা আন্দোলন
১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান সরকার কর্তৃক উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষাভাষী বিপুল জনতাকে প্রতিবাদমুখর করে তোলে।ক্রমশ ফুঁসে উঠা এই প্রতিবাদকে রুখে দিতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরণের মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা এই অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মিছিল বের করে। মিছিনে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় এবং অনেকেি ভাষার জন্য শহীদ হন। এই ঘটনা পরবর্তীতে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
ফেব্রুয়ারী ২১, ১৯৫৩
১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরনীয় একটি দিন কারণ এই দিনে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং মর্যাদার সাথে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করা হয়।
মার্চ, ১৯৫৪
আওয়ামী লীগ পরিচালিত যুগ্ম ফ্রন্ট এবং কৃষক শ্রমিক পার্টি পূর্ববাংলা আইন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে। শেখ মুজিবকে এই সরকারের কৃষি মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। মুসলিম লীগ ৩১০ টির মধ্যে মাত্র ৯ টি আসনে জয়লাভ করে।
মে ৩০, ১৯৫৪
গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট সরকারকে গদিচূত্য করে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে।
অক্টোবর ১৪, ১৯৫৫
পূর্ববাংলার নাম বদলে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়। ‘পশ্চিম পাকিস্তান বিল’ পাস করা হয় এবং এই বিল অনুযায়ী পশ্চিম প্রাদেশিক এলাকা যেমন পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, সিন্ধু এবং পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে একত্রে ‘পশ্চিম পাকিস্তান’ নাম দেওয়া হয়।
ফেব্রুয়ারি ২৯, ১৯৫৬
সংবিধানে পাকিস্তানকে একটি ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিকে পাকিস্তানের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা্র দাবি জানায়।
সেপ্টেম্বর,১৯৫৬
চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে সরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মৌলবাদী রাজনীতিবিদ হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প, শ্রম, দুর্নীতি ও গ্রাম্য সহযোগিতামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
মার্চ, ১৯৫৭
গভর্নর জেনারেল গুরুমানি পশ্চিম পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি শাসনের ঘোষণা দেন।
অক্টোবর, ১৯৫৭
জাতীয় পরিষদে সমর্থন হারানোর পর হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। চুন্দ্রিগার পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঢ়িসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
ডিসেম্বর, ১৯৫৭
চুন্দ্রিগারের পরিবর্তে মালিক ফিরোজ খান নূন প্রধানমন্ত্রী হন।
সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮
পূর্ব পাকিস্তানের বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার শহীদ আলী মৃত্যুমুখে পতিত হন।এর দু’দিন আগে তিনি মন্ত্রীসভায় এক সমাবেশে গণ্ডগোলের সময় আহত হয়েছিলেন।
অক্টোবর ৭, ১৯৫৮
ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জাকে নির্বাসনে পাঠান এবং পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করেন। আইয়ুব খান তাঁর মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন যেখানে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খান এবং সিন্ধু থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো সহ আটজন বেসামরিক নাগরিকসহ তিনজন সামরিক কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণাসহ সভা এবং বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়ে। শেখ মুজিব, মাওলানা ভাসানী এবং আব্দুল গফর খানসহ জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের কারাবন্দী করা হয় অথবা তাদের কার্যক্রমের উপর কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হয়। শেখ মুজিবকে একের পর এক মিথ্যা মামলার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে হয়রানি করা শুরু হয়।
অক্টোবর, ১৯৫৯
রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা হস্তগত করার জন্য ” মৌলিক গণতন্ত্র ” অধ্যাদেশ জারি করেন ।
ফেব্রুয়ারী, ১৯৬০
আইয়ুব খান তার তথাকথিত ৮0,000 জন নির্বাচিত বেসিক ডেমোক্রেটসদের দ্বারা পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এপ্রিল, ১৯৬০
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২
পাবলিক সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে শেখ মুজিবকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।
জুন, ১৯৬২
আইয়ুব খান মার্শাল ল’ তুলে নেবার ঘোষণা দেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি প্রদানসসহ রাজনৈতিক দলগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। পাকিস্তান মুসলিম লীগকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয় – কাউন্সিল এবং কনভেনশন। আইয়ুব খান কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগ দেন।
১৯৬৪
পাকিস্তান যৌথ বিরোধী দল (সিওপি) গঠন করা হয় এবং আসন্ন ১৯৬৫ সালের জানুয়ারী মাসের নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মিস ফাতিমা জিন্নাহকে (মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন, “জাতির মাতা” নামে পরিচিত) মনোনীত করা হয়।. সিওপি নির্বাচন প্রক্রিয়ার পুনর্গঠন, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং ১৯৬২ সালের সংবিধানের গণতান্ত্রিকীকরণসহ ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে।
১৯৬৫
সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে শেখ মুজিবকে আদালত কর্তৃক এক বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, হাইকোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি পান।
জানুয়ারী, ১৯৬৫
বেসিক ডেমোক্র্যাসির অধীনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ফাতিমা জিন্নাহকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য আবারও রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আইয়ুব খান।
আগস্ট-সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে ২য় বারের মতো যুদ্ধ শুরু হয় যা শুরুতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জনগণের কাছে গোপন রেখেছিল। সেপ্টেম্বর মাসে আইয়ুব খান প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, “আমরা যুদ্ধ করছি”।
ডিসেম্বর, ১৯৬৫
আইয়ুব খান নূরুল আমিনকে পাকিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত করেন। এরপর নূরুল আমিন পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনসহ বৈদেশিক মুদ্রার ন্যায্য ভাগ এবং দুটি প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য দূর করার দাবি উত্থাপন করেন।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬
শেখ মুজিব রহমানকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের সামনে ছয়দফা দাবি উত্থাপন করে।
মার্চ ২৩, ১৯৬৬
ছয় দফা দাবি
আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন দাবি করে। এই পরিবর্তনগুলি মুজিবের ছয় দাবিতে তুলে ধরা হয় যা তিনি ১৯৬৬ সালে লাহোরে একটি বিরোধী দলীয় সভায় উপস্থাপন করেন।
এই ছয়দফা দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পথপ্রদর্শনকারী নীতিমালা যা পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের একচেটিয়া শাসন হ্রাস করবে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা, বিশেষত সামরিক শাসনের সমর্থকবৃন্দ এই ঘোষণাকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলে আখ্যা দেয় এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মার্চ ২৪, ১৯৬৬
রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ছয়দফার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এগুলোকে বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবি বলে আখ্যা দেন। তার সরকার ছয়দফা দাবিকে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের ষড়যন্ত্র হিসেবে মূল্যায়িত করে।
এপ্রিল ২৮, ১৯৬৬
বামফ্রন্ট ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) ছয়দফাকে যথেষ্ট সমর্থন প্রদান করে এবং এটা ঘোষণা করেন যে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসনে নিশ্চিতকরণে ছয়দফা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ডিসেম্বর, ১৯৬৭
আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের কিছু সংখ্যক সরকারী কর্মকর্তা, অবসররপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের নামে এক উদ্ভট অভিযোগ তোলেন।তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে তার সাম্প্রতিক সফরের সময় এই অভিযুক্তরা তাকে হত্যার পরিকল্পনাসহ পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অভ্যুত্থানমূলক সরকার গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকা্রের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেবার নামে ৫০ থেকে ৬০ জন বাঙালিকে গ্রেফতার করে।
জানুয়ারী, ১৯৬৮
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগে শেখ মুজিবকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।এই মামলাটি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে শাসক শ্রেণির বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করে এবং তারা বিশ্বাস করা শুরু করে যে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সামরিক শাসন পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রকার শোষণ অব্যাহত রাখবে, তারা এই অঞ্চলে কোন আর্থিক অনুদান কিংবা বাঙালিদের প্রতি কোন সম্মান প্রদান করবেনা সকল প্রকার ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কুক্ষিগত করে রাখবে।
আগস্ট, ১৯৬৮
পূর্ব পাকিস্তানে অভিযুক্ত আসামীদের বিচারকার্য জিওপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। পাকিস্তান সরকার ৩৬ জন রাজনীতিবিদ, বেঙ্গল সিএসপি অফিসার এবং প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, কিন্তু সরকারপক্ষীয় সাক্ষী আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং দাবি করেন যে সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা তাকে নির্যাতন ও মৃত্যুর হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে।
নভেম্বর, ১৯৬৮
সেই সময়ে প্রকাশিত অর্থনৈতিক রিপোর্ট পাকিস্তানের দুই প্রদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনে আওয়ামী লীগের ছয়দফা দাবি আরও গভীরভাবে প্রোথিত হয়।
জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯
সমগ্র পাকিস্তানে আইয়ুব খান এর সামরিক শাসনব্যবস্থা এবং পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ তুলে নেওয়া হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়।ঢাকায় পুলিশ আইয়ুব খানের শাসনে বিরুদ্ধে বের হওয়া মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এতে ছাত্র নেতা আসাদ এবং হাইস্কুল ছাত্র মতিউর রহমান শহীদ হয়। এই ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বীজ বপন করে।
ফেব্রুয়ারী ১৫, ১৯৬৯
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজন সার্জেন্ট জহুরুল হক সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা কারাবন্দী অবস্থায় ঢাকা সেনানিবাসে খুন হন। পূর্ব পাকিস্তানে এই ঘটনার প্রতিবাদে গণবিদ্রোহে শুরু হয়।
ফেব্রুয়ারি ২০, ১৯৬৯
সিআইএ’র রিপোর্ট অনুযায়ী আইয়ুব খানের জনপ্রিয়তা প্রায় তলানীতে গিয়ে ঠেকে। তার রাজনৈতিক দল, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএলএল)কখনোই একটি কার্যকর সংস্থা হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। এটি কার্যত ভেঙে পড়েছে বলে মনে করা হয় এবং তারা (সিআইএ) বিশ্বাস করতে শুরু করে যে পাকিস্তান পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
মার্চ ১৩, ১৯৬৯
পূর্ব পাকিস্তানে ফেডারেশন সফল করার জন্য গোল টেবিল বৈঠকে শেখ মুজিব আবার পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেন।
মার্চ ২৫, ১৯৬৯
জেনারেল ইয়াহিয়া খান একটি গোপন অভ্যুত্থানের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং আইয়ুব খানকে ক্ষমতা হস্তান্তরের ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
মার্চ ৩১, ১৯৬৯
জেনারেল ইয়াহিয়া খান অবিলম্বে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন। ৩১ শে মার্চ তিনি নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেন।
এপ্রিল ১১, ১৯৬৯
পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে রয় ফক্স শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথা বলেন। মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ এবং সামরিক শাসকদের পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার জন্য বাঙালীদের দাবি উপলব্ধি করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়েছ বলেন যে তিনি এখনও এক পাকিস্তানে থাকতে চান, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ও সামরিক শাসন এটি উপলব্ধি করতে পারেনি। এমনকি তারা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করে।
নভেম্বর ৭, ১৯৬৯
বাঙালিরা অভিযোগ তোলে যে জিওপি দুটি প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য সংকোচনের কোন চেষ্টাই করেনি।
নভেম্বর ২৮, ১৯৬৯
ইয়াহিয়া তার ভাষণে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
ডিসেম্বর ৫, ১৯৬৯
এক আলোচনা সভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলা দেশ বলে ঘোষণা করেন।
ডিসেম্বর ৮, ১৯৬৯
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি কোনায় পূর্ব পাকিস্তানকে বাঙ্গলাদেশর নামকরণের জন্য শেখ মুজিবের দাবির প্রশংসা করা হয়। তাদের মধ্যে, ন্যাপের প্রধান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এই দাবিকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন যে পূর্ব পাকিস্তান নামটি জোরপূর্বক বাঙালি জাতির উপর আরোপিত করা হয়েছিল।
ডিসেম্বর ৭, ১৯৭০
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করা সত্ত্বেও পিপিপি শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করে।
১৯৭০ সালে, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানকে প্রদত্ত ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পায় আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পরিষদে ৩১৩ টি আসন পায় যা আওয়ামী লীগকে একটি সরকার গঠনের সাংবিধানিক অধিকার প্রদান করে।
এই নির্বাচনের পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ২৭৯ টি আসনের ২৬৮ টি আসনে বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। কিন্তু, পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে।তার পরিবর্তে, তিনি দুটি উইংয়ের জন্য আলাদা আলাদা দুটি প্রধানমান্ত্রীর ধারণা প্রস্তাব করেন। এটি বাংলাদেশের জনমনে ক্ষোভের আগুনকে পুনরায় প্রজ্জ্বলিত করে।