সাঈদুল আরেফীন
শৈশব থেকেই ‘খোকা’ গ্রামের মানুষের হাসি-কান্না,সুখ-দুঃখকে ছবির মতো করে এঁকে ফেলতেন নিজের মধ্যে। গ্রামের মাটি ও মানুষের নানা কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন সারাবেলা। গ্রামের হিন্দু মুসলমানদের বিপদ আপদে ছুটে যেতেন অনায়াসে। ছোটবেলা থেকেই দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে ‘খোকা’ হয়ে ওঠেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সংগ্রামের নায়ক। তিনিই আমাদের বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু নামেই যাকে আমরা চিনি। সহজেই বুঝে নিতে পারি তিনিই বাংলাদেশের মহান পুরুষ। সুন্দর একটা ইতিহাস যার নামে তৈরি হতে পারে। দেশের লাল সবুজ পতাকার সাথে যার আমৃত্যু ভালোবাসা। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারে মন প্রাণ উজাড় করে এরকম দ্বিতীয় বাঙালি মানুষটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছো, আমি কার কথা বলতে চাইছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলছি। প্রতিবছরের মতো এবারও তোমাদের মতো কচি কচি সোনামণিদের জন্য ফিরে এসেছে ১৭ ই মার্চ। যে দিনটি এখন আমাদের জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধু নিজেও একদিন শিশু ছিলো। শিশুর সারল্যমাখা মন ছিলো তাঁর সারাজীবনই। তিনি শিশুদের ভালোবাসতেন, আদর করতেন শিশুদের সাথে মিশে যেতেন অকৃত্রিম মায়ামমতায়। বঙ্গবন্ধু যখন তোমাদের মতো ছোট্ট শিশু ছিলো তখনই দুষ্টুমি আর হৈ চৈ এর মধ্য দিয়ে মাতিয়ে রাখতো তাঁরই জন্মস’ান টুঙ্গিপাড়াকে। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভাইগার নদী। সেই নদীতে সাঁতার কেটে বঙ্গবন্ধু মুজিবের শিশুবেলার কতো স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। কে জানতো সেই সবুজ শ্যামল গাঁয়ের বুক আলো করে ১৯২০ সালেরই একদিন মানে ১৭ মার্চ জগৎজোড়া খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব জন্ম নেবে? বাবা শেখ লুৎফুর রহমান মা সাহেরা খাতুনের তৃতীয় সন্তান বঙ্গবন্ধু।
বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে শিশুদের জন্য সঠিক কাজটি করেছেন। ছোট্টবন্ধুরা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী পাঠে তোমরা দেখতে পাবে তিনি নিজে শিশু হয়ে অপর শিশুদের কেবল ভালোই বাসতেন না। সব শিশুদের নানা ভাবে উপকারে আসার চেষ্টায় তিনি ব্যস্ত থাকতেন। নিজ উদ্যোগে গ্রামের অনেক শিশু-কিশোরদের বর্ষাকালে স্কুলে আসার জন্য ছাতা কিনে দিতেন। নিজ বাড়ির ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ছোট ছোট বন্ধুদের বই কিনে দিতেন। এই ই হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের স’পতি জাতির জনকের পরিচয়। ছোট্টবন্ধুরা বুঝতেই পারছো, শিশু কিশোর জোয়ান বুড়ো সবার সুখে সুখী আর দুঃখী হওয়াটাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বভাবতজাত বিষয়। বঙ্গবন্ধু জীবনের পুরোটা সময় বাঙালি জাতির জন্য নিবেদন করেছেন। দেশের মানুষের কল্যানের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের জীবনের মূল্যবান ১৪ টি বছর কারাগারে বিলিয়ে দেন অকাতরে। বাংলাদেশের মুক্তির জন্যে,স্বাধীনতা লাভের প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে যে মানুষটি কোনদিন আপোষ করেননি। বঙ্গবন্ধুর কীর্তির কোন শেষ নেই।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম কোন রাষ্ট্রপ্রধান জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। তার চাইতেও বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে অমর করে রাখবে স্বাধীন বাংলাদেশের স’পতি হিসেবে।
ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসার স্বপ্নময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই হবেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা। ৭ বছর বয়সে টুঙ্গীপাড়ার গিমাডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে বি এ পাশ করে ক্ষান্ত হননি। ওই কলেজেরই সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হয়েছিলেন। মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে শত যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে দ্বিধা করেননি। গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সারাজীবন কম জেল জুলুম ও নির্যাতন সইতে হয়নি বঙ্গবন্ধুকে। তোমরা যারা আজকের শিশু খুব ভালোভাবেই শুনছো ও জানছো, ১৯৭১ সালে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেযা পৃথিবীর সেরা ভাষণগুলোর অন্যতম। সেই সময়ে প্রায় দশ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিলো। এমনই জনসমুদ্রে অনর্গল ভাষণ দিয়ে বজ্রকণ্ঠের সাহসী উচ্চারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আর স্বাধীনতার মূল ঘোষণাটি দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। হঠাৎ করে একদিনে বঙ্গবন্ধু এই ধরণের ভাষণ দেননি। এজন্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুন্দরতম সময়গুলো বিলিয়ে দিয়েছেন। অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে এই মহান নেতার নির্দেশে আমরা বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ড ও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা অর্জন করেছি। ছোট্ট বন্ধুরা চলো আজ এই মহান নেতার জন্মদিনকে আমরা আলোকময় করে তুলি। তাঁর স্মৃতিময় জীবনের ইতিহাস পড়ি। প্রতিবছরের মতো চলো আমরা মর্যাদা সহকারে জাতীয় শিশুদিবস উদযাপনের শপথ গ্রহণ করি। তাহলেই বাঙালি হিসেবে আমরা এই মহান পুরুষের প্রতি আমাদের ঋণ একটু একটু করে শোধ করতে পারবো।