উন্নয়নে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর শাসনামল


১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ১১ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে ধীরে ধীরে একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার কাজ।
একটি দেশ স্বাধীন হবার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় সে দেশ থেকে বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার ছিলো একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞায় এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই ১৯৭২ এর ১২ই মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।
এছাড়া ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী ১ কোটি শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ ৩ কোটি ঘরছাড়া মানুষের পুনর্বাসন করা হয়।
১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদনের মাধ্যমে একটি লিখিত সংবিধানের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ এর ১৬ই ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হয়।

-ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শিল্প কারখানা রক্ষায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ জাতীয়করণ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এর ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শিল্প-কলকারখানা আবার চালু হয়। ব্যাংক, বীমা জাতীয়করণের ফলে গতি সঞ্চারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রথম *এক বছরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ২৮৭টি সেতুর মধ্যে ২৬২টি, ২৭৪টি সড়ক সেতুর মধ্যেথ ১৭০টির মেরামত* শেষ হয়। দশ কোটি টাকা ব্যয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃনির্মাণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬শে জুলাই ড: মুহাম্মদ কুদরত-এ-খুদাকে সভাপতি করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশন ১৯৭৪ সালের মে মাসে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করে।
শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছিল ব্যাপক কর্মসূচি। এর মধ্যে ছিলো ৪০ হাজার অশ্বশক্তি চালিত লো লিফট পাম্প, ২৯০০টি গভীর নলকূপ ও ৩০০০ অগভীর নলকূপ। ১৯৭২ সালের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে বিনামূল্যে ১৬,১২৫ টন ধান বীজ, ৪৫৪ টন পাট বীজ এবং ১০৩৭ টন গম বীজ সরবরাহ করা হয়। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরতরে রহিত করা হয়।
স্বাধীনতা লাভের ১৫ মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান অনুসারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল অর্জন। ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বাদ আস্বাদন করে। সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে গঠিত সরকারের নেতৃত্বে শুরু হয় যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেতু, রেলপথ, কলকারখানা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার পুনঃনির্মাণ।
স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনিক কাঠামো, সচিবালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন, প্ল্যানিং কমিশন গঠন, সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকেও পুনর্গঠন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। থসেই সময়ের বিশ্ব শ্রেষ্ঠ মিগ২১ জংগি বিমান, আধুনিক রাডার বিমান বাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে ফ্রিতে আনেন।

বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হয়।
১৮ই এপ্রিল ১৯৭২ বাংলাদেশ কমনওয়েলথ- এর সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু করে।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করা হয়। একই বছর ইসলামি ঐক্য সংস্থার (ওআইসি) সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি অর্জন করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৪২টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করা হয়।
১৯৭৪ পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের প্রাথমিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করেন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ভোরে সেনাবাহিনীর একটি বিচ্ছিন্ন অংশকে নিয়ে খুনী মোশতাক-রশিদ-ফারুক চক্রের বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর খুনী মোশতাককে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা, সামরিক আইন জারি, জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি এবং ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থমুক্তি যুদ্ধে নেত্রিত দেওয়াথ জাতীয় চার নেতাকে বিচার বহিরভুতথ হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে শুরু হয় ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। নষ্ট হয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের গতিধারা।

SUMMARY

2104-1.png