বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে কারাগারে কাটানোর সময় ব্যবহার করা বঙ্গবন্ধুর নানা সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে আছে তার ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল, খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, নামাজের চৌকি, জায়নামাজ, অজু করার ঘটি, ময়না পাখির খাঁচা, বিছানাপত্র, খাবারের টিনের থালা, কাপ-পিরিচ, পড়াশোনার ছোট্ট কাঠের টেবিল, কাপড়, চুলা ইত্যাদি
পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান সরকারের সময় দীর্ঘকাল এ কারাগারে তিনি বন্দি থেকেছেন। এছাড়া এ কারাগারের ভেতরেই বন্দি অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট চার সংগঠক, জাতীয় নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। তাদের এ স্মৃতি ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মকে জানাতে এই কারাগারে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। এছাড়া ২২৮ বছরের পুরনো সাবেক এ কারাগারে বাংলাদেশের নানা ইতিহাসের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর হওয়ার পর পুরনো এ ঢাকা কারাগারের ভেতরের জাদুঘর দুইটি ও কারাগার প্রাঙ্গণ ২০১৬ সালের নভেম্বরে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছিল বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ওপর বিশেষ প্রদর্শনী। ১০০ টাকার টিকিট কেটে সে প্রদর্শনী দেখার সুযোগ পেয়েছিল সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে কারাগারে কাটানোর সময় ব্যবহার করা বঙ্গবন্ধুর নানা সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে আছে তার ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল, খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, নামাজের চৌকি, জায়নামাজ, অজু করার ঘটি, ময়না পাখির খাঁচা, বিছানাপত্র, খাবারের টিনের থালা, কাপ-পিরিচ, পড়াশোনার ছোট্ট কাঠের টেবিল, কাপড়, চুলা ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধুর জীবনী জানতে এখানে একটি গ্রন্থাগারও আছে। বঙ্গবন্ধুর গোসল করার ঘর ও রান্নাঘরটিও সংরক্ষিত আছে এ জাদুঘরের অভ্যন্তরে। এছাড়া জাদুঘরের সামনে রক্ষিত আছে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি। আর কারাগারের অভ্যন্তরে আছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপণ করা কামিনী গাছ।
জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরের সামনে আছে চার নেতার আবক্ষ ভাস্কর্য। প্রত্যেকের ভাস্কর্যের নিচে তাদের রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের বিবরণ আছে। চার নেতাই বন্দি ছিলেন আলাদা আলাদা কক্ষে। প্রতিটি কক্ষেই সংরক্ষিত আছে তাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী। এছাড়া ঘাতকদের ছোড়া গুলির চিহ্ন আছে কক্ষের জানালার রডে।
মোগল সুবাদার ইব্রাহিম খান ঢাকার বর্তমান চকবাজারে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে দুর্গটি ঢাকার নায়েবে নাজিমের আবাসস্থল ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ১৭৮৮ সালে দুর্গের অভ্যন্তরে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত দুর্গটিকে কারাগারে রূপান্তর করা হয়। এর ভূমির পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৭৬ একর। বেঙ্গল জেল কোডে যে কয়টি কারাগারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার অন্যতম। প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে ও বন্দি সংখ্যার আধিক্য বিবেচনায় সাবেক এ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কারাগার ছিল।