১৯৫০ সালের১৬ ফেব্রুয়ারি :জেলে বঙ্গবন্ধুর অনশন শুরু



সাতচল্লিশের দেশভাগের পর পাক সরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে অনেককেই গ্রেপ্তার করেছিলো। ১৯৫০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা আইনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী হিসেবে আটক ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুশলিম লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ও বরিশাল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ। ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে এসব রাজবন্দীমুক্তির ব্যাপারেও আন্দোলন গড়ে উঠছিল। 
এসময় পূর্ববঙ্গ বিধান-পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আবেদন করেন। আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব, পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান খান, মওলানা রাগিব আহসান, সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হাসান ইকবালসহ আরো অনেকে।
কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন। সরকারের নির্দেশে ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ফরিদুপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙতে গেলে পুলিশ গুলিতে ক'জন শহীদ হন। ঢাকার পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২৩ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করার কথা জানিয়ে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। তিনি বার্তায় উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকার প্রয়োজন আছে।’
১৯৫২ সালের ৫ মার্চ এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। জনাব রহমান ১৯৫০ সালে নিরাপত্তা আইনে বন্দী হন। কয়েকমাস যাবৎ তিনি হৃদরোগে ভুগিতেছিলেন। কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে কিন্তু সরকার টাকার অজুহাতে তাকে পুনরায় জেলে প্রেরণ করে।' 
ওই প্রতিবেদন আরো বলা হয়, 'কারা প্রাচীরের অন্তরালে তিলে তিলে জীবন বিসর্জন দেওয়া অপেক্ষা আমরণ অনশন শ্রেয় মনে করিয়া মি. রহমান বিগত ১৬ ফেব্রুয়ারি হইতে অনশন শুরু করেন। দেশময় ইহার দারুণ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিয়া সরকার জনাব রহমানকে মুক্তি দিয়াছেন।’

SUMMARY

2087-1.gif