১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে আমরা পরাধীন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবিনামা পেশ করেন। ৬ দফা ছিল বাঙালির স্বাধীনতার সোপান, বাঙালির মুক্তির সনদ। ৬ দফা দাবিনামা পেশ করার কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। তবে গ্রেফতার হবার আগেই বঙ্গবন্ধু ৬ দফার পক্ষে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে ৩৩ জন বাঙালির বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। মামলার কার্যক্রম যখন শেষ পর্যায়ে তখনই বাঙালিরা বুঝতে পারে যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে। আর তাই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনতা বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ২০ লাখ ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট পেয়ে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয় সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া জাতীয় সংসদের পূর্ব নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করলে সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলে ওঠে। ৭ মার্চ লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন। বক্তৃতার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু বললেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এ ভাষণটি আমি শত শতবার শুনেছি। এ কে খন্দকার কোথায় পেলেন যে বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বলে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন? বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে রক্ষিত আছে। এ কে খন্দকার ‘জয় পাকিস্তান’ কীভাবে আবিষ্কার করলেন? স্বাধীনতার বয়স এখন ৪৩ বছর। এই ৪৩ বছরে এত বড় মিথ্যাচার আর কেউ করেন নাই। এ কে খন্দকার মিথ্যাচার করেছেন যে তাজউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধু কোনো দিক নির্দেশনা দেন নাই। তাহলে সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতার যে সনদটি তৈরি করেছেন যেখানে উল্লেখ করা আছে—বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এই সনদটি তো আমাদের সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন—এ কে খন্দকার এত বড় মিথ্যাচার করেছেন কার স্বার্থে? বঙ্গবন্ধু সবসময়ই বাঙালিদের হূদয়ে ছিলেন এবং আছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করতে চান, যারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিকৃত করতে চান, যারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রেরণার উত্স বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
n লেখক : ব্যাংকার ও সাবেক ছাত্রনেতা