পুঁজিবাদী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের যুগে জন্ম বাংলাদেশের, যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো গোটা বিশ্ব। এমন দুরূহ বাস্তবতায় নতুন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক দর্শন ও কৌশল নির্ধারণ ছিলো কঠিন। রাজনীতির কবি হিসেবে খ্যাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে জটিল বাস্তবতার ভেতরেও দ্রুত দেশের কূটনীতির ভিত রচনা করেন, যা ধ্বংস করা হয় ১৯৭৫-এ তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে।
১৯৭১ সাল। বিশ্বের বুকে আঁকা হলো নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানচিত্র, যা সাড়ে সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগের ফসল। বাংলাদেশ স্বাধীন হোক সেটা চায়নি সে-সময়ের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, তৎকালীন আরেক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন।
পুঁজিবাদী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের যুগে জন্ম বাংলাদেশের, যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো গোটা বিশ্ব। এই দু ধারার বিভক্তির বাইরেও ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বন্ধু হিসেবে মুসলমান-প্রধান দেশগুলোতেও তৈরি হয় আরেক বিভক্তি। এমন দুরূহ বাস্তবতায় নতুন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক দর্শন ও কৌশল নির্ধারণ ছিলো কঠিন। রাজনীতির কবি হিসেবে খ্যাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে জটিল বাস্তবতার ভেতরেও দ্রুত দেশের কূটনীতির ভিত রচনা করেন, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ১৯৭৫-এ তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে।
নানান জটিল কূটনৈতিক অঙ্কের ভেতর স্বাধীন হবার পর পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশল নির্ধারণ ছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্য এক দারুণ কঠিন কাজ। এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক সচিব ও অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি এবং সমাজতান্ত্রিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু যেটার সূচনা করলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭৫ সালে তাঁকে হত্যা করে সেই নীতির মৃত্যু ঘটানো হয়।”
স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও ইতিহাসবিদরা গর্বের সাথে বলেন, কোনো যুদ্ধে ভিনদেশি সৈন্যের সহায়তা নেবার পর তাদের ফেরত পাঠানো একটি দুরূহ ব্যাপার হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে নজিরবিহীন জাদুকরি ইতিহাস হিসেবে দেখেন বিশ্লেষকরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব মোহাম্মদ জমির বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধিকে বলেছিলেন, আপনারা আমাদের সাহায্য করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তবে ওদেরকে এখন আপনি ফেরত নিয়ে যান।”
১৯৭৫-এ নির্মমভাবে নিহত হবার আগে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এত অল্প সময়েও তাঁর কূটনৈতিক অর্জনকে অনেক বড় করে দেখেন পর্যবেক্ষকরা।
সাবেক জ্যেষ্ঠ ক’টনীতিক আমজাদুল হক বলেন, চার মাসের ভেতরে বঙ্গবন্ধু ৭৪টা দেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি এনেছিলেন।
‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’-- এই নীতি এবং নিজের মাথা উঁচু করে চলার কূটনীতির যে-দর্শনকে বঙ্গবন্ধু স্থায়ী রূপ দিতে চেয়েছিলেন, তাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের বুলেটে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর পঁচাত্তরের নতুন প্রেক্ষাপট আবারও কঠিন করে তোলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশল নির্ধারণের কাজটি, যাকে সহজ জায়গায় নিতে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা ।