এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক মহাপুরুষের জন্য উদগ্রীব ছিলেন। যিনি এসে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত করবেন। স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করার সুযোগ এনে দেবেন, স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন। কবিগুরু উদাত্ত কণ্ঠে আহŸান করেছিলেনÑ ‘জনগণ মন অধিনায়ক আসে...।’ না, সেই ভারত-ভাগ্য বিধাতার আবির্ভাব ঘটেনি সে সময়ে, যে অখÐ স্বদেশভূমির স্বাধীনতা এনে দেবে। তবে রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় আক্ষেপÑ ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি...’ এ ভাবনাটি খÐন করতে আবিভর্‚ত হলেন এক বাঙালি মহাপ্রাণ। জল-কাদায় ভেজা, নদী-হাওরে ঘেরা পূর্ববাংলার এক অজগ্রাম টুঙ্গিপাড়ার মৃত্তিকা থেকে উত্থিত হলেন তিনি। হয়তো এ মানুষটিই রবি ঠাকুরের সেই অনাগত অধিনায়কÑ অখÐ ভারতের মুক্তিদাতা হয়ে উঠতেন, যদি তাঁর জন্ম আরও ৫০ বছর আগে হতো। হয়তো হয়নি, কিন্তু তিনি যুগ যুগে শোষিত-লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিভ‚ হয়ে ওঠেন। জাতিকে উপহার দেন একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি হঠাৎ করে নেতা হয়ে ওঠেননি। মাটি-মানুষের নেতা হিসেবে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জেল-জুলুম নির্যাতন সয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে অবিচল রেখেছেন। কঠিন-বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। মৃত্যুকে নির্ভয়ে অতিক্রম করেছেন। দেশপ্রেম, সততা, সৎসাহস এবং জাদুকরি নেতৃত্বগুণে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সর্বশেষ জাতির পিতা হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু জীবনভর অন্যায়ের বিরুদ্ধে শোষণ-বঞ্চনা নিপীড়ন অবসানের লক্ষ্যে লড়াই করেছেন এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংগ্রাম করে এগিয়ে গেছেন জাতিমুক্তির পথে। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাধারা, চমৎকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং আপসহীন নেতৃত্ব, সৎসাহস তাকে মহান নেতা হিসেবে, বাঙালির ঘরে ঘরে মহানায়নক হিসেবে অনন্য এক উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর অনেক সংগ্রাম এবং ভাবনার ফসলই আজকের স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রÑ বাংলাদেশ।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোড়াপত্তন থেকে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি অধ্যায়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিলেন অসামান্য অবদানের মাধ্যমে। ধাপে ধাপে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম তিনি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন অপূর্ব বিচক্ষণতায়। তার নেতৃত্বে অদ্ভুত কারিশমা ছিল। ফলে আন্দোলন চ‚ড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে একজন নির্ভরযোগ্য কাÐারি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন যদি আজকের তরুণরা আন্তরিকভাবে চর্চা করেন, তাঁর জীবনের নানা অধ্যায় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যথার্থ বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়, তা হলে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
রেজাউল করিম খোকন
লেখক : সাহিত্যিক ও ব্যাংকার