‘বঙ্গবন্ধু আদর করে আমার বাবাকে সানু বলে ডাকতেন’


আফিয়া বেগম
।। টরন্টো, কানাডা থেকে ।।
‘পুলিশ স্টেশনে ভিড়, আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরে
সন্দিগ্ধ সৈনিক। সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের
শর্টগান রাইফেল, পিস্তল এবং কার্তুজ, যেন দরগার
স্বীকৃত মাণত; টেবিলে ফুলের মত মস্তানের হাত’…
২৪ শে মার্চ ১৯৭১। সকাল থেকে আমার বাবা অ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ও আওয়ামী লীগ-এর সিনিয়র নেতা মইজুদ্দিন সাহেব ও আরও কয়েকজন নেতা সহ বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসায় দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন। তখন ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম এর সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গাড়ি, ট্রেন কিছুই চলতে দেয়া হচ্ছিল না। তখন বঙ্গবন্ধু আমার বাবাকে বললেন, সানু (বাবাকে বঙ্গবন্ধু আদর করে সানু বলে ডাকতেন) তুমি মইজুদ্দিন সাহেবকে নিয়ে যে কোন প্রকারে চট্টগ্রাম যাও’…।
ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে ফোন দিলেন সাবেক মন্ত্রী ও নেতা জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী। তিনি বললেন, নেতা পাক হানাদার বাহিনীর বড় যুদ্ধ জাহাজ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, ‘জহুর তোমাদের যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে বন্দরে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাও’।
এই কথা বলার সাথে সাথে ফোন এর সকল লাইন বিছিন্ন হয়ে গেল। তখনি বঙ্গবন্ধু নেতাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাভাস দিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার আদেশ প্রদান করেন। তখন আমার বাবা টঙ্গিবাড়ি-মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের প্রাদেশিক পরিষদ-এর সদস্য ও বৃহত্তর ঢাকা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক।
২৫ মার্চের গভীর রাতে ঢাকার নিরীহ মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই কালো রাতে শত শত নিরস্ত্র মানুষ নিহত হন। আহত হয় কয়েক হাজার অসহায় মানুষ। ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জ সহ সব দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সকলের কান্নার শব্দ বাতাসে ভারি হয়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
পাক হানাদার বাহিনী, আলবদর, আলশামস, রাজাকার সব স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি একত্র হয়ে নীরিহ মানুষের উপর অত্যাচার শুরু করে। বাবা তখন কাউকে না বলে বাবার বন্ধু বর্তমান মাননীয় জ্বালানী মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ভাইয়ের বাবা এম পি হামিদুর রহমানকে সাথে নিয়ে সামরিক ট্রেনিং নেয়ার জন্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং করানোর জন্য নৌকা করে ভারতের ত্রিপুরার উদ্দেশে রওয়ানা হন।
লেখিকাঃ আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মী

SUMMARY

2010-B3.jpg