বঙ্গবন্ধু,
দেখ দেখ চেয়ে
তোমার এক ভক্ত
অনুরক্ত সঙ্গীহীন
দাঁড়িয়ে একাকী
তব সমাধি পাশে
অশ্রুসিক্ত নয়ণে।
বঙ্গবন্ধু,
তুমি কার জন্যে
দিয়ে গেলে প্রাণ
তুমি হলে তিরোধান
অকালে সব ফেলে
বাঙালা ও বাঙালির
এই বুঝি ছিল কপালে।
বঙ্গবন্ধু,
তোমার দীপ্ত পথচলা
যায় না তো কভু ভোলা
তাই তো আসি বার বার
তুমি ঘুমিয়ে আছ শান্তিতে
হে জনক বাঙালা ও বাঙালির
আমাদের করেছ বঙ্গবীর।
বঙ্গবন্ধু,
আজও সহসা শুনি বজ্রধ্বনি
সে কি শিহরণ দেহ মনে
জেগে উঠে ক্ষনে ক্ষনে
সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
রচিলে তুমি এক ইতিহাস
ঐতিহাসিক মার্চের ভাষণ।
বঙ্গবন্ধু,
তোমার নৌকা আজও চলে
মধুমতি ধানসিড়ি নদীর জলে
পাল তোলে সারা বেলা
কখন সবাই কখন একেলা
মাঝি গায় বাইয়া যাও রে–
’জানাইও পাও যদি বঙ্গবন্ধুরে’।
বঙ্গবন্ধু,
আঁখি দুটি আজ অশ্রুসজল
পদ্মা যমুনা বহে কল কল
ক্ষণিক সহসা হই বিহবল
যখন শুনি দিকে দিকে
তোমার নামের ধ্বনি প্রতিধ্বনি
প্রাণ ফিরে পাই তখনি।
বঙ্গবন্ধু,
তুমি তো নিশ্চয়ই দেখ সকলি
চোখ বুজলেই দেখি তুমি হাস
আমরাও হাসি ভিতরে ভিতরে
সে কি দুঃসহ ক্ষরণ অন্তরে অন্তরে
শুধু একবার দেখতে যদি এসে
তোমার মানুষেরে ভালোবেসে ভালোবেসে।
বঙ্গবন্ধু,
আজও আছে সেই দুষ্টচক্র
সংখ্যায় যদিও অতি নগন্য
কীর্তিকলাপ আগেরই মতো
সে কি খারাপ অতি জঘন্য
খুঁজে ফেরে কে তোমার ভক্ত
নির্বোধ, কে তোমার ভক্ত না।
বঙ্গবন্ধু,
আগেরই মতো ঘাপটি মেরে
শিরায় শিরায় থাকে শয়তান
কিছু কিছু আলবদর-রাজাকার
বুঝা যায় না ওরা যে কার
হায়েনার দল করে দল বদল
সকালে-বিকালে গভীর নিশীতে।
বঙ্গবন্ধু,
এখনো আছে জনাকয়েক
স্বাধীনতা বিরোধী চক্র
সে কি বেঈমান মোনাফেক
বিদ্রূপের হাসি হাসে
এই দেশে এই বেশে
আমরা সৈনিক অতন্দ্র প্রহরী
জেগে আছি ভয় নাহি করি।
বঙ্গবন্ধু,
তোমারই এক সিপাহশালার
অতি দক্ষ কুখ্যাত বর্ণচোরা
নিমেষে বদলায় কায়া চেহারা
সে কি তাজ্জব তার মন্ত্রীসভা
স্বাধীনতা বিরোধীরা সামনে বসা
সবাই চিনে, মারহাবা! মারহাবা!
বঙ্গবন্ধু,
তুমি আজ অন্তিম শয়নে
মনকে বুঝাই কেমন করে
আজও ফোটে গোলাপ বেলি
ফোটে রজনীগন্ধা জুঁই-চামেলী
আজও বহে দক্ষিনা বাতাস
মুখরিত হয় তোমার চারিপাশ।
বঙ্গবন্ধু,
তোমার দেশের সর্ষে ক্ষেতে
মৌমাছি গায় গুনগুনিয়ে
আম বাগানে আম্র পালি
কাঁঠালের মৌ মৌ ঘ্রাণ
জুড়ায় আজও বাঙালির প্রাণ।
বঙ্গবন্ধু,
তোমার জন্যে অনেক কেঁদেছি
কাঁদিতে চাই না যে আর
সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার
স্বপ্নের সোনার বাঙলা গড়বার
তোমার তনয়া বঙ্গকন্যা
কান্ডারী মোদের শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু,
তাজউদ্দিন সৈয়দ নজরুল
কামরুজ্জামান মনসুর আলী
তুমি চলে গেলে তাদের ফেলি
হুঙ্কারে তারা হলো কারাবন্দি
ঘাতকেরা তবু হলো না ক্ষান্ত
গুলিতে হলো ঝাঁঝরা প্রানান্ত।
বঙ্গবন্ধু,
সেই কম্বল চোর আজও জীবিত
করে ফন্দি – ফিকির অবিরত
চমকে যায় হঠাৎ হোঁচট খায়
যখন শুনে তোমার বজ্রধ্বনি
যায় বুঝি মীর জাফরের প্রাণ
ধরে বাহানা পূর্বের রূপ হায়েনা।
বঙ্গবন্ধু,
বাঙলার মাটি আগেরই মতো খাঁটি
কৃষক ফলায় মাঠে আজও সোনা
শিল্পের চাকা ঘুরছে ঘুরছে সর্বদা
শ্রমিক কেন যে পায় আঁধা আঁধা
দিন রাত খাটে তারা চব্বিশ ঘন্টা
পায় না তারা শুধু মালিকের মন্টা।
বঙ্গবন্ধু,
তুমি মহাকাশে রকেটের জ্বালানি
তুমি বিশ্ববিজয়ী বীরসেনানী
তুমি ছিলে থাকবেও বাঙলার ঘরে ঘরে
তোমার অমর কীর্তি ভুলিব কেমন করে
তুমি ছিলে জনতার থাকবেও আগামীতে
সাধ্য নেই যে কারো তোমাকে ভুলবার।
বঙ্গবন্ধু,
তোমায় সহসা যারা দিল না বাঁচতে
কেড়ে নিল অকালে তোমার প্রাণ
জনতার আদালত অবশেষে বসি
সব খুনিদের দিয়েছে আমরণ ফাঁসি
হেসো না বন্ধু! যত দিন বেঁচে রবো
তোমারই গান গেয়ে গেয়ে নিঃশ্বাস নিব।