হিমালয়ের উচ্চতা নিয়ে কেউ কি এই দুঃসময়ে
দাঁড়াবে পাশে সবুজ প্রান্তরকে ভালোবেসে?
আর কখনও কেউ কি দেবে বলিদান
নিঃশেষে নিজপ্রাণ?
তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলায়
সোনা হয় তামা-পড়ে ময়লা,
মাটি হয়ে যায় হীরকসম কয়লা।
আজকের বাংলার দুর্বৃত্তায়নের এই চূড়ান্ত উন্নয়নে
কতবার ঝাঁপসা হতো দুচোখ তোমার,
ঝাঁঝরা হতো অমল হৃদয়!
তোষকের লোলুপ জিভেরা
এখনও থাকে ক্ষমতার কাঁধ ছুঁয়ে
সময়ে তোষণ নয়, বিষও ছড়ায় শর্পিল ফণায়;
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত তোমার সুবর্ণ শিক্ষালয়ে
মেধা নয়, এখন লড়াই চলে হাতুড়ি-হেলমেট-চাপাতিতে
সকল বৈভব আজ ঢেকে গেছে কালো কোর্তায়।
তোমার আদলে সেজেছে যেসব ক্ষুদে সেনা
তারাই আজ দেশ ও দলান্ধের ভয়াবহ ভীষণ ত্রাতা!!
শ্বাপদসঙ্কুল তোমার এই বাংলায়
শিশু-নারী-যুবতীরা আজও ধর্ষিত হয়
দিনে-রাতে, পথে-প্রান্তরে, ঘরে-বাইরে,
অথচ, তুমিই ছিলে বীরাঙ্গনার বড় আশ্রয়!
এখন যৌবনে উপনীত যারা যুদ্ধে যায় না তারা,
প্রতিবাদহীন,মুক-বধির; স্থবিরতায় কাটে কাল।
নিদ্রাভূক নিখাদ ঘুমের অতলে নেশাতুর ডুবে থাকে,
জিঘাংসা-রিরংসায় জেগে থাকে লোভাতুর কিছু চোখ।
সাত কোটির বুকের পাঁজর ভেঙে
বত্রিশ এর দালানকোঠা ভেদ করে
সেদিন ছিনিয়ে নিয়েছিল আমাদের হৃৎপিণ্ড যারা,
রক্তাক্ত করেছিল আমাদের ভালোবাসার পতাকা
বলিষ্ঠ প্রতাপে এ মাটিতেই শেকড় গেঁড়েছে তারা।
আর আমরা দিয়েছি তাতে জল-ছায়া-মায়া!
আজকের এই বাংলায় ওরা বড্ড বেসামাল-বেপরোয়া
রক্তচোষা জোঁক ওরা।
এই জোঁকেরা তোমার হাড়ঝিরঝিরে
রহিমুদ্দির রক্ত চোষে, রেণুবালার সিঁথির সিঁদুর মোছে,
বোনের ইজ্জত বাজারে বিকায়!
এইসব ধূর্ত জোঁক, শৃগালেরা মিশে আছে
আমাদের রক্ত-মাংসে, অস্থি-মজ্জায়;
অথচ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমরা, আমরা দিশেহারা।
অস্থির আর অরাজকতার স্বর্গে বসে দিবাস্বপ্ন দেখি
একজন ‘তুমি’ কি আর আসবে ফিরে এই বাংলায়?
হিমালয়ের উচ্চতা নিয়ে কেউ কি এই দুঃসময়ে
দাঁড়াবে পাশে সবুজ প্রান্তরকে ভালোবেসে?
আর কখনও কেউ কি দেবে বলিদান
নিঃশেষে নিজপ্রাণ?
আমরা-
এই অ-রাজনীতিক, অ-আমলা, অ-দলবাজ অতি সাধারণেরা,
সম্ভ্রম হারানো, মৃত-অর্ধমৃত, হতদরিদ্র মা-বোন-কন্যারা
আজ উদ্ভ্রান্ত, দিকভ্রান্ত; পিতাহীন শোক আর শূন্যতায়!
পথ চেয়ে থাকি একজন 'বঙ্গবন্ধুর' প্রতীক্ষায়।
লেখক: টরন্টো, কানাডা প্রবাসী।