গোলাম সাদত জুয়েল ::
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেচে ছিলেন মাত্র ৫৫ বছর , কিন্তু তার ৫৫ বছর ছিল বর্নাট্য ও বৈচিত্রময় । দিয়েছেন একটি স্বাধীন রা্ষ্ট্র , তার কারনে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা । এ ক্ষনজন্মা আপাদমস্তক রাজনীতিবিদের জন্য আমাদের শ্রদ্বা ও ভালবাসা যুগ যুগ ধরে বহমান থাকবে । তার মত রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে তথা উপমহাদেশে জন্মাবে না , কতটা বিচক্ষন ছিলেন তিনি তার প্রমান পাওয়া যায় তার ৭ মার্চের ভাষনে, দেশবাসীকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যুদ্বের প্রস্তুতির । মাত্র ১৭ মিনিটের তার শেষ ভাষনে, স্বাধীন বাংলাদেশের একটি রুপরেখা তিনি জাতিকে উপহার দিয়েছিলৈন । ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি বাংলাদেশকে শুন্য থেকে শুরু করতে পেরেছিলেন, তা আজ গবেষনার বিষয় । একটি ধ্বংস প্রাপ্ত ও সদ্য ভুমিষ্ট দেশ গড়ে তুলা সহজ কথা নয় , তার পর দেশের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অস্ত্র , স্বাধীনতা বিরোধী , রাজাকার -আলবদার সকলকে হ্যান্ডেল করা খুব সহজ ছিল না । প্রতিটি অবকাঠামো নতুন করে তৈরী করা সহ একটি নতুন দেশ তার প্রতিটি বাহিনী ও স্টাকচারাল পটভুমি তৈরী করতে পেরেছিলেন তার রাজনৈতিক বিচক্ষনতায় । প্রাকৃতিকি দুর্যোগ ও তার চারপাশে দুনিতিীবাজদের কারনে হাপিয়ে উঠলেও তিনি থেমে যান নি । কম সময়ে অর্জন করতে সক্ষম হন বহি:বিশ্বের স্বীকৃতি । বাংলাদেশ যখন আস্তে আস্তে দাড়াতে শুরু করে ঠিক তখনি ছাত্রলীগের একাংশের জাসদ তৈরী করে দেশের ভেতর অস্তিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা তাকে ভাবিয়ে তুললেও বিচলিত করেনি । মুজিবুর রহমান তার দৃড় মনোবলে ভারতের ইন্দিরা গান্ধিকে বলে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারে সক্ষম হন । এ বিচক্ষন নেতার গুনাবলী লিখে শেষ করার নয় । ৭২ সালের ১০ জানুয়ারী থেকে ১৪ আগষ্ট সময়টা বঙ্গবন্ধুর জন্য সহজ ছিল না, সাড়ে তিন বছর তিনি পার করেছেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় । রাজনীতি করা ও ধবংস প্রাপ্ত দেশ নতুন করে তৈরী করা এক নয় । তারপর তার আশেপাশে ঘুরছিল তার জাত শত্রুরা যা তিনি কখনও জানতেও পারেন নি । তারমত বিচক্ষন নেতা কে দেশের ভেতরের বাংলাদেশী তথাকথিত রাজনীতিবিদরা বিভ্রান্ত করে তুলেছিল, তার সরলতায় অনেকে তার দেশ গঠনের কাজে নানা বাধার সৃষ্টি করে । নানা মতের না্না পথের সুত্রপাত ঘটে, তার প্রেক্ষিতে তিনি বাকশাল গঠন করেন । বাকশাল গঠনের পর তা আরও মারাত্বক আকার ধারন করে । জাসদ , সিরাজ সিকদার, পুর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি সহ অনেক নিষিদ্ধ সংগঠন দেশের ভেতর নানা অরাজকতা তৈরী করে । অপ্রিয় হলেও সত্য তার সরলতার কারনে তিনি সেনাবাহিনীর ভেতরের অনেক খবরই রাখতেন না । তাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির সামরিক অভিসাররা তাকে সরানোর ও মেরে ফেলার চিন্তা করে এবং তারা সফলও হয়ে যায় । যে পাকিস্তানী শাসক গোষ্টি মুজিবকে ভয় করত , তাকে অপমান করারও চিন্তা করতে পারতো না , সেই শেখ মুজিবকে বাংলাদেশী উচ্চাবিলাসী সামরিক অফিসাররা মেরে ফেলল । ১৫ আগষ্টের পর খুনিদের বিচার করা যাবে না , বলে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃনিত ইনডেমনিটি বিল পাশ করল । তারপর ইতিহাস আরও করুন শেখ মুজিব তথা আমাদের বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করল তারা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকুরী করল । মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে খুনিরা রাষ্ট্রদুত হিসাবে নানা দেশে দায়িত্ব পালন করল । আজ সময়েরে দাবী এ সবের রহস্য অনুসন্ধান হওয়া উচিত এবং সঠিক বিচার হওয়া উচিত । যারা ৭৫ এর পরবর্তি বেনিফিশিয়ারী তাদের সকলের বিচার সময়ের দাবী । আজও জাতির জনকের খুনিরা আজও দেশের বাইরে ঘুরে বেড়াচেছ , মুশতাকের পেতাত্বারা বিরদর্পে ঘুরছে । বিশ্বাস ঘাতক খন্দকার মুশতাক তার জগন্য বিশ্বাস ঘাতকতার কারনে জাতির কাছে জন ধিকৃত, তার পরিবারের সদস্যরা আজও বিব্রত । ইতিহাস কাউকে ক্ষমা কের না , মীরজাফরের মত মুশতাকের কবরের দিকে মানুষ করুনা ভরে তাকায় । শুধু বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকরা ১৫ আগষ্ট মেরে ফেলেনি রাতের আধারে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবার আত্বীয় স্বজনকে অনেকটা ঘুমন্ত অবস্তায় মেরে ফেলেছিল , যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক জগন্য নারকীয় হত্যাকান্ড হিসাবে পরিনত ।
বাংলাদেশের গনতন্ত্রের মানস কন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেরীতে হলেও ১৫ আগষ্টের বিচার করতে সক্ষম হয়েছেন । কিন্তু অনেক মৃত্যুদন্ড ও ফাসির আসামীরা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচেছ , তাদের দেশে এনে বিচার সম্পন্ন আজ সময়ের দাবী । শুধু একটি ১৫ আগষ্ট গঠিয়ে খুনিরা থেমে থাকেনি ৩ রা নভেম্বর জেল হত্যাকান্ড ঘটিয়ে জাতির ৪ অপরিহার্য নেতাদের হত্যা করে দেশকে এক গভীর সংকটে ফেলে দেয় । ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা ১৫ আগষ্ট ও ৩ রা নভেম্বরের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে পেছনে নিয়ে যায় পাশাপাশি নেতৃত্ব শুন্য করে ক্যান্টনমেন্টের উচ্চাভিলাসী জেনারেল রা ক্ষমতায় চলে আসে , বাংলাদেশটা চলে যায় বিপদগামী সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান ও এরশাদের হাতে । আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডর পর ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের পর অনেকটা অগোছালো হযে যায় , ঠিক তখন দলকে সংঘঠিত করতে লন্ডন থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে আনা হয় । আজ তিন দশক এর কিছু সময় বেশী সময় থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরল রেখায় চলছে নানা ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে । ক্ষনজন্মা বঙ্গবন্ধু হয়ত স্বশরীরে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না ঠিক কিন্তু তার স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দেরীতে হলেও বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে । আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের এক রোল মডেল , জাতির জনকের বাংলাদেশ আজ খা্দ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন । আজ বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি, আজ বিদ্যুত ঘরৈ ঘরে , কৃষককে সারের জন্য মারা যেতে হয় না । বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের অকাল মৃত্যুর জন্য তাদের বিদেহী আত্বার শান্তি কামনা করা ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে , ঘাতকরা একা বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলতে পারত তারা হত্যা করেছে তার পুরো বংশকে , ছোট্ শিশূ রাসেল পযন্ত বেচে থাকতে পারে নি । বাংলাদেশের কিছু উচ্চাবিলাশী সামরিক জান্তা ফারুক -ডালিম গংরা আজ ইতিহাসে নিক্ষেপিত হয়েছে , যারা ফারুক ডালিম কে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশে রাজনীতি করার ( ফ্রিডম পার্টি ) সুযোগ দিয়েছিল তাদের বিচার হওয়া উচিত । জিয়াউর রহমান , জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনা মলে এরা বাংলাদেশে অবস্তান করেছিল রাজনীতি করেছিল সকলের বিচার হওয়া উচিত । আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় ঘাতরা ফুলে ফেপে নানান আকার ধারন করেছিল । ফারুক ডালিমরা ফ্রিডম পার্টি করে নির্বাচন করে , দৈনিক জনতা পত্রিাক প্রকাশ করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে । কতটা নির্মম ও নিষ্টুর এ ঘটনা গুলো সাথে ছিল ইনডেমনিটি আইন নামক কালো আইন , যেটা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না লিখা ছিল । হায়রে বাংলাদেশের ইতিহাস , মানুষ সব ভুলে যায় । যে দেশ সৃষ্টি করল তাকে সপরিবারে হত্যা করে তার বিচার করা যাবে না , সেটাও জাতিকে মানতে হল । কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না , তাই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গনতন্ত্রের মানষকন্যা আজ সব হত্যাকান্ডের বিচার করছেন ।
আমরা আজ জাতির জনকের মৃত্যু বার্ষিকীতে আজ তার কাছে ও তার পরিবারের নিরীহ আত্বীয় স্বজন , ভাই বোন, ছেলে , ছেলের বউ , সহ শিশু রাসেল , যারা ৩২ নম্বরে সেদিন নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার হন তাদের কাছে বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে ক্ষমা চাচিছ । শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, অন্তসত্বা পুত্রবধু তারা কেউ রাজনীতি করতেন না , তাদের কোন দোষ ছেল না । কিন্তু তারা যুদ্বের সময় মারা যান নি মারা গেছেন স্বাধীন দেশে তাদের কাছে আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা , এ পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর শ্র্দ্বা । আর আমাদের জাতির পিতা যিনি তার জীবনের বেশীর ভাগ সময় জেলে কাটিয়েছেন , তার জীবন উ্যসর্গ করেছেন বাংলাদেশী জনগনের জন্য তার কাছ আমাদের গভীর শ্রদ্বা । বেগম ফজিলুতুন্নেছা মুজিব যিনি শেখ মুজিবের সহধর্মিনী তিনি তার জীবন সংসার সব উ্যসর্গ করেছিলেন আওয়ামী লীগ ও দেশের মানুষের জন্য তার অকাল মৃত্যুতে আমাদের গভীর শ্রদ্বা । আর দশটা সাধারন গৃহিনীর মত তার জীবন ছিল না, দলীয় নেতা কর্মি ও জাতির জনকের জেলে থাকা কালিন তিনি বৃহদাকার সংসার সামাল দিতেন তিনি , ছিলেন না রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট । তারপরও তাকে মৃত্যু বরন করতে হয়ে ঘাতকের বুলেটে ।
আজও আমেরিকার মত দেশে হঠাত করে কোন বৃদ্ব আমেরিকান বলে, ইউ ফ্রম মুজিব কান্ট্রি তখন বুক ভরে যায় খুশিতে । আমেরিকার শিকাগো শহরে সড়কের নাম “শেখ মুজিব ওয়ে ” , শেখ মুজিব আমাতের অহংকার । আমাদের একজন স্বপ্ন পুরুষ,যিনি পুব পাকিস্তানী ( বাংলাদেশী ) দের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের এবং তা সৃষ্টি করে জীবন উ্যসগ করে দিয়ে গেছেন । মাত্র ৫৫ বছর বয়সের এ ক্ষনজন্মা পুরুষ আমাদের স্বপ্ন কে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর ব্রত তাকে যুগ যুগ স্মরনীয় করে রাখবে । বাংলাদেশের মানুষ তাকে কিছু দিতে পারে নি , আজও আমাদের কোন বিমান বন্দর বা স্তায়ী স্তাপনা তার নামে নেই । আমেরিকায় জন এফ কেনেডির নামে যদি কোন বিমান বন্দর থাকতে পারে , তাহলে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তজাতিক বিমান বন্দর তৈরী সময়ের দাবী । বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি রাজধানী ঢাকায় স্তাপন করা যেতে পারে , অথবা শেখ মুজিবের নামে সিম্বলিক কিছু করার দাবী জানাচিছ । এ মহান নেতার উপর গবেষনা উপর বৃত্তি আন্তজাতিক পযায়ে ছড়িতে দিতে হবে । শেখ মুজিব কখনও মারা যায় না , শেখ মুজিব বেচে আছে ১৬ কোটির হ্রদয়ের আাঙ্গিনায় ।
গোলামা সাদত জুয়েল : সাংবাদিক -কলামিষ্ট