বঙ্গবন্ধুকে খোলা চিঠি -অনিন্দ্য টিটো


প্রিয় বঙ্গবন্ধু, 
বোধজ্ঞান না হতেই তোমার বুকের রক্তে সেদিন বয়ে গেল 
বুড়িগঙ্গা ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে। তোমাকে আর
বুঝার মত করে দেখা হল না! হল না বলা, না বলা কথা! 
হল না লেখা কোন চিঠি! আজ উত্তর চল্লিশে তোমাকে
লিখতে ইচ্ছে হল আকাশের ঠিকানায় একখানা খোলা চিঠি! 
যখন দেখছি, ঘাতকের বেজন্মা বংশধরেরা রক্তঝরা মার্চেও
রক্তাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়। শোকের আগস্টে দুঃসাহসে 
প্রাণ নিতে চায় দেশকন্যার! খুন হয় পিতা, ধর্ষিতা হয় পুত্রী!

প্রিয় জাতির পিতা, 
কেমন আছো! খবর কি পাও! কেমন আছে তোমার প্রিয় বাংলা!

Ad Space
তোমাকে যেদিন হত্যা করেছিল ঘাতকেরা! 
সেদিন সকালের নীলাকাশ ঢেকে গিয়েছিল ভয়ার্ত কালো মেঘে। 
বিচ্ছেদ যন্ত্রণায় ঝরে পড়েছিল কৃষ্ণচুড়া ফুলেরা ধূলির বুকে। 
মায়ের দু’চোখ ভরে উঠেছিল বেদনার অশ্রু-জলে, বাবার বুকে 
উঠেছিল সে-কী তীব্র ব্যথা। পাড়ায়-মহল্লায়, শহরে-বন্দরে,
চায়ের দোকানে, বাড়ির উঠোনে ছিল শুধু মানুষের আর্তনাদের জটলা। 
অপমানে ঘৃণায় আকাশ-মাটি, পাহাড়-নদী, ভিটেমাটি লুকিয়েছিল মুখ 
তোমার রক্তাক্ত দেহ-ছায়ায়। খুন করে দিল মানুষটাকে! 
লজ্জ্বা! লজ্জ্বা! হায় এ কী লজ্জ্বা! এ কী কলঙ্কমাখা লজ্জ্বা!

সেই ছেলেবেলা থেকে এখনও তোমার ছবিখানায় দেখি 
সুকঠিন ব্যক্তিত্বের মানুষটি কী সম্মোহনী চোখে চেয়ে আছে ! 
হাঁটা-চলা, কথা বলা, বসার রাজকীয় ভঙিমায় বরাবরই ছিলে 
তুমি সবার থেকে আলাদা। আর তেজোদীপ্ত সেই ভাষণ ! 
বুকে বাজে অবিরাম- ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, 
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ শুনতে শুনতে 
বিভোর হয়ে যাই। বিস্মিত হয়ে ভাবি, কী আশ্চর্য তেজে 
সেদিন সাত কোটি কণ্ঠের মুক্তির আবেগ মিশে গিয়েছিল 
একাকার হয়ে তোমার কণ্ঠস্বরে। অতঃপর মুক্তির জনসভায় 
মহাকবি তুমি শোনালে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার নতুন এক কবিতা! 
আশ্চর্য হই, সেদিন কী যাদুমন্ত্রে বাঙালির সমস্ত ভয়-ডর 
চুষে নিয়েছিল তোমার কালো কোট! দেখিয়েছিল ‘মেগনাকার্টা’। 
পিরহানের ছয় ভাঁজে বোতামে বুনেছিলে বাঙালির ছয় দফা!

এমন করে কি কেউ কোনদিন পেরেছিল জাগাতে 
নগর-বন্দর, গাঁও-গেরাম, ঝিমিয়ে থাকা আধমরা প্রাণ? 
শান্ত সাগরে তুলতে পেরেছিল মারণ তুফানে মুক্তির সংগ্রাম! 
এখনও কি কেউ পারে! তোমার মতো এমন করে 
পোড় খাওয়া বুকে জ্বালাতে আগুনের শিখা লেলিহান! 
টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া 
কেউ কী কখনও বলতে পেরেছে অধিকারের কথা, 
কখনও বলতে পেরেছে নির্ভয় মানুষের স্বাধীনতা।

তাই বলছি, ফিরে এসো পিতা, জন্মদিনে আরেকটিবার
একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, পনেরো আগস্ট আর 
ষোলই ডিসেম্বর অথবা প্রতিদিন প্রতিবার। 
তাকিয়ে দেখ তুমি একটিবার তোমার ফেরার 
জন্য অপেক্ষমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, 
স্মৃতিবিজরিত কৃষ্ণচূড়া, ষোল কোটি প্রাণ!

পথ চেয়ে আছে ছানিপরা চোখে ষাটোর্ধ রহিমা 
কর্ণফুলীর মাঝি, ব্রাহ্মণপাড়ার বৈষ্ণবী, বিধবা উমা! 
তবুও হায় পড়ে আছে তোমার খয়েরি রঙের পাইপ 
আর তোমার দুচোখ, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা।

ইতি- তোমারই বাংলাদেশ।

SUMMARY

1933-1.jpg