টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে


কামাল চৌধুরী

কবরের নির্জন প্রবাসে
তোমার আত্মার মাগফেরাতের জন্যে
যেসব বৃদ্ধেরা কাঁদে
আমাদের যেসব বোনেরা
পিতা, ভাই, সন্তানের মতো
তোমার পবিত্র নাম
ভালোবেসে হৃদয়ে রেখেছে
যেসব সাহসী লোক
বঙ্গোপসাগরের সব দুরন্ত মাঝির মতো
শোষিতের বৈঠা ধরে আছে
হে আমার স্বাধীনতার মহা স্থপতি
মহান প্রভুর নামে আমার শপথ
সেইসব বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথ
সেইসব ভাই বোন লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আমার শপথ
আমি প্রতিশোধ নেব
আমার রক্ত ও শ্রম দিয়ে
এই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখা
সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেব।

মাক্কুর মাটি ছেড়ে যে শ্রমিক এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে
কালো চামড়ায় তার অসহায় ঘামগুলো সাদা হয়ে আছে
আমি তার দেহ থেকে ক্লান্তিগুলো খুলে নিতে চাই
আমি তার দুই চোখ প্রশান্তির অশ্রুজল চাই।

তিন দিন খাইনি বলে যাবে আমি চিৎকার করতে দেখেছি
হাড্ডিসার সেই কৃষকের প্রতি আমার কামনা
আমার বিদ্রোহ যেন জন্মজন্মান্তরে তাকে ভাই বলে ডাকে।

যে-পথ নিয়েছি বেছে, জানি, সে-পথে তোরণ নেই
ফুল কিংবা জীবনের পুষ্পশয্যা নেই
সে-পথে রক্তের দাগ
মৃত্যু আর প্রলোভন মাখানো রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধের মতোন
তুমি হও আমাদের দুরন্ত প্রেরণা
আমি সব অতিক্রম করে
তোমার নৌকাকে নেব আকাঙ্ক্ষিত নদীর কিনারে।





মহান মানব ছিলে তুমি- দেবতা তো কখনো ছিলে না
দেবতা বানিয়ে যারা স্তুতি করেছে তোমার
জনসভা সেমিনারে বহুবার জীবন দিয়েছে
তোমার মৃত্যুর পরে
তারা কেউ আমাদের সাথে নেই আজ
সেবাদাসীদের মতো তারা সব ঘিরে আছে নতুন মনিব
হায়, এরকম অপকর্ম শুধু বুঝি বাঙালির সাজে।

তোমার নিকটে ছিল যারা সেইসব তোমার খুনিরা
তারা কি বাঙালি ছিল?
নাকি কোনো ষড়যন্ত্রী দেশের সেবক?
সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেদের বিকিয়েছে যারা
আমাদের ভাই নয় তারা
আমাদের জাতিসত্তা প্রেম আর ঐতিহ্যের হাজারো কাহিনী
ভুলে গিয়ে তারা সব বিদেশে সেবক হয়েছে!
আমার সমস্ত ঘৃণা থুথু আর বুকের আগুন
বাঙালি নামক সেই ঘৃণ্য সব খুনিদের প্রতি।

তীব্র প্রতিশোধ আমি ছুড়ে দেই খুনিদের মুখে
দ্যাখো, আগুন জ্বলছে আজ শুদ্ধ সব বাঙালির বুকে
এখন স্বদেশে চাই, শুধু চাই
তোমার সৈনিক কিছু সফল গোলাপ।

যেখানে ঘুমিয়ে আছ, শুয়ে থাকো
বাঙালির মহান জনক
তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ
শৌর্য আর অমিত সাহস
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো
তোমার সাহস নেবে

নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।

SUMMARY

1928-1.png