ফারুক আলমগীর
১
তোমাকে দেখতে আর যাইনি কখনও
কী করে যাব বত্রিশ নম্বরে
যেখানে সুঠাম দীর্ঘদেহী তুমি ঘুমিয়ে রয়েছো!
শুনেছি তোমার শাদা জামা রক্তাপ্লুত
সোপানে রক্তের স্রোত
কালো ফ্রেমের চশমা দূরে পড়ে আছে একা!
২
তোমাকে দেখতে যাবো সে সাহস আমার তো
নেই, বলো না কী করে যাই বত্রিশ নম্বরে?
যেমন দেখেছি সেই অগি্নগর্ভ দিন
অঙ্গুলি নির্দেশে গোটা দেশটাকে দিচ্ছ
সাহসী ডাক বজ্রকণ্ঠে :রক্ত যখন দিয়েছি
রক্ত আরো দেব, এ দেশকে মুক্ত করে
ছাড়বো ইনশাল্লাহ।
৩
সেই দিন থেকে আমাদের পথচলা, মুক্তির অদম্য নেশা
সাড়ে চার কোটি মানুষকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো
বত্রিশ নম্বর, মার্চের সাতের পরে জনতার অভীষ্ট ঠিকানা
শুধু বত্রিশ নম্বর, জনতার জয়গান মুখর করেছে
রেসকোর্স থেকে সারাদেশ আর মুগ্ধতার বত্রিশ নম্বর
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম...
৪
তেইশ মার্চের দিনে জনতার ঢল নেমেছিলো, মনে পড়ে?
সিঁড়ি বেয়ে তরতর নেমে এসে কালো পাইপ নামিয়ে
মুখ থেকে, বলেছিলে :ভালো আছিস, তোদের খবর কী?
কোনো অসুবিধে? কী কী করতে হবে মন দিয়ে শোন...
তারপর উঠে গেলে আবারও উপরে একেবারে ছাদে
হাতে তোমার শোভিত লাল সূর্য-খচিত মানচিত্র আঁকা
বাংলার প্রথম পতাকা, তোমার হাতেই হলো
উড্ডীন সেদিন স্বাধীনতার পতাকা, শুধু বত্রিশ নম্বরে
দালানে-সড়কে নয়, সারা বাংলাদেশের
ঘরে ঘরে পথে-প্রান্তরে_ বাইরে তখন
যুদ্ধ- মন্ত্রধ্বনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!
৫.
কতদিন অই সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেছি দোতলায়
অপেক্ষার ধৈর্য ভেঙে, নিজের ছেলের মতো
ধমক-ধামক দিয়ে তড়িঘড়ি আদর মাখানো স্বরে
যথারীতি তোমার হুকুম :নিচে গিয়ে বস, কিছু খাবি?
এতো রাতে এসেছি নির্দেশ নিতে আগামীকালের
করণীয় কী কী! এখন কি খাবার সময় কারো?
যদিচ জেনেছি জেগে আছেন এখনো একজন নারী
শুধু তাঁর নয়, সকলের খোঁজখবর কুশল...
কামনায় যেন এক জননীর মন সদা-উদগ্রীব
এই বত্রিশ নম্বরে!
৬
এ-সব ভালোবাসার দিন স্মৃতি-বিস্মৃতির
দুঃসহ বেদনাকে সঙ্গী করে কী করে আবার যাবো
বত্রিশ নম্বরে? শ্রাবণের অবিরল অশ্রুধারা কিছুতেই
মুছতে পারেনি সোপানের রক্তধারা যা-কি না নিমিষে
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে কবলিত করেছে প্রিয়-স্বদেশ
স্বপ্নের সোনার বাংলাকে, যার গহীন গভীর
অতলান্ত থেকে শুনছি বিরামহীন জলদ-গম্ভীর
স্নেহকণ্ঠ_ কেমন আছিস তোরা?
আমরা তো ভালো আছি বঙ্গবন্ধু
বাতাসে এখন পরিতৃপ্ত নিঃশ্বাস তোমার
স্বদেশের মানুষের স্বজনের, তুমি কি শুনতে পাও
শোকার্ত শ্রাবণ-ধারা কানে কানে বলে যায়
কেবলি তোমার নাম, তোমার অমৃত-কথন নিশিদিন
চলার পাথেয় আমাদের, পিতার গৌরব আসনেই
দেখি চিরঞ্জীব, চির-দীপ্যমান তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি।