রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে নয়, বঙ্গবন্ধুই মহিমান্বিত করেছেন রাজনীতি


অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করার বিষয়টি যেনো স্বভাবজাত ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে। স্কুল-জীবন থেকে শুরু করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকান্ডের মুহূর্ত পর্যন্ত একজন লড়াকু-সংগ্রামী শেখ মুজিবকে খুঁজে পান রাজনীতি ও ইতিহাসের বিশ্লে¬ষকরা। রাজনীতি তাঁকে নয় বরং বঙ্গবন্ধু মহিমান্বিত করেছেন রাজনীতিকে।

যুগে যুগে বহু বীর নেতার জন্মে উর্বর হয়েছে ভারতবর্ষের পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের রাজনীতি। তবে, সর্বকালের কিংবদন্তী রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি নিজেই বিরল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানান, “গ্রামে গ্রামে গিয়ে, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে সদস্য করা সেই ভিতের ওপর জনগণের সংগঠন তৈরি করা, এটাই কিন্তু বঙ্গবন্ধু শুধু বলেননি, করিয়ে দেখিয়েছেন।”

স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিতে প্রবর্তন ঘটেছে মুজিববাদ কিংবা বঙ্গবন্ধুর দর্শন, আদর্শ, স্বপ্ন ও লক্ষ্যের। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে এসবকে ঘিরে। একাত্তরে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড দেশে সুস্থ রাজনীতির অগ্রযাত্রার জন্য যে বিশাল ক্ষতি তা শুধু তার অনুসারীরাই নয়; প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরাও অনুধাবন করেন।

ড. কামাল বলেন, “সুস্থ রাজনীতি গড়ার জায়গায় রুগ্ন রাজনীতি শুরু হয়ে গেল। যারা  ক্ষমতায় তখন আসলো উপর থেকে, উপর থেকে আসলে কি হয়! টাকা দিয়ে তারা সমর্থন সৃষ্টি করে।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর হোসেন আমু বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা সবকিছুর স্বাধীনার মুক্ত চিন্তা বাধাগ্রস্ত হয় এবং সেই জিনিসটা অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়।”

বাংলাদেশের কমনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে যে চেতনা ধারার জন্ম হয়েছিলো সেইটার কবর রচনা করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো।”

নি:স্বার্থ, ত্যাগী ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতির সংস্কৃতি বঙ্গবন্ধু ও তার সমসাময়িক অনুসারী নেতারা গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মৃত্যু স্বাধীন দেশে শুধু সেই রাজনীতির স্থায়ীত্বকেই বিনষ্ট করেনি, ভীষণভাবে কলুষিত করেছে রাজনীতির চর্চা ও সংস্কৃতিকে।

এব্যাপারে ড. কামাল বলেন, ‘কারো টাকার সাথে হাত মিলানো মানে সুস্থ রাজনীতিকে ধ্বংস করা। অনেকটা ধ্বংস হয়ে আছে রাজনীতি এই কারণে।’

আমু বলেন, ‘এই দেশে যারা মূলত মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলেন সেই সমস্ত অপশক্তি আজকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুরো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর।’

তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে দুইবার এদেশে সামরিক শাসন প্রবর্তিত হয়। এই সামরিক শাসনের পথ পরিহার করতে গিয়ে আমাদের অনেক আন্দোলন, অনেক জীবন দিতে হয়েছে।”

দেশের রাজনীতিতে এমন অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ঘটেছে, যার জন্য আজও মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে।

এব্যাপারে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।’

ড. কামাল বলেন, ‘আশা রাখি যে এই অপচেষ্টা সফল হবে না। পঞ্চাশের দশকে হয়নি, স্বাধীনতার পরেও কয়েকবার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু সফল হয়নি।’

মানুষের মুক্তির যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছিলেন তার সফল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনাকে জরুরি বলে মনে করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদরা।

SUMMARY

1919-1.jpg