বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষক-গণতন্ত্রী; ইংরেজীতে রাজনৈতিক বর্গটিকে বলে peasant-democrat। কৃষক-গণতান্ত্রিক সংগ্রামের রয়েছে দু’টো দিক। ক. সামন্তবাদ বিরোধী ও খ. সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। বঙ্গবন্ধু মুজিব সূচিত বাঙালীর জাতীয় মুক্তিসংগ্রামটির দুটি দিক। ক. মর্মবস্তুগভাবে এটি সাবেকী সামন্ততন্ত্রের হালনাগাদ রূপ সামরিক-স্বৈরাচার বিরোধী; খ. সাবেক পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানী শাসনের প্রত্যক্ষ রূপটি ঔপনিবেশিক বিধায় তা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের শুরু হতে অর্থাৎ ‘৪৭ থেকে ‘৭১ পর্যন্ত পুরো কালপর্ব জুড়েই বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনৈতিক কর্মসূচী কৃষক-গণতন্ত্রের দুটো শর্তই পরিপূর্ণভাবে পূরণ করে বিকশিত হয়ে সর্বোচ্চ রূপ মহান মুক্তিযুদ্ধে উন্নীত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু মুজিবের চৈতন্যিক বিকাশে যাদের অবদান স্মর্তব্য, তাঁরা হচ্ছেন- ১. মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী; ২. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী; ৩. শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক; ৪. আবুল হাশিম। ভাসানীর থেকে পেয়েছেন কৃষক দরদী মনন; সোহরাওয়ার্দীর থেকে ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ অব ডেমোক্রাসির অনুশীলন; শেরেবাংলার থেকে নিয়েছেন জনসভা বা আলোচনায় অনলবর্ষী বক্তব্য উপস্থাপনের কলাকৌশল; আর আবুল হাশিমের সাংগঠনিক দক্ষতা। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভাবশিষ্য। নেতাজীর বলিষ্ঠ-সাহসে বলিয়ান ছিলেন বঙ্গবন্ধূ্। গুরু চতুষ্টয়ের একান্ত সান্নিধ্যে থেকে তাদের যা কিছু গুণবাচক তথা ইতিবাচক তার সবই পরিপূর্ণতায় অর্জন করে নিজ জীবনে প্রয়োগ করেছেন এবং গুরুচতুষ্টয়ের সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বাঙালীর জাতীয় মুক্তি অর্জনে একচ্ছত্র নেতৃত্ব প্রদান করে গণমানুষের হৃদয়-নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আরোহন করেছেন হিমালয়সম উচ্চতায়; ক্রমেই হয়ে উঠেছেন ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বব্যাপী গণযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালী জাতির জনক।

‘৪৭ থেকে ‘৭১ পর্যন্ত কালপর্বে কৃষক-গণতন্ত্রী বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনৈতিক বিবর্তন মুসলিম জাতীয়তাবাদী থেকে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদীতে রূপান্তরের ইতিহাস। এই পরিবর্তন কেবল ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু মুজিবের চৈতন্যিক পরিবর্তন নয়; জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক রূপান্তরও বটে। আর এখানেই গণনায়ক বঙ্গবন্ধু মুজিবের সার্থকতা। জনসাধারণের সাথে তাঁর সম্পর্কের বন্ধন এতই নিবিড় ও অচ্ছেদ্য যে, নিছক নিজের রাজনৈতিক চেতনার পরিবর্তন নয়, বরং সমগ্র জনগোষ্ঠীকে তিনি বিপুল পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে ধাপে ধাপে পৌঁছে দিয়েছেন জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সর্বোচ্চ ধাপে। যার আরম্ভটা হয়েছিল প্রথমে মাতৃভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দাবীতে এবং পরে ‘এক মাথা এক ভোট’-এর ভিত্তিতে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার তথা স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে। এবং ‘৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে স্বাধিকারের সনদ ৬ দফার প্রতি গণরায় অর্জন করে বঙ্গবন্ধু মুজিব বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকারকে রাজনৈতিক বৈধতা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন পাকিস্তানী সামরিক শাসকেরা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করেছিল, তখন এই গণরায়ের বৈধতার বলে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রায় সকল দেশের সহানুভূতি অর্জনে সমর্থ হয়। নিয়মতান্ত্রিক তথা গণতান্ত্রিক পন্থায় কী করে স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণ সম্ভব তা বঙ্গবন্ধুর চেতনায় স্ফটিকস্বচ্ছ রূপে ধারিত আছে। বঙ্গবন্ধু মুজিবের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব তিনি সর্বব্যাপী এক গণযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে অভিষিক্ত করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে।

জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট থাকা সত্ত্বেও কোনদিন ক্ষমতার অপব্যবহার করেন নাই। ‘৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মুখের কথাই ছিল আইন। বাংলার জনসাধারণ বঙ্গবন্ধু মুজিবের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তির পর’ ‘৭২-এ যখন তাঁর দলের ৫ জন এমপিকে প্রকাশ্যে গুলী করে হত্যা করলো চীনপন্থী নকশালীরা তখনো বঙ্গবন্ধু মুজিব গণপরিষদের অধিবেশন চালু রেখে ৯ মাস সময় নিয়ে জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন তৎকালীন সময়ের সেরা একটি সংবিধান; ইতিহাসে যা খ্যাত হয়ে আছে ‘৭২-এর সংবিধান নামে। এসব না করে তিনি প্রয়োজন মতো ফরমান জারী করে আইন করতে পারতেন এবং সেই ফরমানগুলোই হতো সংবিধান। কিন্তু তা তিনি করেন নি। গণপরিষদে জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে বলবৎ করলেন সংবিধান। তাঁর এই আচরণটি বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক এবং উত্তরসূরীদের জন্য গৌরবের।

উপরন্তু, তিনি সংবিধানের চার মূলনীতিতে অন্তর্ভূক্ত করলেন “সমাজতন্ত্র।” বঙ্গবন্ধু মুজিব তো সমাজতন্ত্রী নন। তবে কেন সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হলো সমাজতন্ত্র? এ প্রশ্নের উত্তরটি নিহিত আছে বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন কৃষক-গণতন্ত্রের মধ্যে। কৃষক-গণতান্ত্রিক দর্শন সংগ্রামী বস্তুবাদ থেকে উৎসারিত। প্রবল গণভিত্তিই এর মূল শক্তি। ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পরবর্তীতে নবীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব শক্তি-সাম্যের যে অবস্থান, আন্তর্জাতিক রাজনীতির সেই বাস্তবতার অমোঘ নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু মুজিব পরিচালিত হয়েছিলেন। ভারতবর্ষ, সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপস্থিতি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদানে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করেছিল বিধায় এবং দেশের অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্রের দাবীতে দেশের যুবসমাজসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবী বঙ্গবন্ধু মুজিবকে সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক নীতি গ্রহণে মূলত উৎসাহিত করেছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবের বাকশাল কর্মসূচী ছিল প্রকৃতই গণমুখী। লক্ষণীয় যে, তিনি ‘৭২ বা ‘৭৩-এ বাকশাল করেন নি, করেছেন ‘৭৫-এ। বাকশাল বিষয়ে তাঁর অবস্থান ছিল পরিষ্কার। অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে বেগবান বিকাশ ত্বরান্বিত করতে বাকশাল ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি। কিন্তু আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও দলীয় এই ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রের নিকট আপাত পরাস্ত হয়েছেন তিনি। চোখের সামনে চিলির নির্বাচিত গণনায়ক সালভাদর আলেন্দের নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও কৃষক-গণতন্ত্রের প্রবল উদারতায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধু নিজকে ঠেলে দিয়েছেন সর্বনাশা পরিস্থিতির দিকে। শত্রুর প্রতি অতিউদারতা ও দেশের মানুষের প্রতি অতিভালোবাসায় তাঁর জীবনমন্ত্র ছিল, ‘করি শত্রুর সাথে কোলাকুলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।’
‘৭৩ ও ‘৭৪ জুড়ে আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ভয়াবহ রূপ লাভ করে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রীদের নাটের গুরু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে পরাজিত শত্রু দেশ পাকিস্তান সাব-কন্ট্রাক্ট নেয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পাকিস্তানপন্থী ধর্মান্ধ দলগুলো, রাতারাতি গজিয়ে ওঠা বৈজ্ঞানিক বিপ্লববাদ ও চীনাপন্থী নকশালদের কিছু কুকর্ম বাস্তবায়নের কন্ট্রাক্ট দেয়। এসময় বঙ্গবন্ধু মুজিব কৃষক-গণতন্ত্রী আদর্শের অতি উদারতায় আক্রান্ত হয়ে কৌশলগত দুটো গুরুতর রাজনৈতিক ভুল করেন। ১. মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর সমন্বয়ে সেনাবাহিনী গঠন না করে সাবেকী স্টাইলে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগতদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠন। ২. মুজিবনগর সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোটি বাদ দিয়ে প্রাক্তন আমলাদের নিয়ে প্রশাসন গঠন। ফলে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের প্রবল বিরোধীতাকে অগ্রাহ্য করে সদ্য স্বাধীন ও নবীন রাষ্ট্রকাঠামোর দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সাবেকী পাকিস্তানী আদর্শে বহাল থাকলো এবং ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য তা হলো পোয়াবারো। ফলে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে বছর জুড়ে থানা লুট, ফাঁড়ি লুট, পাটের গুদামে আগুন, খুন, রাহাজানি, ব্যাংক লুট ইত্যাকার কুকর্ম চলতেই থাকলো। এর মধ্যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা নেমে এলো ‘৭৪-এর বন্যা। দেখা দিল খাদ্য সংকট। সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা খাদ্য সংকটের সুযোগ নিল বিশ্বাসঘাতকতা করে। এমতাবস্থায় আলেজরিয়ার রাজধানী আলেজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ফিদেল ক্যস্ট্রো তো বঙ্গবন্ধুকে স্পষ্ট বলেই দিয়েছিলেন, “মুজিব, তোমাকে আমরা খরচের খাতায় ধরে রেখেছি। তোমাকে আলেন্দের পরিণতিই বরণ করতে হবে। তুমি ভুল করছো। কেবল তোমার সন্তানতুল্য মুক্তিযোদ্ধারাই তোমাকে রক্ষা করতে পারে। তুমি ওদের দিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করো, প্রশাসনের দায়িত্ব ওদের হস্তে অর্পণ করো।” পরবর্তীতে এসব বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু মুজিব ‘৭৫-এ বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে। দুষিত জলভার ধারণ ও বহনের ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। বাকশালের মতো একটি গণমুখি কর্মসূচী সফলতার সাথে বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে তার সক্ষমতা হারিয়েছে। আর ধূর্ত হায়নার দল তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে বঙ্গবন্ধু মুজিব কবে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার ঘোষণা প্রদান করে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটির দিকে। যাতে এক ব্যক্তির হস্তে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে সহজেই ব্যক্তিটিকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা যায়। বঙ্গবন্ধু মুজিবকে নির্বিঘ্নে হত্যা করতে তারা প্রচুর সময় পেয়েছে। ফলে হত্যাকাণ্ডের দিনক্ষণ নির্ধারণেও তারা শতভাগ সফল হতে পেরেছে।সমাজতন্ত্রী না হয়েও সমগ্র বিশ্ব্যবাপী সমাজতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে স্যালুট করে স্বাগত জানিয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” আর বাকশাল কর্মসূচির মূল দর্শন সম্পর্কে বলেছিলেন, “বাকশাল হচ্ছে শোষিতের গণতন্ত্র।” সুতরাং, বঙ্গবন্ধু মুজিব ট্রু ন্যাশনালিস্ট, খাঁটি জাতীয়তাবাদী! যেমনটা সান-ইয়াৎ সেন; কামাল আতাতুর্ক; মহাত্মা গান্ধী; কাওমি নক্রুমা; সালভাদর আলেন্দে; প্যাট্রিস লুমুম্বা, নেলসন ম্যান্ডেলা, রবার্ট মুগাবে…। বঙ্গবন্ধু মুজিবের সমালোচনা হতে পারে বিস্তর। কিন্তু তিনি কখনোই একনায়ক ছিলেন না; আপাদমস্তক গণতন্ত্রী; গণমানুষের একান্ত আপনজন।
সংবিধানের চার মূলনীতির ব্যাখ্যা করে ৭২-এর ৪ঠা নভেম্বর, বাংলাদেশ গণপরিষদে প্রদত্ত বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু মুজিব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশে স্বীয় রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে বলেছিলেন, “ভবিষ্যৎ বংশধর, ভবিষ্যৎ জনসাধারণ কিভাবে শাসনতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে তারই উপর নির্ভর করে শাসতন্ত্রের সাফল্য, তার কার্যকারীতা। …ভবিষ্যৎ বংশধরেরা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ গঠন করতে পারে, তাহলে আমার জীবন সার্থক, শহীদের রক্তদান সার্থক।” অর্থাৎ ‘৭২-এর সংবিধানে ধারিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন।

পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক ঘোর অন্ধকার যুগের ইতিহাসকে যিনি বদলে দিয়েছিলেন ২৪ বছরের সংগ্রামী জীবনের কঠোর তপস্যা দিয়ে; যিনি বাঙালীর পাঁচ হাজার বছরের মহত্তর জীবনাদর্শ নিজ জীবনে প্রস্ফুটিত করেছিলেন বিনয়ভূষণ তপোবীরের মতই; জীবনের দশটি বছর কারান্তরালের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন অসীম ধৈর্য আর অপরিসীম সহিষ্ণুতা নিয়ে; ফাঁসির মঞ্চকে উপেক্ষা করে দুর্জয়-সঙ্কল্প বোধ দ্বারা চালিত হয়ে জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্যে পরিণত করেছেন; কোনরূপ অন্যায়ের কাছে যিনি নতি স্বীকার করেন নাই- বাঙালীর ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাবী বংশধরদের উদ্দেশে কর্তব্য-করণীয় যেভাবে নির্দেশ করেছেন, সেটি প্রতিপালনে সচেষ্ট হলে বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পুণ্যার্জনে ভবিষ্যৎ পুণ্যময় হয়ে আগামী জীবন শোভিত হবে সুনিশ্চিত। কেননা ইতিহাসের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় তিনিই একমাত্র যোগসূত্র। আর সকল কিছুই আমাদের জাতীয় জীবন থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে প্রায় নিঃশেষিত। ফলে, তাঁর পরমারাধ্য নির্দেশকে ধ্যান-জ্ঞান করেই পথ তৈরী করে এগিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে অন্ধ হয়ে থাকলে চলবে না মোটেই। কেননা, অন্ধ হলে কী প্রলয় বন্ধ থাকে?


SUMMARY

1914-1.png