১৭ই মার্চ ১৯২০। এই দিন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই সাথে এই দিন রোপিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ। যে বীজ ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর চারায় পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু বিশে^র যেকোনো মানুষের কাছে একজন আদর্শ। যার নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি সারাটা জীবন এদেশ এবং এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। দেশের জন্য নিজের আনন্দ, ইচ্ছা বিসর্জন দিয়েছিলেন। তিনি এমন একজন নেতা যিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও ট্রাফিকের রেড সিগন্যালে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতেন। তিনি অসাধারণ এক দেশপ্রেমিক। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এত অত্যাচার, নিপিড়নের পরও তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করছেন। এদেশের জন্য লড়েছেন। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সেরা একজন নেতা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দেওয়ার আগে ৬মার্চ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে শেখ মুজিবের টেলিফোনে কথা হয়। ইয়াহিয়া খান বলেন, “এমন কিছু না বলতে, যেখান থেকে আর ফেরার উপায় থাকবে না” (সূত্র: জি ডব্লিউ চৌধুরী, দ্য লাস ডেইজ অব ইউনাটেড পাকিস্তান)।
ইয়াহিয়ার কথায় বঙ্গবন্ধু হুমকির আভাস পান। ইয়াহিয়া ফোন করার আগেই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দিলে হয়তো সামরিক বাহিনী হামলা করতে পারে। তাই তিনি ৭ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দেন নাই। কিন্তু পরোক্ষভাবে আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন যে এখন থেকে আমরা স্বাধীন। যা তাঁর ভাষণের :
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
- এই লাইন দুটি থেকে বুঝা যায়। তাঁর এই ভাষণ যেকোনো বাঙালিকে উজ্জিবীত করার অসাধারণ এক মন্ত্র। যার জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ আমি নিজেই। স্কুলে থাকতে ৭ই মার্চ অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি দেখানো হতো। সবাই ভাষণটি দেখত। তখন আমার মনে হতো যে আমার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। হাতের লোমগুলো খাড়া হয়ে যেত। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল চলে আসত। সেই মুহূর্তে মনে মনে আফসোস করতাম “কেন ৭১-এর আরও আগে পৃথিবীতে আসলাম না। তাহলে আমিও যুদ্ধ করতে পারতাম।” ক্লাসে যখন স্যার একজন ছাত্রকে দিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ এর “স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো” কবিতাটি পাঠ করাতেন তখন সবাই একমনে শুনত। আর পাঠ করার সময় যখন কবিতাটির শেষ লাইনের আগের দুটি লাইন আসত তখন আমরা সবাই একসুরে চিৎকার করে বলতাম :
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
নিজের অজান্তেই সবাই মন থেকে বলত, যা আগে থেকে কখনোই ঠিক করা ছিল না। এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে যে কতটা ভালোবাসে এটা তার একটা উদাহরণ। আজ হয়তো বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর অমর কীর্তিগুলোর মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতা হয়তো আমরা আর পাব না। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া সেই ৭১-এর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের মাঝে আছে। যে ভাষণ দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের উজ্জীবিত করবে। যে ভাষণ দেশ রক্ষায় এ দেশের মানুষকে মানসিক শক্তি যোগাবে। এ ভাষণ এদেশের মানুষের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বস্তুর চাইতেও মূল্যবান। তাঁর এই জন্মদিনে আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তাঁকে বেহেশত নছিব করেন।