অগ্নিঝরা উত্তাল ২২ মার্চ


অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ছিল ১৯৭১ সালের ২২ মার্চ। আজকের দিনে ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের দিকে ছুটে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কোনো কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’ এদিকে সময় যত ঘনিয়ে আসে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য বাঙালিরা সংগ্রামে গর্জে ওঠে। যতই দিন গড়াচ্ছিল, রাজনৈতিক সঙ্কট ততই গভীরতর হচ্ছিল। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে একাত্তরের ২২ মার্চের ঘটনাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে ২৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে। সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এটি ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর টানা ষষ্ঠ দফা বৈঠক। প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি নেতৃবৃন্দ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে অনির্ধারিত এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে এ ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না। আজকের দিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোরেরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। একইভাবে পল্টন ময়দানে সশস্ত্রবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকরা এক সমাবেশ এবং কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি, তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাবো না।’

SUMMARY

1889-1.jpg