১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের আজ পঞ্চম দিন। স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল পুরো বাংলাদেশ। দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে সবাই রাজপথে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে চলছে লাগাতার হরতাল। ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’-শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত শহর থেকে গ্রাম। অহিংস আন্দোলন- সংগ্রাম নয়, সশস্ত্র সংগ্রামই একমাত্র মুক্তির পথ। এটা বুঝতে বাঙালী জাতির বাকি রইল না। তাই আন্দোলনের পাশাপাশি সারাদেশেই গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। রক্তঝরা পহেলা মার্চ ঢাকায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল-তার ঢেউ আছড়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কোন নির্দেশই মানেনি মুক্তিপাগল বাঙালী। দেশ স্বাধীন না হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে টানা হরতাল চলছে। অহিংস আন্দোলন ক্রমশ সশস্ত্র প্রতিরোধে রূপ নিতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করছে বীর বাঙালীরা। পাক সেনাবাহিনী ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই স্বাধীনতার দাবিতে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে পুরো বাংলাদেশ। পাক সামরিক বাহিনীর সামনেই মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি প্রকাশ্য রাজপথে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার শ্লোগানে শ্লোগানে সারাদেশই প্রকম্পিত করে রাখে। উনিশশ’ একাত্তরের ৫ মার্চের দিনটি কেমন ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা বিখ্যাত প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে। শহীদ জননী তাঁর গ্রন্থে একাত্তরের ৫ মার্চ শুক্রবারের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হরতালের দিনগুলোতে বেতন পাওয়ার সুবিধার জন্য এবং অতিজরুরী কাজকর্ম চালানোর জন্য সরকারী- বেসরকারী সব অফিস দুপুর আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। রেশন দোকানও ওই সময়ে খোলা। ব্যাংকও তাই। আড়াইটা চারটার মধ্যে টাকা তোলা যাবে। তবে দেড় হাজার টাকার বেশি নয়। বিকেলে ব্যাংক খোলা-ভাবতে মজাই লাগছে। শেখ মুজিবের একেকটা নির্দেশ সব কেমন ওলটপালট খেয়ে যাচ্ছে। জরুরী সার্ভিস হিসেবে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তারের গাড়ি, সংবাদপত্র ও তাদের গাড়ি, পানি, বিদ্যুত, টেলিফোন, দমকল, মেথর ও আবর্জনা ফেলা ট্রাক-এগুলোকে হরতাল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আজ মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা। তবে মুক্তিপাগল বীর বাঙালি ও পাক হানাদারদের মনে একই চিন্তা, আলোচনা। কী হবে ৭ মার্চে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ওই সমাবেশ থেকে কী স্বাধীনতার ডাক দেবেন। আর স্বাধীনতার ডাক দিলে কী পরিস্থিতি হবে।’