বঙ্গবন্ধুর ভাষণ: স্বাধীনতার অমর কবিতা


প্রফেসর ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি

বাঙালি জাতির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মাচের্র ভাষণ একটি অবিস্মরণীয় অনন্য ঘটনা। তাঁর এই ভাষণকে বলা হয়, ‘মহাকালের মহাকবিতা’। জাতির পিতার এই ভাষণকে ঘিরেই জন্মলাভ করেছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্রের; যে রাষ্ট্র সৃষ্টির মূল উপজীব্য হয়েছে ‘রক্ত’ আর অসহায় মা-বোনের ‘সম্ভ্রম’। এত পরিমাণ রক্ত দিয়ে সভ্যতা বিনির্মাণের উদাহরণ বিশ্বে আর কোথাও নেই। শেখ মুজিব দীর্ঘ সংগ্রাম করে ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন। একাত্তরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, …রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ’। তাঁর এই ডাকেই রাতারাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী সাড়ে সাত কোটি বঙ্গসন্তান। বঙ্গবন্ধুর বিশাল দেহটাই যেন তখন পরিণত হয়ে যায় দেশ-জাতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে। ত্রিশ লাখ মুক্তিকামী বঙ্গসন্তান তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনে প্রাণের স্বাধীনতা। বঙ্গদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে একজন নেতা একক নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ঘটনা আর ঘটেনি, তেমনি একটি ভাষণের ডাকেই এভাবে রক্ত দেয়ার জন্য রাতারাতি গোটা জাতির প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বিশ্বে আর ঘটেনি।

একাত্তরের অগ্নিঝরা ৭ মার্চ দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে গর্বের ও গৌরবের। বঙ্গবন্ধুর সে দিনের ভাষণ কবির ভাষায়, ‘বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারীবাণ’। সেই ভাষণ কানে এলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করে, উদ্দীপ্ত করে, জাগ্রত করে নতুন চেতনায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে মানসপটে ভেসে ওঠে বিশেষ করে ১ থেকে ৬ মার্চের উত্তাল দিনগুলো। এই ৬ দিন ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি স্থানে, গ্রাম-গ্রামান্তরে অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ১ থেকে ৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের অফিস আদালত কলকারখানা বঙ্গবন্ধুর একক নির্দেশে চলতে থাকে। এ ক’টি দিন অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি দেশজুড়ে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে। ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল মিটিংয়ে বর্বর পাকবাহিনী গুলি চালালে অনেক বাঙালি শাহাদত বরণ করেন এবং পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। বলা যায় অঘোষিত স্বাধীনতায় বাঙালিরা স্বাধীনভাবে চলতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ভাষণের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালি। ২৩ বছর মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনা ঘটে এই দিনটিতেই। এই জনসভা এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ঘিরে তখন সারাদেশে চলছিল ব্যাপক কল্পনা-জল্পনা। আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে আসলে কি বলবেন! স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন? না অন্য কিছু? যা হোক সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু জনসভাস্থলে আসলেন। যদিও জনসভা হওয়ার কথা বেলা ২টায় কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে তিনি সভাস্থলে উপস্থিত হন। এই দিনটি তাঁর জন্য ছিল এক মারাত্মক সমস্যাপূর্ণ। বলা যায় ত্রিশংকু অবস্থা। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামান্য ভুল হলে তা হবে ভয়াবহ। অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষপটে আহূত এই জনসভা থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেন। এরকম একটা সম্ভাবনা ছড়িয়ে পড়ায় পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী ভীত হয়ে পড়ে। এই ভীতির কারণেই ৬ মার্চ পূর্ব-পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান সাহেব জাদা ইয়াকুব খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষৎ করেন এবং তিনি যেন ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা না করেন, এ জন্য তিনি শেখ মুজিবকে অনুরোধও করেন। তিনি আরো বলেন স্বাধীনতার ঘোষণা করা হলে রেসকোর্স ময়দানে কামান এবং বিমান থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হবে। প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না। যদি গোলাবর্ষণ করেন তবে আপনাদের পরিণতিও শুভ হবে না। এই দিন সকাল থেকে তাঁর ওপর নেমে আসে বিদেশি চাপ, স্থানীয় নেতাদের নানা ধরনের হুমকি। ৭ মার্চ সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের এই বৈঠকটি গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন। পূর্ববাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এরপর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করলেন প্রস্তাবিত বক্তৃতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলেন জনসভায় কি বলবেন। একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রবল চাপ, অপরদিকে স্বাধীনতার ঘোষণার বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি এসব বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধু তখনো ছিলেন অস্থির। এভাবে কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জনসভা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আ স ম আব্দুর রব, সিরাজুল আলম খান ও শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে কট্টর বাঙালি জাতীয়তাবাদী ছাত্রনেতারা বঙ্গবন্ধুকে জানিয়ে দিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। যে কোনো মূল্যে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা চাই। বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তির চাপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত দ্রুত পরিবর্তন হলো যে পূর্ব বাংলার বামপন্থি মহল কিছুটা বিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। বিকেল ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয় তীব্র উত্তেজনা নিয়ে; মাত্র ১৮ মিনিটের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু সব বলে দিলেন তাঁর অগ্নিকণ্ঠে। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ একটু ব্যাখা করলেই অনেক কিছু বের হয়ে আসে। ভাষণের শেষ দুটি তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দেয়। সেখানে তিনি অত্যন্ত দৃপ্তভাবে বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- প্রকৃত অর্থে এটিই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ‘সংগ্রাম’ শব্দটির বিশ্লেষণ আবশ্যক। আমরা সাধারণত জেনে এসেছি সংগ্রাম বলতে অধিকার আদায়ের লড়াই, আন্দোলন, এমন কি হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনকে বোঝায়। আবার সংগ্রামের আভিধানিক অর্থ ‘যুদ্ধ’। সংগ্রাম বলতে এক সময় সন্ত্রাস বিপ্লব ও বিদ্রোহের কথাও বুঝাত। বঙ্গবন্ধু যে সংগ্রামের কথা বলেছেন- তা কি আন্দোলন বিদ্রোহ, বিপ্লব, স্বাধীনতার ঘোষণা? স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অব্যাহত বিতর্ক সৃষ্টিকারীদের জবাবে আমার বলা, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। রেসকোর্স ময়দানের লাখ লাখ লোকের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ের আহ্বান। স্বাধীনতার এ ডাক দেয়ার মাঝে তাঁর ভাষণের দুটি লাইন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে’। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন করা যায় ঘরে ঘরে দুর্গ তোলার প্রয়োজন কেন? দ্বিতীয়ত কেন সেই শত্রুর মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। আজো যারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন এতকাল পরও কি যেন এক অজেয় শক্তি আমাদের মনকে দোলা দেয়, আন্দোলিত করে। ঐতিহাসিক এই ভাষণের দিকে আরো একটু নজর দিলেও বুঝা যায় প্রথমে তিনি অত্যন্ত ধীরগতিতে বক্তব্য শুরু করেন। একপর্যায়ে চরমে পৌঁছে বলেন ‘দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে তিনি ২৪ বছরের পূর্ববাংলার মানুষের রাজনৈতিক ও দুঃখ-কষ্টের ইতিহাসের কথা বলেছেন। তারপর যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। তারপর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলেছেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। ১৮ মিনিটের সেই ভাষণে তিনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দিকনির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচিও এঁকে দিয়েছেন- ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি…’। তখন কি করতে হবে তারও স্পষ্ট সমাধান দিয়ে গেছেন। প্রকৃত অর্থে ১ মার্চ থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের কলকারখানা অফিস আদালত চলতে থাকে শেখ মুজিবের নির্দেশে। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। ১ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত পূর্ববাংলা পাক সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এমনিভাবে ৬ দিন চলার পর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সেই জনসভা থেকে আসে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা। ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন মূলত ১ মার্চ থেকে প্রতিটি বাঙালি যেভাবে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে আসছে, ঘরে ঘরে সবুজের লাল পতাকা উড়াচ্ছে তা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য। তাই তো বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব’। এ রক্ত স্বাধীনতার জন্যই। দেশকে শুধু মুক্ত করতেই নয়, বরং দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যও। এরপর ২৫ মার্চের রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি ইপিআরের অয়্যারলেসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, ‘…আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন’। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু যে মুকুটহীন স¤্রাটে পরিণত হন তার আরো একটি জ্বলন্ত প্রমাণ মেলে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে, আমাদের প্রিয় কবি জসীমউদ্দীনের একটি কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে-

মুজিবুর রহমান ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারীবাণ বঙ্গদেশের এ প্রান্ত থেকে সব প্রান্ত ছেয়ে জ্বালায় জ্বলিয়ে মহাকালানল ঝঞ্ঝা অশনি বেয়ে…

একজন মানুষ একটি ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন। আর ইতিহাসও নিজের প্রয়োজনে একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মনে হয় তেমনি একজন মানুষ। ইতিহাসের প্রয়োজনেই তাঁর আবির্ভাব। আবার তিনি ইতিহাসে একটি সোনালি অধ্যায় যোগ করে গেছেন। একাত্তরের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স থেকে উচ্চারিত হয়েছিল বাঙালির নবজন্মের মন্ত্র। বহুকাল দিশেহারা, দেশহারা বাঙালি জাতি সে দিন খুঁজে পেয়েছিল আপন জন্মভূমির ঠিকানা- ‘বাংলাদেশ’ নামক দেশ। আর এই ‘বাংলাদেশ’ নামটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরই দেয়া। ১৯৬৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন আজ থেকে আমাদের মাতৃভূমির নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।

পরিশেষে বলি, আমরা প্রাচীন বঙ্গদেশের মানুষ। বঙ্গের সন্তানরাই বাঙালি জাতি। বঙ্গদেশের পাঁচ হাজার বছরের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়, তার আগের ইতিহাস জানা যায় না। তাতে দেখা যায় বঙ্গদেশে কোনোকালেই স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। প্রাচীন বাংলা তখন বরেন্দ্র, পুণ্ড্রবর্ধন, সমতট, গৌড়, হরিকেল, রাঢ়, বজ্রভূমি, সূক্ষ্ণ, বর্ধমান-কঙ্কগ্রাম, তাম্রলিপ্তি, চন্দ্রদ্বীপ, কোটিবর্ষ, কজংগল, কর্ণসুবর্ণসহ ইত্যাদি জনপদ রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভাজিত ছিল।

বঙ্গদেশের বুকেই আধুনিককালে জন্মলাভ করে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে জাতির ইতিহাসে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’র মর্যাদায় অমর হয়ে আছেন। তাঁর দেয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ভাষণ’ হিসেবে অভিহিত হয়ে আছে। শেখ মুজিবের এই ভাষণ বাঙালির নিত্যসঙ্গী; এগিয়ে চলার এক অনন্ত প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার অমর কবিতা।

প্রফেসর ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

SUMMARY

188-1.jpg