চিরঞ্জিব বঙ্গবন্ধু- মো. লোকমান হেকিম


ধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট বিশাল হৃদয় ধারণকারী বঙ্গবন্ধুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিল। শত্রুরা হয়তো তাঁকে শারীরিকভাবে এ ধরণী থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু শাহাদাতের এত বছর পরেও তাঁর রেখে যাওয়া কীর্তি প্রমাণ করে আজো বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জিব।
জন্মবৃত্তান্ত : ১৭ মার্চ ১৯২০ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। অনন্য বঙ্গবন্ধু: শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারত উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির জনক বলা হয়ে থাকে। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব ও শেখ সাহেব হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। 
রাজনীতির টানে বঙ্গবন্ধু : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের (ছাত্র সংসদ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টে নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এই অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এর পর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত বিজয় ও স্বাধীনতা। 
নতুন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু : ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। সদ্য স্বাধীন দেশে তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 
পুরস্কার ও সম্মাননায় বঙ্গবন্ধু : বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় এবং এর ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতা সংবর্ধনা সমাবেশে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু’উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর তিনি বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারে ভূষিত হন। শাহাদাত : যে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের পুরো জীবনটা ব্যয় করেছেন, সেই জাতিরই কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁকে । ফলে জাতি হারায় তার সহ¯্রাব্দের সেরা ব্যক্তিত্বকে। আল্লাহ যেন তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করেন এবং জান্নাত দান করেন। আমীন।
লেখক : কলামিস্ট।

SUMMARY

1868-1.png