অগ্নিঝরা উত্তাল ৯ মার্চ


অগ্নিঝরা ৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এক উত্তাল দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর কার্যতঃ ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাক হানাদাররা। কারণ তখন পুরো বাংলাদেশ চলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই নির্দেশ অনুযায়ী চলছে বাংলাদেশ। তখন শুধুমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের। একাত্তরের এইদিনে মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ থেকে প্রতিটি গলি পথ ছিলো উত্তাল। চরমে পৌঁছে দেশব্যাপী চলা লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন। ঢাকার রাজপথ মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। মুক্তিকামী মানুষের সব ¯্রােত মিশে যায় মিছিলের দিকে, এক মোহনায়। যেখানে সেখানে জটলা, মিছিল, মিটিংয়ের মুখরতা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে যুবকরা ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। চলে বিভিন্ন স্থানে গোপন অস্ত্রের প্রশিক্ষণ, গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি। বাংলাদেশের যুবকদের রক্তে তখন একই নেশা, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সবার চোখে একই স্বপ্ন দেশকে শত্রুমুক্ত করা। নতুন একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দেয়া। তাই, তাদের রক্তে বইতে থাকে প্রবাহমান এক নদী। শুধু অপেক্ষা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। এদিকে, সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চরমে পৌঁছে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এই বাংলায় তাদের অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলে। পাক সামরিক জান্তার কোন নির্দেশ কেউ-ই মানে না। কারণ, তখন প্রতিটি মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। এমনকি শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পাক সামরিক জান্তা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করতে মুখের ওপর ‘না’ বলতে থাকে বাঙালী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সাধারণ মানুষ অপেক্ষায়, এরপর কী হবে? তরুণ-যুবক সবাই মনে প্রাণে প্রস্তুতি নিতে থাকে চূড়ান্ত ডাকের অপেক্ষায়। অন্যদিকে, যুব সমাজকে সংগঠিত করতে সারাদেশেই সংগ্রাম কমিটি গঠিত হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সেনা অফিসার-সৈনিকরা গোপনে নানা স্থানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বাঙালী দামাল ছেলেদের। পাক সামরিক জান্তা বুঝতে পারে বাঙালীর রণ-প্রস্তুতির কথা। তারাও গোপনে বাঙালী নিধনের চক্রান্তের নীল নকশা এঁকে যায় ক্যান্টনমেন্টে বসে। পাকিস্তান থেকে ভারি ভারি অস্ত্র-গোলাবারুদ এনে জড়ো করতে থাকে। চলে ইয়াহিয়ার গোপন মিশন। কিন্তু কোন কিছুতেই যে মুক্তিপাগল বাঙালী জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, সেই ঐতিহাসিক সত্যটিও বুঝার বাকি ছিলো না তাদের।

SUMMARY

1857-1.jpg