অগ্নিঝরা উত্তাল ১৪ মার্চ


১৪ই মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোটা দেশ সম্পূর্ণভাবে আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্ত ও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে থাকে। তবে ১৩ মার্চ টিক্কা খানের সামরিক ফরমান জারির তীব্র প্রতিবাদ জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দিন এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির উদ্দীপনা নিভিয়ে দেয়া যাবে না। পরাজিত করাও যাবে না। কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বাধীনভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করার জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবনও দিতে হবে। অতএব আমাদের মুক্তির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’ অপরদিকে, সকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সংবাদপত্র প্রেস কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা এক বিরাট মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে তার ধানমন্ডির বাসভবনে যান। বঙ্গবন্ধু তাদের সাথে দেখা করে বলেন, ‘আপনারা সর্বত্র আন্দোলন চালিয়ে যান, জয় আমাদের নিশ্চিত।’ পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির এক জনসভায় জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতা দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে হস্তান্তরই বর্তমান সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।’ ভুট্টোর এই বক্তব্যে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানেই তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকায় বিরাট মিছিল বের করা হয়। ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা ভুট্টোর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, উভয় পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হচ্ছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের কাছে বা দলের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। তারা সংগ্রাম করেই অধিকার আদায় করবে। একই সঙ্গে স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সঠিক পথে আন্দোলন পরিচালনার জন্য সারা দেশের কমিটিগুলোর প্রতি কিছু নির্দেশনা জারি করে। টিক্কা খান মুক্তিবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের যেখানেই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দেখা যাবে-সেখানেই কঠোর হাতে তাদের দমন করা হবে। পাকিস্তানের অখন্ডতার প্রশ্নে কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। টিক্কা খানের এই হুঙ্কার ক্যান্টনমেন্টের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তার কোনো আদেশ-নির্দেশ তখন মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে কোনো ধরণের প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে মুসলিমলীগ ও জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের অখন্ডতার প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পাকিস্তান সামরিক সরকারকে সব ধরণের সহায়তা দেয়া শুরু করে। একাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে তার সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে তিনি অবশ্যই আলোচনায় অংশ নেবেন। তবে যতদিন বাংলার জনগণের অধিকার আদায় না হবে, যতদিন বাংলার জনগণ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাসের সুযোগ না পাবে এবং যতদিন তাদের মুক্তি না আসবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রাম চলতেই থাকবে।’

SUMMARY

1852-1.jpg