শেখ মুজিব মানে বাংলাদেশ-সৈয়দ আছলাম হোসেন

 
স্বাধীন থাকতে কে না চায়। তবে এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়ে যায় এক একটি ইতিহাস। আমরা বাঙালি ঘরে জন্মগ্রহণ করেই বাঙালি হয়ে গেছি। আমরা একটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেই স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। তাই বলে এই স্বাধীনতা কিভাবে আমরা পেলাম তা সঠিকভাবে না জেনে বসে থাকলে এই স্বাধীন দেশে বসবাস করা দেশের সাথে ‘প্রতারণা’ করা হবে। তাই এর সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। 
আমরা যারা নতুন প্রজন্ম, আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখি নাই, শুনেছি ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ হয়েছিল। আমরা ৭১ এর শহীদদেরে সরাসরি দেখি নাই। লোকমুখে শুনেছি দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এদেশের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে সবাই মিলে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন। তাদের এই ত্যাগের বিনিময় তারা কিছুই নিতে পারলেন না তবে আমাদেরে দিয়ে গেলেন একখন্ড স্বাধীন বাংলাদেশ, একটি লাল সবুজ পতাকা, একটি রক্তাক্ত ইতিহাস। এইসব বাস্তব কাহিনী সময়ের পরিক্রমায় চাপা পড়ে যায়। সচেতন মানুষ হিসেবে এইসব ইতিহাস জানতে হবে ও নতুন প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে হবে। 
এই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও সঠিক নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম এই দেশে না হলে হয়তো সারাটি জীবন পাকিস্তানের শাসনে থাকতে হতো। সবার দ্বারা সব কিছু হয়না। মহান রাব্বুল আলামীন এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ সৃষ্টি করেন যাদের ত্যাগ ও যোগ্য নেতৃত্বে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হয়। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান চির অমর ও অক্ষয়। 
পাকিস্তানিরা আমাদের মায়ের ভাষা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল, অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের উপর শোষণ করতে করতে যখন বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল, মা বোনের ইজ্জত রক্ষা কঠিন হয়ে গেলো, স্বাধীনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করার অধিকার হারিয়ে গেল তখন বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হলো, এই লড়াই ছিল আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এতে জিততে হবে নয়তো মরতে হবে। তখন বাংলার মানুষের প্রিয় নেতা, নিজের জীবনকে বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, আমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বলেন, তিনি আরও বলেন “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।” তার এ ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, সবাই নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে বেরিয়ে পড়েন। অবশেষে এই বীর বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানিরা পরাজয় মানতে বাধ্য হয়। আমরা এই পরাধীন ভূমিকে স্বাধীন করতে সক্ষম হই।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাঙালিরা যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলো, সেই জাতির জনককে কুচক্রি মহলের কুমন্ত্রণায় একদল পাষাণ সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায়ের সূচনা করে। তারা কি একবারও ভাবে নাই এই শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতার লোভে নয়, কোন ব্যক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখে নয়, বাঙালিদের জন্য, মাতৃভূমির সম্মান রক্ষা করার জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন। পাকিস্তানের করাচির কারাগার থেকে যখন তিনি জানতে পারলেন তাকে হত্যা করা হবে, তখন তিনি তাদের কাছে মাথা নত না করে এই কথা বললেন “তোমরা যদি আমাকে হত্যা কর তবে আমার দুঃখ নেই, আমার লাশ যেন পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়।” 
এই কথা থেকে আমরা কি বুঝতে পারিনা বাংলার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের জন্য তার হৃদয়ের টান কত বেশি ছিল। এই শেখ মুজিবকে ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে কিভাবে এই দেশে স্বাধীনভাবে শান্তিতে বসবাস করলো তা ভাবতে অবাক লাগে। কারো প্রতি অন্যায় করলে এর বিচার অবশ্যই হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার দেরিতে হলেও হয়েছে। আমি মনে করি বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস এক কথায় বলতে হলে আমরা বলবো সবাই একই সুরে ‘শেখ মুজিব মানে বাংলাদেশ’। তুমি বেঁচে থাক হাজার হাজার বছর প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।
লেখক : কলামিস্ট।

SUMMARY

1846-1.png