এডভোকেট মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী
বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ প্রেমিক নির্দলীয় ছাত্রদের স্বতঃস্ফুর্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি মোহজাল থেকে পুনঃজাগরিত হয়েছিল। তারই রেশ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ছয় দফা রাজনৈতিক দাবির মাধ্যমে বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সূচনা হলেও বাংলার সম্মিলিত ছাত্রদের এগারো দফাও পরিপূরক হিসাবে বিবেচিত হয়ে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সার্বজনীনতা দান করে। এসব আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিদেরকে শোষণ করতে পাকিস্তানীদের চালু করা দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িক নীতির মাধ্যমে জাতীয় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠতে থাকে। ঐ ঐক্যের বাস্তব প্রকাশ ঘটে বিগত সত্তর ষাট দশকের মধ্যদিকে প্রণিত ছয় দফা ও এগারো দফা ভিত্তিক জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গতাজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকে বাঙালি। জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ, আত্মোপলব্ধি, আত্ম-সচেতনতা ও আত্মত্যাগের বৎসর সত্তর ও একাত্তর।
একাত্তরের সূচনা মাস জানুয়ারি এবং ভাষা আন্দোলন-খ্যাত ফেব্রুয়ারি মাসে বর্ণিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত জাতীয় ঐক্য সর্বক্ষেত্রে মজবুত করার প্রয়াস চলে। পাকিস্তানিদের ক্রমবর্ধমান শোষণ ও নির্যাতনের আশাহত জাতির আশার আলো জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠন এবং বাঙালিদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সার্বিক অধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুদীর্ঘ দিনের অবহেলিত পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ঠিকানায় একটি সুখি সমাজ গঠনের স্বপ্নে বাঙালি জাতি উদ্বেলিত হতে থাকে।
সময় ও ¯্রােত কারও জন্যে বসে থাকে না। আসে একাত্তরের মার্চ। ইতিপূর্বে ঢাকায় মার্চের তিন তারিখে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক সে অধিবেশন বর্জনের হিং¯্র হুংকারের কারণে ভুট্টোরই দোসর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক জাতীয় সংসদের ঢাকার অধিবেশন স্থগিত হওয়ার ঘোষণা এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সরকার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মারাত্মক হোচট খায়। বাংলার আনাচে-কানাচে আরম্ভ হয় গণরায়ের বাস্তবায়ন না করায় বাধাহীন গণআন্দোলন। দেশব্যাপী পাকিস্তানি সামরিক জান্তা স্বাধীন দেশের মালিক ও সকল ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ প্রদত্ত ট্যাক্সের টাকায় কেনা দেশ ও জনরক্ষার জন্য কেনা অস্ত্রের অপব্যবহার করে দেশের নিরীহ জনগণকে বন্য জীবজন্তুর ন্যায় নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। দিন কয়েকের এ নির্বিচারে হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুর ডাকে গণসমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হতে থাকে।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আদেশ স্থগিত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা-সিলেটের আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সবাই যথাশীঘ্র সম্ভব সংসদের অধিবেশন ডেকে জনগণের নির্বাচিত দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করাসহ গণরায় বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকি। আমরা-সিলেটের আওয়ামীলীগের সাবেক এডভোকেট মরহুম হবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজি, যুবলীগ নেতা মরহুম ডাঃ নুরুল হোসেন চঞ্চল, মরহুম এনামুল হক, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মরহুম আখতার আহমদ এবং ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ মরহুম এনামুল হক চৌধুরী, শাহ আজিজুর রহমান, সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, কলমদর আলী, মরহুম সাজ্জাদুর রহমান, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, সুয়েব আহমদ চৌধুরী, রফিকুল হক, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট সিদ্দিক আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল মোক্তাদিরসহ স্মৃতিতে নাম না আসা অনেকেই। তদানিন্তন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণে শহর ও জেলার সর্বত্র সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং চলতে থাকে। এ প্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের নির্যাতিত শোষিত জনগণ গণতন্ত্রের শুভলগ্নে এহেন স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠতে থাকলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিসেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলির কারণে অসংখ্য নিরীহ জনগণ হতাহত হতে থাকে। ফলে দেশের সর্বত্র শোকের ছায়া নামতে থাকে এবং জাতি তার নির্বাচিত দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুসহ দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়ার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগ মার্চের সাত তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক গণজমায়েতের আহবান করে। সিলেটসহ সারাদেশ থেকেই আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগসহ রাজনীতিতে উৎসাহী নিরপেক্ষ জনগণও বিপুল সংখ্যায় সে সভায় যোগদান করে।
৭ই মার্চের রেসকোর্সের সভাটি ছিল তখনকার সময়ের সর্ববৃহৎ গণজমায়েত। সারা রেসকোর্স ময়দান কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়। সভায় শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন তদানিন্তন যুব-নেতৃবৃন্দ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান, মরহুম আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমদ, আ.স.ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকীসহ যুব নেতৃবৃন্দ এবং লাঠি হাতে লালফিতা মাথায় বাধা শ্রমিকলীগের নেতা ও কর্মীবৃন্দ। সভায় একমাত্র বক্তাই ছিলেন জাতির অবিসংবাদিত ও নির্বাচিত নেতা এবং রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বিগত কয়েকদিনে পাকি-সেনাবাহিনী কর্র্তৃক নিরীহ জনগণের হতাহতের বর্ণনা গণজমায়েতে তুলে ধরেন। সাথে সাথে ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে তদানীন্তন সামরিক সরকারের সাথে ঢাকায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবান, নির্বাচিতদেরকে দিয়ে সরকার গঠন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলাপ আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ-কোন কিছু গোপন না করেই সাবলীল ও তার স্বভাব সুলভ প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেন এবং এ ব্যাপারে তিনির পরামর্শ ও জনগণকে অবহিত করেন। ভাষণের শেষের দিকে দেশ রক্ষায় জনগণের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে কুকুর-বিড়ালের মত এমনভাবে হত্যা করা হয়েছিল যেন বাংলার মানুষ মানুষই নয়। হৃদয়বিদারক এসব ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বক্তব্যের মাঝে মধ্যে কাদু কাদু অবস্থায় বাকরুদ্ধ হয়ে যান। কিন্তু পরক্ষণেই জনগণের প্রতি ভালবাসার হৃদিক দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে বঙ্গসার্দুল লাখো জনতার সামনেই গর্জে উঠে বলেন-আমার আর একজন লোককে হত্যা করা হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ সাথে সাথে যার যা আছে তা দিয়ে রুখে দাঁড়াতে-দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন-তিনি না থাকলেও পাকিস্তানিদের সাথে অসহযোগ ও প্রতিরোধ সংগ্রাম যেন চালিয়ে যাওয়া হয়। ভাষণের শেষে বঙ্গসার্দুল আবারও হুংকার দিয়ে বললেন-রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব জাতিকে মুক্ত করে ছাড়ব। মনে রাখবা-এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যা ইতিহাসে রাজনীতির এ মহাকবির জাতীয় মুক্তির সনেট হিসেবে লিপিবদ্ধ হলো। সম্প্রতি এ ভাষণ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে অমরত্ব লাভ করে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ দেশের রাজনীতিক মহল সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ তবে জোরালো রাজনৈতিক চাপ হিসাবেই বিবেচনা করেছিলেন। কারণ আমেরিকা ও চীনের মত বড় শক্তির সমর্থনসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত প্রায় লক্ষ খানেক পাকি সেনাবাহিনীর সতর্ক ও সক্রিয় উপস্থিতিতে-যার যা আছে তা দিয়ে পাকি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রায় আত্মঘাতি সম্মুখ যুদ্ধ করা সঠিকপন্থা ছিল না। তবে হ্যাঁ আমরা মহাশক্তিধর আমেরিকার বিরুদ্ধে নিরীহ কিন্তু দুঃসাহসিক ও দেশপ্রেমিক ভিয়েতনামবাসীদের যুদ্ধের ন্যায় আপামর জনগণের সহযোগিতায় গোপন গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশপ্রেমিক ও সাহসী ছাত্র জনতার সহযোগিতায় দেশের আনাচে-কানাচে অবস্থিত দুশমন ও দখলদার পাকি সেনাদের খাদ্য, যুদ্ধের রসদ, খাবার পানিসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ বন্ধ করে। বাধা দিয়ে ভাটি অঞ্চলে সাতার না জানা পাকি সেনাদেরকে অতর্কিত আক্রমণ করে ও তাদের নৌযান ডুবিয়ে দিয়ে তাদেরকে ভাতে ও পানিতে মেরে তাদের মনোবল ধ্বংস করে প্রাকৃতিক ভাবেই তাদেরকে পরাজিত করতে পারি। আমরা বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা বাঁশের লাঠি, কাঠের ডামি রাইফেল নিয়ে বিভিন্ন সময় ও স্থানে সামরিক কায়দায় মহড়াসহ মার্চ করে অনাগত দিনের অশুভ সংকেতের মোকাবেলা ও সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। এ উপলক্ষে যুবলীগ নেতা মরহুম ডাঃ চঞ্চল ও বর্তমান কুমিল্লাস্থ ডাঃ শহীদুল্লাহ এবং সিলেট টেকনিক্যাল স্কুলের তদানিন্তন শিক্ষক জনাব পাটোয়ারীর প্রচেষ্টায় কিছু কিছু হাত বা পেট্রোল বোমা ইত্যাদি অতি গোপনে বানানো ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখযোগ্য।
দুই দিনের পর অর্থাৎ ৯ই মার্চ মজলুম জননেতা মৌলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় পাকি সেনা কর্তৃক নির্বিচারে বাঙালি হত্যার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করেন এবং সর্বশেষ বলেন, তিনি অনেক পূর্বেই অর্থাৎ কাগমারি সম্মেলনেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের কারণে তাদের সাথে একসঙ্গে বসবাস সম্ভব নয় বলে তাদেরকে পরিস্কার ভাবেই-আসসালামু আলাইকুম বলে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন এবং এখন বাঙালিদের উপর তাদের অমানবিক অত্যাচারের কারণে সে বিদায় বাণী স্থায়ীভাবে কার্যকর করার সময় এসেছিল।
ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দিক নির্দেশনার আলোকে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আমরা আম্বরখানাস্থ তদানিন্তন সিলেট সদর মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম ডাঃ আব্দুল মালিকের বাসায় সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রাম পরিচালনার কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি নেই। কমিটির আহবায়ক করা হয় সিলেট জেলার কার্যকরি কমিটির প্রবীণ সদস্য প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ভাষা সৈনিক মরহুম সাদাত খানকে, কোষাধ্যক্ষ করা হয় বর্ণিত আওয়ামীলীগ নেতা ও সিলেট সদর থেকে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত এবং পরবর্তীতে গণপরিষদ সদস্য ডাঃ আব্দুল মালিককে সদস্য করা হয়, তদানিন্তন জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আব্দুল মোমেন, জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মরহুম মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক মরহুম সিরাজুল ইসলাম, জেলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক বর্তমানে এডভোকেট শাহ মোদাব্বের আলী এবং জেলা কার্যকরি কমিটির সদস্য স্বাধীনতা পরবর্তী জেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক) আমি এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরীসহ সাত সদস্যের কমিটি। জেলা আওয়ামীলীগ সম্পাদক জননেতা মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজীকে বৃহত্তর সিলেটের আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। সদর মহকুমা আওয়ামীলীগ সম্পাদক মরহুম জমির উদ্দিনকে আহবায়ক করে সদর মহকুমা আওয়ামীলীগ সংগ্রাম কমিটিও গঠন করা হয় এবং একইভাবে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জেও আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার প্রস্তুতি নেয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকি সামরিক জান্তার নেতা জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য ঢাকায় আসেন এবং দেশপ্রেমিক জনতার উপর পাকি সেনাদের নির্বিচারে গুলিবর্ষণের মাত্রাও কমে আসে। তবে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনার মুখে রেখে কুচক্রী পাকি সামরিক জান্তা তাদের পশ্চিম পাকিস্তান দোসর জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমর্থনে পূর্ব বাংলায় জনগণকে স্থায়ীভাবে দাবিয়ে রাখতে বাঙালিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে-যার প্রতিক্রিয়া ২৫শে মার্চের কালোরাত্রি থেকেই শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বাঙালি জাতিও আত্মসমর্পন না করে ব্যাঘ্রের মতোই পাকি দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রথমে প্রতিরোধ এবং পরে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গর্জে উঠে। মনে রাখতে হবে পরবর্তীতে লক্ষ শহীদের রক্তে ভাস্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজও অবহেলিত দেশবাসীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি আসেনি বিধায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আজও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সে অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধকে চালিয়ে নিতে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনায় সার্বিক মুক্তি অর্জনের জন্য দেশের সচেতন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিঃ দ্রঃ স্মৃতির সীমাবদ্ধতার জন্য মুক্তি সংগ্রামের সুদূর অতীতের কর্মকান্ড সম্বন্ধে অনিচ্ছাকৃত অনেক ভুলত্রুটি থাকতেই পারে-অনেকের নামও কার্যের উল্লেখ নাও থাকতে পারে-যার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।