অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চ :ষষ্ঠ দিন


১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ষষ্ঠ দিন আজ। পুরো বাঙালী জাতি তখন স্বাধীনতার স্বপ্নে যেমন উদ্দীপ্ত, তেমনি ফুঁসছিল বিক্ষোভ ও ঘৃণায়। স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানী সামরিক হানাদাররা। 
অন্যদিকে, যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুট বন্ধনে বীর বাঙালী। সভা, মিছিল, কারফিউ ভঙ্গ, গুলিতে বাঙালী হত্যা-সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময়।
১৯৭১ সালের ৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছিল সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত হরতাল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন একাত্তরের এইদিন দুপুরে। তার ভাষণের পুরোটা জুড়েই ছিল বীর বাঙালীকে উদ্দেশ্য করে হুমকি ও ধমকি। ছিল পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালীকে শায়েস্তা করার হুমকি। 
পরদিন ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বাঙালীর মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে তিনি কী বলবেন? বহুল প্রতিক্ষিত স্বাধীনতার ঘোষণা তাঁর বর্জকণ্ঠে উচ্চারিত হবে কি? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত ছিল না সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর মধ্যে। একাত্তরের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচী ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি-ধমকি স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে হতাশ, ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করে তুলে। এমনিতেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর তা নতুন মাত্রা পায়। ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে স্বাধীনতাকামী বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার বাঙালী। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অধীর অপেক্ষা- দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানে আয়োজিত জনসভার দিকে। 
এদিকে, অগ্নিগর্ভ মার্চে বাঙালীর প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা। কিভাবে বাঙালীর এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায়, সে ব্যাপারে নীল নকশা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর এই বাঁধ ভাঙ্গা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে উঠে পাকিস্তানের জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনভাবেই যাতে বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয় সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি ধমকিও দেয়া হয়। 
বাঙালী জাতির এমনই আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল প্রাণঘাতী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর বাঙালী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছিনিয়ে এনেছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি তাই নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছে দেশ মাতৃকার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বাঙালীর জীবনে এবারের মার্চ মাস এসেছে এক অন্যরকম পরিস্থিতিতে। একাত্তরের মতোই স্বাধীনতা বিরোধীদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে জেগে উঠেছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। শুরু করেছে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।

SUMMARY

1828-1.png