বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে আজকের বাংলাদেশ


কেয়া চৌধুরী 
আজ ১০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী কারাগার থেকে ১৯৭২ সালে ৮ জানুয়ারি মুক্ত হয়ে, স্বদেশের মাটিতে ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির বুকে ফিরে আসেন। দীর্ঘ নয় মাস  রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, বাঙালি তার বিজয় অর্জন করে। অবাক বিস্ময়ে বিশ^ সেদিন  বাঙালির শেষ্ঠ অর্জনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল।
বিশ^ নেতৃবৃন্দর চাপে পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠীর জাতির জনক শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একটি জাতির বীরত্বপূর্ণ জন্ম এবং একজন আত্মত্যাগী জনকের অভিষেক সেদিন বাঙালিকে বিশে^র কাছে আপন মহিমায় মহিমান্বিত করে তুলেছিল। 
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার ডাক দেন। পাকিস্তানী সেনা বাহিনীকে পরাস্ত করতে জনগনকে আহ্বান জানালে, নজিরবীহিন ত্যাগ ও সাহসিকতায় বীর বাঙালি জীবনের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে রক্তিম স্বাধীনতা। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিড়ি বয়ে বিশ^ মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্টের প্রথম পদযাত্রা। 
যুদ্ধবিধস্ত বাংলার মাটিতে দাড়িয়ে আবারো বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখানো শুরু করলেন। যে স্বপ্নের নাম বঙ্গবন্ধুর মুখে উ্চ্চারিত হওয়া ‘সোনার বাংলা’। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধান পাশ হয়। আর এই সংবিধান ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রক্ষাকবচ। অনাগত নতুন প্রজন্মকে বিশে^ দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবার জন্য এই সংবিধান মূল ভীত হিসেবে দাঁড়াবার প্রতিষ্ঠান।
১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর সংবিধান বিলের উপর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিলাম বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে হবে, বাংলার মানুষ সুখী হবে, বাংলার সম্পদ বাঙালিরা ভোগ করবে। সেই জন্য সংগ্রাম করেছিলাম’।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো। সেই স্বপ্ন পূরণে ভবিষৎ বংশধরদের জন্য গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিতিতে একটি শোষণহীন সমাজভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আঙ্খাকা ছিল; বঙ্গবন্ধুর অনুভুতিতিতে শহীদের রক্তদানের সার্থক বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর বিশ^াসের ‘গণতন্ত্র’ ছিল সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করা। আর বঙ্গবন্ধু হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে জনগনের কথা বলে। জনগনের কল্যানে কাজ করে। এটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দর্শন।
কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন সামরিক জান্তার পৃষ্ঠপোষকতায় বা ‘মার্শাল ল’ জারি করে বসিয়ে দেওয়া  রাজনৈতিক দল নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে  ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’  অসাম্প্রদায়িক মানসিকতায়, বাংলাদেশের মানুষের মনের আকাঙ্গার অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করা গণমানুষের দল।
দেশের মানুষের ক্ষতি হয়, দেশের স্বার্থ নষ্ট হয়, এমন কোন কাজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। মাত্র নয় মাসের মাথায়, জনগণকে পবিত্র সংবিধান উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার রক্ত দিয়ে লেখা-আমাদের বাংলা জাতীয়তাবাদ। আর সেই কারণে, আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক রাজনীতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে।
উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে, বাংলাদেশ আওযামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিড়ি’ বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।  আজকের ১৬ কোটি জনগনের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীক হয়ে,  বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই হাত ধরে নিশ্চিতভাবে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আমাদেরকে, বায়ান্নর ও একাত্তরের  অর্জিত গৌরবের পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এটি সম্ভব হতে পারছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনা।
১৯৯৬ সাল  থেকে শেখ হাসিনা সরকার জনকল্যাণে নানামুখী কর্মসুচী হাতে নেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্টায় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ব্যক্তি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার  এক ও অভিন্ন লক্ষ্য।
মানব সম্পদ উন্নয়নসহ সমাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।  বাংলাদেশের মানুষের আয় বেড়েছে, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্দি পেয়েছে। জীবনযাত্রার  মান উন্নত হয়েছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি গবেষণা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা বাণিজ্য,  অবকাঠামোর উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের আত্মবিশ^াস তৈরীতে দিনে-দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে, পদ্মাসেতুর মত দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করার সাহস নিতে পারে। একটি মানুষও গৃহহীন না থাকার প্রত্যয়ে, “আশ্রয়ন প্রকল্প”, “একটি বাড়ি একটি খামার” দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফুটাচ্ছে। ঘরে-ঘরে বিদ্যুতের আলো জ¦ালিয়ে, শেখ হাসিনার সরকার প্রতিটি নাগরিকের মনে “আকাঙ্খাকার প্রদীপ” জ¦ালিয়ে তুলছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশে^ প্রশংসিত বাংলাদেশ। প্রতিটি নারীকে আরও বেশি এগিয়ে যেতে সাহস যোগাচ্ছে।  
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ঘরের কাছে স্বাস্থ্য সেবা, ৩২ পদের বিনামূল্যে  সরকারি ঔষধ; বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বছরের পহেলা দিন, শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাথীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, ৩৬কোটি ২২লাখ নতুন বই।
একাত্তরে দেশ স্বাধীনের পর,  বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। জনগণের অন্তরে আদর্শের প্রদীপ জ¦ালিয়ে, সকলকে নিয়ে, একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রতিটি স্তরে স্তরে বীজ বপন করেছিলেন, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কিন্তু ৭৫এর ১৫ আগষ্ট, বিষবাষ্পে “সোনার বাংলাদেশে”র অগ্রগতিকে অঙ্কুরে নষ্ট করে দেয় কুচক্রিরা।
ফলে বহুদিন কন্ঠরুদ্ধ ছিল “জয় বাংলা”। কফিনবন্দি হয়েছিল, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”। এরপর এলো শহীদের রক্তে ভেজা “লাল সবুজ” পতাকায় জঙ্গিবাদের কাল নিশানার আড়ালে। যুদ্ধাপরাধীদের উত্থানের অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, পুরস্কারে, পদ পদবীতে, রঙ্গমঞ্চে মুখোশধারী নেতার মিথ্যাচারের “রাজনীতির মহাউৎসব”। এ ছিল অন্ধকার গলিতে প্রবেশের এক “অচেনা বাংলাদেশ”! দিশাহারা, আদর্শহীন, কঙ্কালসার, মেধাহীন বেড়ে ওঠা এক নতুন প্রজন্ম।
যারা জাতীয় সংগীতের মূর্ছনায় অশ্রুসিক্ত হয় না। যাদের কালিমা যুক্ত হাত বাংলাদেশকে কলংকিত করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস  শুনে যে প্রজন্মের বুক গর্বে ভরে ওঠে না ! বঙ্গবন্ধুর খুনি আর যুদ্ধাপরাধীরা যখন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়! সেই দৃশ্য দেখে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ স্বজনদের চোখে অশ্রুর বদলে, রক্ত ঝরে! সেই অন্ধকার বাংলাদেশকে; ২১ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা’র এই বিজয়; আবারো বাংলাদেশকে নতুন  করে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগায়। বাঙালি জাতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। 
শুরু হয় বাংলাদেশের নতুন গল্প। এই গল্প জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে লাল-সবুজের নিশানা নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কের এগিয়ে যাওয়ার অধ্যায়। জনগণকে  সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে “সচ্ছতা” “জবাবদিহিতা” ও জনগণের প্রতি “দায়বদ্ধতায়” আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। আর, এই এগিয়ে যাওয়া হবে; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিড়ি বয়ে, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার “কাঙ্খিত উন্নত সোনার বাংলাদেশ”।
লেখক : সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী

SUMMARY

1823-1.png