স্মৃতি ও চেতনায় বঙ্গবন্ধু- রহমত উল্লাহ (জাহাঙ্গীর)


বাংলা, বাঙালি, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু একই সুতোয় বাঁধা। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি কখনো ভুলতে পারবেন না। সেই সময়টা ছিল জাতির জীবনে এক সন্ধিক্ষণ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমন লোকজনের কাছেও সেই সময়টা স্মৃতির বড় সঞ্চয়। আমি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু এর আগে ছিলাম রাজনীতিতে সক্রিয়। সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং রাজনীতির সেই সময়ের ছবি আমার স্মৃতির ভাড়ারে এখনো সজীব রয়েছে। আমি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমার মনে পড়ে, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করা হয়। তারই প্রতিবাদে প্রথমে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগ জোড়ালো আন্দোলন শুরু করে। তারই পাশাপাশি আপামর জনতা এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলাকে ধিক্কার জানায়। এই মামলায় শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। আর্মি অফিসার সি.এস.পি অফিসার আরও অনেক বড় বড় আমলাদেরকে এই মামলায় জড়ানো হয়। সামরিক আদালতে এই মামলার বিচার চলতে থাকে।

সামরিক বাহিনীর ইচ্ছাই ছিল শেখ মুজিবকে ফাঁসানো ও মৃত্যুদন্ড দেওয়া। এরই মধ্যে সিলেটে এর প্রতিবাদ স্বরূপ মিজানুর রহমান চৌধুরী, আমিনা বেগম আরও অনেকে জনসভা ও বিক্ষোভ করেন। তাদের মধ্যে একজন পল্লী কবি ও গায়ক মো. শফি গান গেয়ে আমজনতাকে উদ্বুদ্ধ করেন। এই জনসভাতেই শফির সাথে আমার পরিচয় হয়। এই সময় মোনেম খান, সবুর খান, দেওয়ান বাছিত, ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের বাংলায় খুব দাপট ছিল। সিলেটের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন দেওয়ান বাছিত। তখন সরকারি দলের নির্দেশ ছিল যে, আওয়ামী লীগ বা বিরোধী দলের কাউকে যেন কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা এমনকি সিলেটের কোনো হোটেলে থাকার জায়গা না দেয়া হয়। আমি শফির থাকা খাওয়ার দায়িত্ব নিলাম। তখন দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন সিলেটের আওয়ামী লীগের প্রধান। গাজী সাহেব শফির দায়িত্ব নেওয়ায় আমার উপর খুব খুশি হলেন। শফি তিনদিন সিলেটে ছিল। যাওয়ার সময় আমি তাকে ট্রেনে পৌঁছে দিলাম ও তার পকেটে ১০ টাকার দু’টো নোট ভরে দিলাম। সে আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরল। তারপর বেশ কিছুদিন অতিক্রান্ত হল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবসহ সকল আসামীদেরকে মুক্তি দেওয়া হল। এরই মধ্যে জানা গেল শেখ মুজিব সিলেটে আসবেন ও সিলেটের স্টেডিয়ামে জনসভা করবেন। শেখ মুজিবের সাথে আসলেন তাজ উদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও নাম না জানা আরও অনেকে। শফিতো সঙ্গে ছিলই।

আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রেলস্টেশন থেকে সংবর্ধনা জানিয়ে সার্কিট হাউসে নিয়ে আসলাম। বিকাল তিনটার দিকে জনসভা শুরু হল এবং স্টেডিয়াম যথারীতি লোকে লোকারণ্য ছিল। সন্ধ্যার পূর্বে জনসভা শেষ হল। শফি এই জনসভায় গান পরিবেশন করেছিল। সন্ধার পর রাত আটটার দিকে আমি ও শফি গাজী সাহেবের বাসায় যাই। গাজী সাহেবের বাসায় প্রবেশ মাত্রই শেখ মুজিব  বলে উঠলেন, ‘কীরে শফি তুই কই?’ শফি বলে উঠল শেখ সাহেব আজ আপনি মুক্ত, আপনার সুদিন চলছে। আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খীর এখন আর অভাব হবেনা। আপনার দুর্দিনে সিলেটে যিনি আমাদের থাকা-খাওয়া ও আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তিনি হলেন এই জাহাঙ্গীর ভাই। সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিব আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ও তার গলার ফুলের মালা দিয়ে আমায় বরণ করলেন এবং বললেন আমার দুর্দিনে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তাদের আমি কখনও ভুলবনা। পরদিন শেখ মুজিব সহ নেতৃবৃন্দকে বিমানবন্দরে বিদায় জানালাম।

শফির গাওয়া গানের কয়েক চরণ যতটুকু আমার মনে পড়ে-

(১)

শহীদ একবার আসিয়া তোমার / সোনার বাংলা যাওনা দেখিয়ারে / প্রাণের নেতা সোহরাওয়ার্দী / গণতন্ত্রের রবি হায়রে ... / যাওয়ার কালে রেখে গেলেন / বিপ্লবী এক শিষ্যকে। (শেখ মুজিব)

(২)

আমরা ভুলবনা ভুলবনা যুদ্ধকালীন বিপদ ভুলবনা। / হিন্দুস্থানে করল যখন লাহোর আক্রমণ, / শূন্য অস্ত্রবিহীন বাংলা, আতঙ্কিত মন, / তরা জাননা, জাননা যুদ্ধকালীন বিপদ ভুলবনা। / ছিনা মোটা পাগড়িয়ালা গাল ভরা তার মোছ / এবার যুদ্ধে ধরা পড়ছে যত মুদ্রা দোষ। / তরা পারতানা, পারতানা যুদ্ধকালীন বিপদ ভুলবনা। / লাখো সৈন্য, হাজার ট্যাংক, অসংখ্য বিমান / শূন্য অস্ত্র বিহীন বাংলা, আতঙ্কিত মন / তরা জাননা, জাননা যুদ্ধকালীন বিপদ ভুলবনা। / মোটা তাজা দেখতে লাগে গুড়া হাতির মত / বাঙালি না হলে এবার লাহোর লই যেত।

মূলত রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকলেও আমি একজন সৌখিন আলোক চিত্রশিল্পী ছিলাম। পাকিস্তান আমলে আমি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদদের ছবি তুলেছি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি বেশি তুলেছিলাম। আমার হাতে তুলা ছবির ২টা অ্যালবাম আমি বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলাম। প্রায়ই রাতে বিভিন্ন মিটিং বা জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধু সার্কিট হাউসে ফিরতেন। আমি অধীর আগ্রহে বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য সেখানে অপেক্ষা করতাম। তিনি ফিরে এসে আমাকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরতেন ও বলতেন, ‘তুমি আমার অনেক ছবি তুলেছ, আমাকে দিতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু সিলেট থেকে ঢাকা ফেরার পথে সিলেট বিমানবন্দরে আমাকে আলিঙ্গন করে বললেন, ‘ঢাকা যাও তো আমার সাথে দেখা করো।’ মাস দেড়েক পর আমি ঢাকা যাই। তখন ৫১ পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। সন্ধ্যার সময় আমি আওয়ামী লীগের অফিসে যাই। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক ছিল, আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম বঙ্গবন্ধু আজ কি অফিসে আসবেন? উনি আমায় বললেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসবেন। আমি বারান্দায় অপেক্ষা করতে থাকি। হঠাৎ সাদা ঞড়ুড়ঃধ কার এ করে  বঙ্গবন্ধু এলেন। অফিস থেকে ২০-২৫ গজ দূরে গাড়ি থেকে নেমে তাজউদ্দিন আহমেদের সাথে কথা বলতে বলতে ধীর পায়ে অফিসের দিকে আসছিলেন বঙ্গবন্ধু।

আওয়ামী লীগের অফিস রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে ছিল। আমি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। নিচ থেকে তিনি আমাকে দেখে চিরাচরিত হাসিমাখা মুখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আরে জাহাঙ্গীর! তুমি সিলেট থেকে কবে এসেছ?’ শুনে অবাক হয়ে যাই যে মানুষটা প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সাথে সাক্ষাৎ করেন অথচ তাঁর সাথে আমার দেখা মুহূর্তের, তিনি আমার নাম ধরে ডাকলেন। তিনি আমাকে অফিসের ভেতরে নিয়ে গেলেন, কাছে বসালেন, সিলেটের কিছু খবরা-খবর নিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন সিলেটের নেতারা কেমন আছেন? বঙ্গবন্ধু নিজে খরঢ়ঃড়হ ঃবধ নধম চা বানিয়ে ও ১টা প্লেটে গ্লুকোজ বিস্কুট আমায় দিলেন ও নিজে খেলেন। ইতিমধ্যে অনেক নেতা টেবিলের চতুর্দিকে জড়ো হয়েছেন। কিছু সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। নেতাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, ডাঃ মাহমুদ উল্লাহ যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, শ্রী ফণিবোসন মজুমদার। বঙ্গবন্ধু হঠাৎ বলে উঠলেন, কী লাল বাহিনী? আমি দরজার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি গৌস ভাই, মরহুম ডা. চঞ্চল ভাই এর ছোট ভাই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। আমরা ছিলাম সমবয়সী। আমি উনার দিকে তাকাতেই আমাদের চোখে চোখে ভাব বিনিময় হল। তখন আমার বয়স কম। ঐ বয়সে এত বড় বড় নেতাদের সাথে বসে আছি তাও আবার বঙ্গবন্ধুর ডানপাশের চেয়ারে, একদিকে খুশিতে আত্মহারা ও অন্যদিকে ভয়ও হচ্ছে কোন নেতা যদি শক্ত প্রশ্ন করে বসেন। এই ভেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় যে, কোন নেতা আমায় কোন প্রশ্ন করেননি, যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাশে ছিলেন। সকলের চা বিস্কুট খাওয়া হলো, ভাবলাম বঙ্গবন্ধুর সাথে নেতাদের জরুরী আলাপের সময় হয়ে গেছে। তখন আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম আমি এখন উঠি, তিনি বললেন, যাবে? তবে সিলেট যাবে কবে? আমি বললাম, আগামীকাল। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন ‘জাহাঙ্গীর, তুমি এসেছ, কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না।’ তখন আমি আওয়ামী লীগ অফিসের বারান্দায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ সম্পর্কিত অনেক বই দেখলাম। আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে আবদার করলাম, এই বইগুলো আমি কিভাবে পেতে পারি? তখন বঙ্গবন্ধু, মুমিন, মুমিন বলে ডাকতে লাগলেন। মুমিন সাহেব এলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, তুমি আমার জাহাঙ্গীরকে এই বইগুলো থেকে একটা করে কপি দিয়ে দাও। ভালো করে বেঁধে দিবে কিন্তু সিলেটে নিয়ে যাবে। আমাকে প্রায় ৮০টির মতো বই দেয়া হল।

বঙ্গবন্ধু আমায় বিদায় দিলেন মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে। বইয়ের স্তুপ দেখে বঙ্গবন্ধু মুমিনকে বললেন, রিক্সা ডেকে বইগুলো রিক্সায় তুলে দিতে। বইগুলো পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু দুঃখের বিষয় বইগুলো বেশিদিন আমি রাখতে পারিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার সংগৃহীত সকল বই ও ফটো, নেগেটিভ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আজ ফটোগুলো বা নেগেটিভগুলো থাকলে একটা অ্যালবাম তৈরি করা যেত। সেগুলোর কয়েকটি আছে কিন্তু তা দিয়ে অ্যালবাম তৈরি করা সম্ভব নয়। আমি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলাম। আমি রাজনীতি করেছিলাম নিঃস্বার্থভাবে, কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। দুঃখ হয় তাদের জন্য, যাদের কিছুই ছিল না বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, লুটপাট করেছে, বিড়ি খাওয়ার মত পয়সা যাদের ছিল না অথচ তারাই আজ ৫৫৫ বেনসন ফুকছে। এদিকে ২৫ মার্চের পর আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিন তিন বার লুট হয়েছে। এতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার বর্তমান বাজারমূল্য হবে প্রায় কোটি টাকার উপর। আমরা এক বাক্যে সকলে আওয়ামী লীগ করেছি স্বাধীনতা আন্দোলন করেছি, দেশে থেকে স্বাধীনতার পক্ষে যতটুকু পারি করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কারও কাছে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করিনি একথা বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন কিংবা অতীতে যারা ক্ষমতায় চিলেন তারা কেউই বলতে পারবেন না।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী প্রচারনায় সিলেট আসেন এবং দুপুরের পর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জনসভা করেন। আমি ঐ জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি কারণ ১৮ই ফেব্রুয়ারি আমার বিবাহ ছিল। আমি গাজী সাহেবকে বলেছিলাম, আমিতো জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারব না। গাজী সাহেব আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যেতে পারবেনা তা আমি জানি। রাত ১১টার দিকে কার্ড নিয়ে সার্কিট হাউসে এসো।’ গাজী সাহেবের কথা মতো আমি রাত ১১টার দিকেই সার্কিট হাউসে পৌঁছাই এবং আমার সঙ্গে ছিল আমার তালতো ভাই মহসিন রশিদ। বঙ্গবন্ধুর রুম লোকে ঠাসা ছিল। আমরা দরজার পাশে যেতে না যেতেই গাজী সাহেব আমাদের ডেকে ভিতরে নিলেন। বঙ্গবন্ধুর চোখে চোখ পড়তেই আমি উনাকে সালাম করলাম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন ‘জাহাঙ্গীর, আজ তুমি আমার ছবি তুলনি, আমার জনসভায়ও তোমায় দেখলাম না?

গাজী সাহেব বললেন ওর একটু অসুবিধা ছিল। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আমি আজ সিলেটে এসেছি জাহাঙ্গীরের কি অসুবিধা থাকতে পারে? আবার গাজী সাহেব বললেন, ‘না বঙ্গবন্ধু আগামীকাল ওর বিয়ে, তাই সে জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারোিন। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমাকে বুকে টেনে নিলেন এবং মাথায়, মুখে হাত বুলিয়ে আদর করলেন। ‘দোয়া করি, আল্লাহর কাছে তোমরা সুখী হও।’ এই বলে বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য দোয়া করলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার বিবাহের আমন্ত্রণ পত্রটি উনাকে দিলাম ও আমার বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করলাম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে গাজী সাহেবকে বললেন, আপনি আমার তরফ থেকে বরযাত্রী যাবেন। আগামীকাল ১১টার সময় মৌলভীবাজারে আমার জনসভা না থাকলে আমি অবশ্যই তোমার বাড়িতে যেতাম ও বরযাত্রী হিসেবে তোমার বিয়েতে অংশগ্রহণ করতাম। পরদিন গাজী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বিদায় দিয়ে আমার বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন। আমার একটাই আক্ষেপ, বঙ্গবন্ধুকে আমার বাড়ীতে আনতে পারিনি। দেখা হলেই আমি বঙ্গবন্ধুকে বলতাম আপনি কি একদিন আমার বাড়িতে যাবেন না? তিনি বলতেন, সময় করে যাব একদিন। সময় কি আর হল? আজও আমি সেই স্মৃতিগুলো লালন করছি।

SUMMARY

1818-1.png