বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে-মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে-মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

 
একথা ঠিক যে ইতিহাসের প্রকৃত রচয়িতা হলো জনগণ। সাথে সাথে একথাও সঠিক যে, ইতিহাস নির্মাণে ব্যক্তির ভূমিকাও সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যায় না। দল ও শ্রেণির সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও একজন ব্যক্তি সেই সীমাবদ্ধতাকে খানিকটা পরিমাণে অতিক্রম করে ও ইতিহাসের চাহিদা অনুসারে অবদান রেখে, ইতিহাসের নির্মাতা হয়ে উঠতে সক্ষম হন। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মাণে সেরূপ এক অনন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একথা বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু যেমন একদিকে ছিলেন ইতিহাসের ফসল, তেমনই একই সাথে তিনি ছিলেন ইতিহাসের স্রষ্টা-রূপকার। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা। তাছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে প্রগতিশীল চরিত্র লাভ করেছিল তার পেছনে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাব থাকলেও, সে প্রভাবকে মূর্ত রূপ দেয়া বহুলাংশে সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ভূমিকা ও অবদানের কারণে।

কোনো মানুষই সবধরনের দুর্বলতা সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত একেকটি বিমূর্ত বিশুদ্ধজন নয়। মানুষ ফেরেশতাও নয়। মানুষ মাত্রই হলো ইতিহাসের ফসল। এটিও ইতিহাসেরই কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের শ্রেণি ভিত্তি আগাগোড়াই (বঙ্গবন্ধুর সময়কালে) ছিল বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়া (এখন অবশ্য সেই দলের নেতৃত্বের ওপর লুটেরা ধনিক শ্রেণির প্রভাবই প্রধান)। বঙ্গবন্ধুর নিজের শ্রেণি অবস্থানও ছিল সেরূপ। দলের ও তার নিজের শ্রেণি ভিত্তির এই বৈশিষ্ট্যের গণ্ডির মধ্যে থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার ক্রম-অগ্রসরমান বিবর্তন ঘটেছে। এই সীমার মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। এখানেই তাঁর ঐতিহাসিক অবদানের প্রকাশ।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা, কথাবার্তা, লেখালেখি কম হচ্ছে না। আবেগ ও সমকালীনতার সীমা ছাড়িয়ে সেসব আলোচনায় আরো গভীরতা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ গুণাবলি ও সাথে সাথে তাঁর সীমাবদ্ধতা নিয়ে গভীরতর বিশ্লেষণ-মূল্যায়ন প্রয়োজন। নির্ধারণ করা প্রয়োজন, ইতিহাসের দিগন্ত বিস্তৃত পরিধিতে অবদানের স্বরূপ ও পরিমাণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা, এমনকি অনেকক্ষেত্রে ‘আত্মস্বার্থবোধ’ প্রসূত স্তুতি-বন্দনা যতো হচ্ছে, ইতিহাসের মহানায়কের আসনে তাঁর পথপরিক্রমণ সম্পর্কে গভীরতা সম্পন্ন আলোচনা সে তুলনায় খুব কমই হচ্ছে। অথচ বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ অবদানের বস্তুনিষ্ঠ অনুধাবনের জন্য সে কাজটিই সবচেয়ে জরুরি। এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো বঙ্গবন্ধুর নিজের বক্তৃতা, বিবৃতি ও লেখালেখিগুলো নিবিষ্টতার সাথে অধ্যয়ন করা। শুধু ৭ মার্চের বক্তৃতাই নয়, বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বক্তৃতাগুলোও ব্যাপকভাবে প্রচার ও অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে যথার্থভাবে চিনতে ও জানতে হলে এর প্রয়োজন অপরিসীম। কিন্তু সে কাজের দিকে মনোযোগ অমার্জনীয়ভাবে কম।

গণআন্দোলনের সংগঠক ও নেতা হিসেবে এবং মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান মহামূল্যবান। কিন্তু তিনি শুধু গণসংগ্রামের নায়কই ছিলেন না। তিনি রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনার কাণ্ডারি। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনৈতিক দর্শনও কম মূল্যবান নয়। তবে তা নিয়ে তথ্যভিত্তিক কথাবার্তা কমই হয়। অথচ বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার বিবর্তনের ধারা অনুধাবনের জন্য সেদিকে নজর দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু যেসব বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেগুলো এই উপলব্ধির ক্ষেত্রে মূল্যবান ভাণ্ডার রূপে বিরাজ করছে। একটি বিশেষ বিষয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তার নিদর্শন হিসেবে এখানে তাঁর কয়েকটি বক্তৃতার কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি—

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমার সরকার অভ্যন্তরীণ সমাজ বিপ্লবে বিশ্বাসী। পুরাতন সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। অবাস্তব তাত্ত্বিকতা নয়, আমার সরকার ও পার্টি বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের বাস্তব প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে পুরাতন সামাজিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়ে নতুন সমাজ গড়তে হবে। শোষণ ও অবিচারমুক্ত নতুন সমাজ আমরা গড়ে তুলবো। এবং জাতির এই মহাক্রান্তিলগ্নে সম্পদের সামাজিকীকরণের পর্যায়ক্রমিক কর্মসূচির শুভ সূচনা হিসেবে আমার সরকার উল্লিখিত বিষয়গুলো জাতীয়করণ করেছে। ১. ব্যাংকসমূহ (বিদেশি ব্যাংকের শাখাগুলো বাদে), ২. সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানিসহ (বিদেশি বীমা কোম্পানির শাখাসমূহ বাদে), ৩. সকল পাটকল, ৪. সকল বস্ত্র ও সূতাকল, ৫. সকল চিনিকল, ৬. অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌ-যানের বৃহদাংশ, ৭. ১৫ লাখ টাকা ও তদূর্ধ্ব মূল্যের সকল পরিত্যক্ত ও অনুপস্থিত মালিকানাভুক্ত সম্পত্তি, ৮. বাংলাদেশ বিমান ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে সরকারি সংস্থা হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে এবং ৯. সমগ্র বহির্বাণিজ্য রাষ্ট্রীয়করণের লক্ষ্য নিয়ে সাময়িকভাবে বহির্বাণিজ্যের বৃহদাংশকে এই মুহূর্তে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।”

১৯৭২ সালের মে দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অতীতে কতিপয় সুবিধাভোগী দেশের সমুদয় সম্পদের সিংহভাগ ভোগ করতো। বর্তমান ব্যবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে কৃষক, শ্রমিক, দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকেরা উপকৃত হবেন। এজন্যই সরকারের উপর অত্যন্ত গুরুভার সত্ত্বেও আমরা চলতি বছরের ছাব্বিশে মার্চ আমাদের অর্থনীতির কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন: ব্যাংক-বীমা, সমগ্র পাট, বস্ত্র ও চিনি শিল্প, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ শিল্প-কারখানার একটা বিরাট অংশ জাতীয়করণ করেছি। পুরাতন পুঁজিবাদী পদ্ধতির স্থলে সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতি কায়েমের পথে এটা একটা সুস্পষ্ট দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পুরোপুরিভাবে গড়ে তোলার কাজ আমাদের সামনে পড়ে রয়েছে। ...সমাজতন্ত্রের শত্রুরা এই লক্ষ্য অর্জনে বাধা এবং জাতীয়করণ কর্মসূচির সাফল্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়। শ্রমিকরা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে সমাজতন্ত্রের শত্রুদের ধ্বংস করতে পারেন। কিন্তু একা করতে হলে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিকরা যে ভূমিকা পালন করেছেন, সে দৃষ্টিভঙ্গির ও আচরণের আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। তাঁদের অবশ্যই উত্পাদন বৃদ্ধি করতে হবে এবং সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।”

১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহী শহরের এক জনসভায় দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, “সমাজতন্ত্র ছাড়া বাংলার মানুষ বাঁচতে পারবে না। সেইজন্যে সমাজতন্ত্র কায়েম করার প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বড় বড় ব্যাংক ছিল। ভুঁড়িওয়ালাদের ব্যাংক। আল্লাহ্র মর্জি ঐ ব্যাংক এখন সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ব্যাংক। বীমা কোম্পানি আর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়— সাড়ে ৭ কোটি মানুষের কোম্পানি। সেই আইন আমি পাস করে দিয়েছি। বড় বড় কাপড়ের কল। বড় বড় চটকল। আমি জাতীয়করণ করে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সম্পত্তি করে দিয়েছি। আপনাদের এর সুফল ভোগ করতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু এ সম্পত্তি এখন আর ২/৫ জনের নয়। এই সম্পত্তি আমার বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি লোকের সম্পত্তি। কোনো লোক ১শ’ বিঘার ওপর জমি রাখতে পারবে না। এতে যে জমি উদ্বৃত্ত হবে, তা ভূমিহীন গরিবের মধ্যে বিলি করে দেয়া হবে। খাসমহলের জমি গরিবকে ছাড়া কাকেও দেয়া হবে না।”

১৯৭৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ২য় কংগ্রেসের উন্মুক্ত উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রদত্ত তাঁর বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেন: “আমরা শাসনতন্ত্র দিয়েছি। এর মধ্যে কোনো ঘোরানো ফেরানো কথার সুযোগ নেই। শাসনতন্ত্রে আমরা চারটি নীতিকে মেনে নিয়েছি— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ...আমি যা মনে করি, আলজিয়ার্স কনফারেন্সে যেটা আমি বলেছিলাম, দুনিয়া আজ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। একটি শোষক, আরেকটি শোষিত। শোষিতের পক্ষে যারা থাকে, আর শোষকের পক্ষে যারা থাকে- তারা কে, তারা কারা, সে কথা দুনিয়ার মানুষ জানে। ...সমাজতন্ত্র আমাদের প্রয়োজন। সমাজতন্ত্র না হলে এ দেশের দুঃখী মানুষের বাঁচবার উপায় নাই। আমরা শোষণহীন সমাজতন্ত্র চাই। ...সমাজতন্ত্রের রাস্তা সোজা নয়। সমাজতন্ত্র করতে হলে যে ক্যাডারের দরকার, তা আমরা করতে পেরেছি কিনা এ নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। ...সমাজতন্ত্রের রাস্তায় আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তা থেকে আমরা পিছু হটতে পারি না, পারবো না- যত বড় ষড়যন্ত্রই চলুক না কেন।”

১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে নবগঠিত বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে দেয়া তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেন, “তবে, এখানে যে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি, সে অর্থনীতি আমাদের, সে ব্যবস্থা আমাদের। কোনো জায়গা থেকে হায়ার করে এনে, ইমপোর্ট করে এনে কোনো ‘ইজম’ চলে না। এ দেশে— কোন দেশে চলে না। আমার মাটির সাথে, আমার মানুষের সাথে, আমার কালচারের সাথে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে, আমার ইতিহাসের সাথে যুক্ত করেই আমার ইকনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। কারণ আমার দেশে অনেক সুবিধা আছে। কারণ, আমার মাটি কী, আমার পানি কতো, আমার এখানে মানুষের কালচার কী, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড কী, তা না জানলে হয় না। ফান্ডামেন্টালি আমরা একটা শোষণহীন সমাজ গড়তে চাই, আমরা একটা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি করতে চাই। বাট দি সিস্টেম ইজ আওয়ার্স। উই ডু নট লাইক টু ইমপোর্ট ইট ফ্রম এনিহোয়ার ইন দি ওয়ার্ল্ড।”

১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ, তার মৃত্যুর ৫ মাসেরও কম সময় আগে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার প্রদত্ত শেষ পাবলিক ভাষণে গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পুনর্গঠনের ভাবনা ও পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন: “কিন্তু একটা কথা এই, যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেবো না। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাবো। তা নয়। পাঁচ বত্সরের প্ল্যানে বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামে একটি করে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভ। এর জমি মালিকের জমি থাকবে। কিন্তু তার ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ- যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকে এই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এগুলো বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফার্টিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিলে যাঁরা টাউট আছেন, তাঁদেরকে বিদায় দেয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এইজন্যই ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে। আমি ঘোষণা করছি আজকে যে, পাঁচ বত্সরের প্ল্যানে প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচশত থেকে এক হাজার ফ্যামিলি পর্যন্ত নিয়ে কম্পালসারি কো-অপারেটিভ হবে। আপনার জমির ফসল আপনি নেবেন, অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, অংশ যাবে গভর্নমেন্টের হাতে।”

সমাজতন্ত্র, জাতীয়করণ, গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রাম জীবনের প্রগতিশীল পুনর্গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা বিভিন্ন সময়ে তার প্রদত্ত ভাষণের এসব উদ্ধৃতাংশসমূহে প্রকাশিত। বঙ্গবন্ধুর এসব রাষ্ট্রচিন্তার লেশমাত্রও কি বর্তমান রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের মুখে ও কাজে, কিম্বা তাঁর দলের নেতাকর্মীদের ভাষণে-বক্তব্যে খুঁজে পাওয়া যায়? বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা থেকে তারা আজ কতো দূরে না সরে গেছে! অন্তরে বঙ্গবন্ধুর নীতি-দর্শন-রাষ্ট্রভাবনা ধারণ না করে, তাঁর নামটি মুখে মুখে যতোই জপ করা হোক, তাকে ভাঁওতাবাজি ব্যতীত অন্য কিছু বলে আখ্যায়িত করা যায় কি? এ যেন স্রেফ ‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলে থাকি’-এর তামাশা!

n লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

SUMMARY

1805-1.png